জেনে রাখুননারীর স্বাস্থ্যপিরিয়ডমানসিক স্বাস্থ্য

অনিয়মিত মাসিক প্রভাবিত করে শারীরিক বৃদ্ধিকে

গ্রোথ হরমোন কি?
গ্রোথ হরমোন তৈরি হয় মানুষের মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের সোমাট্রোপ কোষ থেকে। গ্রোথ হরমোন শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধি, কোষ বিভাজন এবং নতুন কোষ তৈরিতে উদ্দীপনা জোগায়।

গ্রোথ হরমোনের অভাব হলে যেসব শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় তা হলো উচ্চতায় খাটো, বয়সের তুলনায় ধীরগতিতে উচ্চতা বৃদ্ধি, কোমরের আশপাশে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি, সমবয়সীদের তুলনায় ছোট দেখানো, দাঁতের পরিপূর্ণতা প্রাপ্তি বিলম্বিত হওয়া, বিলম্বিত বয়ঃসন্ধিকাল, কাজকর্মে, ব্যায়াম করার সময় শক্তি না পাওয়া, মাংসপেশির বৃদ্ধি না হওয়া, হীনম্মন্যতায় ভোগা, পাতলা এবং শুষ্ক চামড়া।

গ্রোথ হরমোনের উপর মাসিকের প্রভাবঃ
মেয়েদের মাসিক হওয়ার পর শরীরে নানান ধরনের পরিবর্তন আসে। একটি মেয়ের শরীরে ফিমেল হরমোন বা এস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরনের ক্ষরণ শুরু হয় ওভারি থেকে। এই ওভারিকে আবার নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের এন্টেরিয়র পিটুইটারি নামক জরুরি একটি গ্ল্যান্ড।

এই এন্টেরিয়র পিটুইটারি গ্ল্যান্ড থেকে আসে এফএসএইচ ও এলএইচ অর্থাৎ ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন ও লুটিনাইজিং হরমোন। এদের কাজ হলো ওভারির ওপর ক্রিয়া করে ছোট ছোট ওভামকে এবং প্রিমেচিউর গ্ল্যান্ডগুলোকে ম্যাচিউর করে তোলা।

এ ছাড়া এন্টেরিয়র পিটুইটারি গ্ল্যান্ড থেকে নিয়ন্ত্রিত হয় থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন, যা থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের ওপর কাজ করে এবং গ্রোথ হরমোন, যার প্রভাবে একটি ছেলে বা মেয়ের দৈহিক বৃদ্ধি লাভ হয়। বয়ঃসন্ধির পর কোনো মেয়ের শরীরে এ প্রক্রিয়াটি শুরু হলেই শুধু তার মাসিক ঋতুচক্র শুরু হয়।

মাসিক শুরু হতে যদি দেরি হয় অথবা মাসিক একবার হয়ে এরপর ৬ মাসের বেশি সময় ধরে না হয় তাহলে গ্রোথ হরমোনের উপর এর প্রভাব পরে।

যার ফলাফল হলো স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত হওয়া। মাসিক প্রক্রিয়ার এই অনিয়মকে চিকিত্সা বিজ্ঞানের ভাষায় অ্যামেনোরিয়া বলা হয়। এই ক্ষেত্রে শারীরিক উচ্চতা বৃদ্ধি না পাওয়া, শারীরিক গঠন না হওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।

অ্যামেনোরিয়া হওয়ার কারণ সমূহঃ

  • অতিরিক্ত ওজন অথবা ওজন স্বল্পতা
  • জন্ম থেকেই যোনিতে কোন ত্রুটি
  • থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা
  • পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম
  • খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম
  • খুব বেশী কাজ বা ব্যায়াম করলে
  • পেটে কোন অপারেশন যেমন: জরায়ু ফেলে দেয়া
  • মানসিক চাপ অথবা বিষন্নতা
  • বিশেষ ওষুধ যেমন, কেমোথেরাপি এবং কিছু অ্যান্টি ডিপ্রেরেসেন্টস এর কারণে মাসিক বন্ধ থাকতে পারে।

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
সাধারণত প্রতি ২৮ দিন পর পর মাসিক হয়। এই সময়টা এক দুই দিন হের-ফের হতে পারে। কিন্তু যদি লাগাতার ৬ মাসের বেশি সময় ধরে মাসিক না হয় অথবা বয়স ১৬ হওয়ার পরেও মাসিক শুরুই না হয়ে থাকে তাহলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।

কারন বিষয়টিকে অবহেলা করলে শরীরের গ্রোথ হরমোন উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটবে এবং শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হবে। সময়মতো ডাক্তারের কাছে গেলে এধরণের সমস্যার চিকিত্সা করে সুস্থ্য হওয়া সম্ভব।

যা করা উচিতঃ
আপনার মেয়েকে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খেতে দিন। বেশি করে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার দিন তাকে। প্রতিদিন হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে তাকে স্বাভাবিক ওজনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন। এধরণের সমস্যায় পরলে মেয়েরা সাধাণরত বিষন্নতায় ভোগে।

এই সময়ে পরিবারের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয় মাকে। আদর-ভালোবাসাপূর্ণ পরিবেশে রেখে তাকে সাহস দিতে হবে।

আমাদের দেশে এইসব সমস্যা হলে আমরা অনেকেই ডাক্তারের কাছে যেতে লজ্জা পাই। এধরণের সমস্যাকে অবহেলা করলে ফলাফল হিসেবে উচ্চতা সমস্যায় ভুগতে হয়। সময় থাকতে চিকিত্সা নিলে এই রোগ নিরাময় করা সম্ভব। নাহলে উচ্চতার কারণে সমাযে বিভিন্ন সময়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।

Related Articles

Back to top button