নারীর স্বাস্থ্য

হার্ট এ্যাটাকে আক্রান্ত নারীদের যত রোগ লক্ষণ

বিশ্বের সব দেশগুলোতেই বর্তমানে হার্ট এ্যাটাকে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে। এমনকি খুব কম বয়সেই হার্টের বিভিন্ন অসুখ ধরা পড়ছে। বাংলাদেশের এর ফলে মৃত্যুর পরিমাণ কোনোভাবেই কম নয়। একটুখানি কম হলেও নারীরাও এই হার্ট এ্যাটাকের ফলে মৃত্যুবরণ করছেন।

ডাক্তারদের কাছে হার্ট এ্যাটাকটি মাইওকার্ডিয়াল ইনফ্র্যাকশন বা এম.আই নামে পরিচিত। আগে মনে করা হত যে এটি শুধুমাত্র পুরুষদের ক্ষেত্রেই ঘটে কেননা পুরুষদের উপরে বিভিন্ন ধরনের মানসিক ও শারীরিক চাপ যায় বলে। কিন্তু এই ভুল ধারণা আস্তে আস্তে কমে এসেছে।

পুরুষদের মত নারীরাও বিপজ্জনক এই হার্ট এ্যাটাকে আক্রান্ত হতে পারেন। যদিও হার্ট এ্যাটাকের লক্ষণগুলো পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় না তারপরও নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যে এটি চিহ্নিত করা সম্ভব।

১. কন্ঠনালীতে প্রদাহ :

হার্ট এ্যাটাকে আক্রান্ত হলে একজন নারী বা পুরুষের প্রচন্ড পরিমাণে কন্ঠনালীতে ব্যথা করে। এছাড়া বুকের মাঝামাঝিতে ব্যথা, অসম্ভব চাপ অনুভব, দম বন্ধ হয়ে আসা এবং অসহনীয় জ্বালাপোড়া করে। এই ধরনের ব্যথা বেশ কিছুক্ষণ স্থায়ী হয়।

২. শরীরের উপরের অংশে ব্যথা :

হার্ট এ্যাটাক হলে শরীরের উপরের অংশে বিশেষ করে হাত, বাম কাঁধ, ঘাড়ের পেছনে এবং পাকস্থলীতে প্রচন্ড ব্যথা করে। এরুপ ব্যথা অনুভূত হলে ভাববেন হার্ট এ্যাটাক হয়েছে।

৩. শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া :

হার্ট এ্যাটাকে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। ছোট ছোট শ্বাস নেয়। এটিও হার্ট এ্যাটাকের একটি বড় লক্ষণ।

৪. ঘাম নিঃসরণ :

হার্ট এ্যাটাকের ফলে নি:শ্বাসে সমস্যা হয়। এজন্য প্রচুর পরিমাণে ঘাম নিঃসরণ হয়।

৫. বদহজম :

হার্ট এ্যাটাকের আরেকটি লক্ষণ হল বদহজম। অর্থাৎ হার্ট এ্যাটাক হলে বা তার আগে লক্ষ্য করে দেখবেন রোগীর বদহজম হয়েছে।

৬. বমি বমি ভাব :

হার্ট এ্যাটাক হলে বমি বমি ভাব পাবে এবং সারা শরীর বিষন্ন বা বিমর্ষ হয়ে যায়।

৭. জ্ঞান থাকে না :

হার্ট এ্যাটাকে আক্রান্ত হলে একজন নারী বা পুরুষ হতবুদ্ধি হয়ে যান। অর্থাৎ তার জ্ঞান বা সেন্স থাকে না। মাথা ঝিমঝিম করে এবং সারা শরীরে অতিরিক্ত দুর্বলতা চলে আসে।

৮. হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয় :

হার্ট এ্যাটাক হলে দেখা যায় যে হৃৎস্পন্দন অনেক তাড়াতাড়ি হয় বা অনিয়মিতভাবে হয়। একসময় এটি কাজ করা বন্ধ করে দেয়।

এই ধরনের লক্ষণগুলো ছাড়াও নারীদের ক্ষেত্রে যে বৈশিষ্ট্যগুলো বেশি দেখা যায় সেগুলো হল :

  • কাঁধের সাথে পিছনে উপরের অংশে ব্যথা।
  • চোয়ালে ব্যথা।
  • প্রেসার বেড়ে যাওয়া।
  • সামান্য ঘেমে যাওয়া।
  • দুর্বলতা।
  • মারাত্মক ক্লান্তি।

এই ধরনের লক্ষণগুলো নারীদের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। তবে শুধুমাত্র এই লক্ষণগুলো দেখলেই যে বুঝবেন হার্ট এ্যাটাক হয়েছে তা নয়। বুকের ব্যথা না হয়েও হার্ট এ্যাটাক হতে পারে।

সবসময় যে হার্ট এ্যাটাকে বুকের ব্যথা, দুর্বলতা, প্রেসার থাকবেই এমন কোনো কথা নেই। এগুলো ছাড়াও একজন নারী হার্ট এ্যাটাকে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই যেকোনো লক্ষনেই সাথে সাথে ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হলে কিছুটা বিপদ কমতে পারে।

কী করবেন?

এছাড়া দেখা যায় হার্ট এ্যাটাক হবার ফলে অধিকাংশ সময় মানুষ মারা যান, কারণ তারা একা থাকেন। অন্য কারো সাহায্য ছাড়া তাদের বুকের ওপর পাম্প করে হৃদযন্ত্রে রক্ত সঞ্চালন সম্ভব হয় না, এবং ব্যথা শুরু হবার পরে অজ্ঞান হয়ে যাবার আগ পর্যন্ত সাধারণত তাদের হাতে ১০ সেকেন্ড সময় থাকে। এর ফলে অাক্রান্ত ব্যক্তি যা করলে কিছুটা স্বস্তি পাবেন তা হল :

আপনি হার্ট এ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন এমনটা বুঝতে পারলে সাথে সাথে লম্বা করে শ্বাস নিবেন। এরপরে একটু হালকা কেশে নিবেন। লম্বা সময় নিয়ে দীর্ঘ কাশি দিবেন। এর ফলে আপনার ফুসফুসে স্পাটাম বা মিউকাস উৎপন্ন হবে। লম্বা করে শ্বাস নেবার ফলে আপনি পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাবেন।

আর কাশির ফলে আপনার হৃদযন্ত্র সংকোচন-প্রসারণ হবে যার ফলে আপনার হৃদপি-ের ভিতর দিয়ে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। এই প্রক্রিয়াটি প্রতি দুই সেকেন্ডে একবার করে করতে থাকবেন। এটি ততক্ষণ পর্যন্ত করতে থাকবেন যতক্ষণ না কেউ আপনার সাহায্যে এগিয়ে না আসবে

Related Articles

Back to top button