নারীর স্বাস্থ্য

স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য

বয়সের সাথে স্তন ক্যান্সারের একটা বিশেষ সম্পর্ক আছে। বয়স যত বাড়ে মহিলাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ততই বাড়তে থাকে, বিশেষ করে ৪০ বছরের পর এ ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়। বাস্তব ক্ষেত্রে দুই-তৃতীয়াংশ স্তন ক্যান্সারের রোগীর বয়সই ৫০ বছরের ওপরে দেখা যায়। ১০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে বংশগতি একটি বড় কারণ। যদি কোনো মহিলার মা অথবা বোনের এ রোগ থাকে, তবে তাদের ক্ষেত্রে অথবা যার একটি স্তন ক্যান্সার আছে তার ক্ষেত্রেও অন্যটিতে ক্যান্সার দেখা দেখার ঝুঁকি বেশি থাকে। ত্রুটিপূর্ণ জিন দিয়ে প্রভাবিত হয় বলেই এমনটি ঘটতে দেখা যায়।

স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য

গবেষকেরা বিআরসিএ-১ নামক জিনকে এরূপ একটি জিন হিসেবে শনাক্ত করেছেন। যদিও সব মানুষের মধ্যেই এ জিন থাকে কিন্তু ৪০০ জন মহিলার মধ্যে অন্তত একজনের ক্ষেত্রে এটি ত্রুটিপূর্ণ হতে দেখা যায় এবং বংশগতির কারণে ঘটিত ক্যান্সারের ৫০ শতাংশের জন্য এই জিন দায়ী। যেসব মহিলার জিনে এ ত্রুটি থাকে, তাদের মধ্যে ৮৫ শতাংশের ক্ষেত্রে বয়স ৫০ হওয়ার আগেই স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরূপ বিআরসিএ-২ নামক আরেকটি জিন ৫ শতাংশ মহিলার স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

খাদ্যাভাস স্তন ক্যান্সারের আরেকটি কারণ

খাদ্যাভাস স্তন ক্যান্সারের আরেকটি কারণ। স্থূল মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। উচ্চ চর্বিযুক্ত খাদ্য এবং নিয়মিত মদজাতীয় পানীয় পান করা ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলে। যেসব মহিলা ধূমপান করেন তাদেরও স্তন ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা অন্যদের চেয়ে বেশি।

হরমোনের তারতম্য স্তন ক্যান্সারের আরেকটি বড় কারণ

হরমোনের তারতম্য স্তন ক্যান্সারের আরেকটি বড় কারণ। যাদের অল্প বয়সে রজঃস্রাব আরম্ভ হয় অথবা দেরিতে রজঃনিবৃত্তি হয় (৫০ বছরের পর), যাদের প্রথম সন্তান বেশি বয়সে হয় অথবা যাদের সন্তান হয়নি এমন মহিলাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যায়। এসব কারণের জন্য ইস্ট্রোজেন নামক স্ত্রীসুলভ হরমোনকে দায়ী করা হয়। রজঃনিবৃত্তির পর যেসব মহিলা হরমোনজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করেন, তাদেরও আক্রান্ত হওয়ার উচ্চহার লক্ষ করা যায়। যদিও বেশির ভাগ চিকিৎসক এটি বিশ্বাস করেন না যে, এ চিকিৎসাপদ্ধতির কারণে ক্যান্সার হতে পারে। তবে তারা মনে করেন যাদের মধ্যে ইতোমধ্যে ক্যান্সার কোষের অস্তিত্ব আছে এই হরমোন শুধু সেসব কোষেরই বৃদ্ধি ঘটাতে পারে।

তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাত্রা বেশি হলে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়

তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাত্রা বেশি হলে বিশেষ করে যাদের ক্ষেত্রে যক্ষ্মা বা অন্য কোনো ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য রেডিয়েশন থেরাপি ব্যবহার করা হয়, তাদেরও স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কিছু রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহারও স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী হতে পারে। গর্ভপাত স্তন ক্যান্সারের আরেকটি কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। গর্ভাবস্থায় স্তনে ইস্ট্রোজেনের আধিক্য দেখা যায়, যা স্বাভাবিক গর্ভাবস্থা শেষে প্রসবের পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক মাত্রায় ফিরে আসে; কিন্তু গর্ভপাত এ মাত্রা স্বাভাবিকপর্যায়ে পৌঁছতে বাধা সৃষ্টি করে এবং অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন স্তনে জমা হয়ে পরে তা ক্যান্সার কোষে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

Related Articles

Back to top button