স্ট্রেস থেকে স্বাস্থ্যের ক্ষতি
পড়াশোনার চাপ, কাজের চাপ, পরিবার বা পারিপার্শ্বিকতার চাপ- এ সবই আমাদের মধ্যে তৈরি করে স্ট্রেস। এটা শুধু মানসিক চাপ সৃষ্টি করে না, বরং আমাদের শরীরের ওপরেও রয়েছে এর অনেক রকমের বিরূপ প্রভাব।
অল্প কিছু স্ট্রেস আমাদের জন্য ভালো হলেও এই স্ট্রেস যখন দীর্ঘস্থায়ী এবং নিয়মিত একটা ব্যাপারে পরিণত হয় তখনই আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। খুব বেশি স্ট্রেসে থাকা অবস্থায় যখন আমাদের অকারণেই বিভন্ন অসুস্থতা
দেখা যায় তখন ভাগ্যকে দোষারোপ করি আমরা। কিন্তু এসব অসুস্থতার পেছনে দায়ী একজনই, আর সে হল দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস। দেখুন এই স্ট্রেস আমাদের কি কি ক্ষতি করছে।
১) থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ কমায়:
প্রচণ্ড স্ট্রেসে থাকলে আপনার শরীরে কর্টিসল নামের একটা হরমোন বেড়ে যায়। এই কর্টিসল বাড়লে থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ কমে যায়। ফলে থাইরয়েড হরমোনের অভাবে শরীরে স্ট্রেস তৈরি হয় এবং স্ট্রেসের দুষ্টচক্র চলতেই থাকে।
ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলাইনার গবেষকরা দেখেন, ভারী ব্যায়ামের ফলেও শরীরে কর্টিসলের পরিমাণ বাড়ে এবং থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ কমে। এর অর্থ হল, যে কোনও কাজ অতিরিক্ত পরিমাণে করতে গেলে তা থেকে শরীর স্ট্রেসে পড়বে এবং ক্ষতি হবে, সেটা ভারী ব্যায়ামই হোক আর অতিরিক্ত কাজের চাপই হোক।
২) PMS বাড়ায়:
PMS হল নারীদের মাসিক হবার সময়ে কিছু মানসিক এবং শারীরিক পরিবর্তন। PMS এর লক্ষণের মাঝে রয়েছে বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তা, অকারণে বিরক্ত হবার প্রবণতা, পেট ব্যাথা, শরীরে পানি আসা ইত্যাদি।এই অস্বস্তিকর উপসর্গগুলো বাড়ায় স্ট্রেস।
স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল এবং মাসিকের হরমোন প্রোজেস্টেরোন শরীরের ভেতরে প্রতিযোগিতা করতে থাকে। কর্টিসলের প্রভাবে প্রোজেস্টেরোন নিজের কাজ ঠিকমত করতে পারে না। ফলে এ সময়ে PMS বেশি হয়। এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুরো মাস জুড়েই স্ট্রেসের পরিমাণ কম রাখতে চেষ্টা করুন।
৩) বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে:
মধ্যবয়সী মানুষের কাজের চাপ থেকে স্ট্রেসের উৎপত্তি হয় বেশি, আর এই স্ট্রেসের ফলে তারা খুব সহজেই বুড়িয়ে যান। ফিনল্যান্ডের একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, এ সময়ে স্ট্রেসের পরিমাণ যত বেশি হয়, পরবর্তীতে তাদের চলৎশক্তি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি দেখা যায়।
কর্টিসলের পরিমাণ বেশি হলে নিজেকে মনে হয় অনেক বেশি মোটা, দুর্বল এবং বুড়ো। কম বয়সেই স্ট্রেসের মাত্রা কমিয়ে রাখার উপদেশ দেন ডাক্তাররা, তাহলে পরবর্তীতে কাজের চাপ থেকে স্ট্রেসের উৎপত্তি কম হয়। এর বেশ ভালো একটি প্রতিকার হতে পারে ধ্যান বা মেডিটেশন।
৪) বাড়ায় পেটের চর্বি:
৩৫ বছরব্যাপী এক সুইডিশ গবেষণায় সাড়ে সাত হাজার মানুষের ওপরে স্ট্রেসের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা হয়। দেখা যায়, এসব মানুষের মধ্যে যারা দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেসে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি থাকে।
কর্টিসলের প্রভাবে শরীরে ইনসুলিনের প্রতিক্রিয়া কমে যায় ফলে ইনসুলিন বাড়ে। এতে শরীরে চর্বি জমার পরিমাণ বেড়ে যায়। Dabates Care জার্নালে এক দল মহিলার ওপরে ১৫ বছর ধরে করা এক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। দেখা যায়, যেসব মহিলা বেশি বেশি রাগ, উত্তেজনা বা স্ট্রেসে থাকেন তাদের মধ্যেও এই সমস্যা দেখা যায়।
৫) মস্তিষ্ক সংকুচিত করে ফেলে
স্ট্রেস অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয় এমন ঘটনার ফলে মস্তিষ্কের আকৃতি ছোট হয়ে যেতে পারে। মস্তিষ্কের অনুভূতির সাথে সম্পৃক্ত অংশগুলোকে ছোট করে আনে স্ট্রেস। ফলে পরবর্তীতে বেশ মারাত্মক মানসিক সমস্যার সম্ভাবনা থাকে।
৬) সন্তানের ওপরে প্রভাব ফেলে:
শুধু আমাদের ওপরেই নয়, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের ওপরেও স্ট্রেসের প্রভাব পড়তে পারে। আমাদের জিনের মাঝে এই স্ট্রেসের চিহ্ন থেকে যায়। ফলে তাদের জীবনেও দেখা দিতে পারে বিভিন্ন অস্বাভাবিকতা।
৭) রোগের প্রকোপ বাড়ায়:
ক্ষণস্থায়ী এবং দীর্ঘস্থায়ী উভয় ধরণের রোগের প্রকোপ বাড়ায় স্ট্রেস। এটা একদিক দিয়ে যেমন ঠাণ্ডাজ্বরের কষ্ট বাড়িয়ে দেয়, তেমনি আরেক দিক দিয়ে বাড়ায় আরথ্রাইটিস বা হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি। স্ট্রেস থেকে বাড়তে পারে স্ট্রোক, হৃদরোগ এমনকি ক্যান্সারের রোগীর সেরে ওঠার সম্ভাবনা কমে যায় স্ট্রেসের ফলে।