গর্ভবতীর যত্ননারীর স্বাস্থ্য

গর্ভাবস্থায় নারীর খাবার

একজন সন্তানসম্ভবা মায়ের সঠিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভস্থ শিশুর সঠিক বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং মায়ের যথাযথ পুষ্টির চাহিদা বজায় রাখার জন্য যথাযথ ডায়েট অবশ্যই মেনে চলা উচিত।

গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকে অর্থাৎ প্রথম এক থেকে দুই মাস অনেক মা-ই ঠিক মতো খেতে পারে না। মাথা ঘুরানো, বমি হওয়া, বমি বমি ভাব ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়। কম খাবার গ্রহণ, শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের জন্যই এমনটা হয়। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খাবার বৃদ্ধি করলে এই অবস্থার উন্নতি হয়।

প্রথম তিন মাস গর্ভবতী মায়ের ক্যালরির চাহিদা ২০০-৩৫০ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। যা অবশ্য সন্তান সম্ভবা মায়ের বর্তমান ওজনের ওপর নির্ভরশীল। এ সময়টায় এমন খাবার বেছে নেওয়া উচিত যা খুব পুষ্টিকর এবং অল্প পরিমাণ থেকেও অনেক ক্যালরি পাওয়া যায়।

যেমন : খিচুড়ি (যা চাল-ডাল-সবজি-মাংস- তেল সবকিছু দিয়ে রান্না করা), দই, চিড়া, কলা, রুটি, মাখন, জ্যাম, খেজুর, পুডিং, দুধ, ফল, মুরগি – সবজির স্যুপ, নুডলস (ডিম বা মাংস ও সবজি দিয়ে তৈরি) ইত্যাদি খাবার।

এই ধরনের একটি খাবার থেকে অনেক রকমারি পুষ্টি পাওয়া যায়। বমি বমি ভাব এড়ানোর জন্য শুকনো খাবার খুব উপকারী। যেমন : টোস্ট বিস্কুট, ব্রেড টোস্ট, যেকোনো বিস্কুট, শুকনো হালুয়া, খেজুর, খোরমা ইত্যাদি। এগুলো দেহে শক্তি জোগাতেও সাহায্য করে।

সন্তানসম্ভবা মাকে অনেক পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। কেননা এ সময় পুষ্টির চাহিদা অনেক বৃদ্ধি পায়, যা সঠিক গর্ভধারণে জরুরি। খাবারে যে বিষয়গুলো থাকতে হয় :

ক্যালরি –

আগেই বলা হয়েছে, এর চাহিদা মায়ের ওজনের ওপর অনেকটা নির্ভর করে, এই সময় বাড়তি ক্যালরির চাহিদা প্রোটিন ও শ্বেতসার জাতীয় খাবার থেকে পূরণ করতে হয়।

প্রোটিন –

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। মায়ের পুষ্টি চাহিদা অনুযায়ী এ পরিমাণ ১৫-২০ গ্রাম বৃদ্ধি পায় গর্ভাবস্থায় । তাই প্রোটিনের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে দুধ, দই, ছানা, ডিম, মাছ ও মুরগি থেকে গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

মাছ খুব ভালো প্রোটিন যা থেকে অত্যাবশকীয় ফ্যাটি এসিডও পাওয়া যায়। যা গর্ভস্থ্য শিশুর চোখ, হার্ট ও মস্তিস্কের গঠনে অনেক জরুরি। এই সময় মাকে ঘন ডাল বা পাঁচমিশালী ডাল খেতে বলা হয়। মুরগি দৈনিক খাওয়া যাবে এবং দুধ বা দুধের তৈরি খাবার খেতে হবে। যা শুধু প্রোটিন নয় ক্যালসিয়ামের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভিটামিন –

গর্ভবতী মায়ের প্রয়োজনীয় সব ভিটামিনের চাহিদা মোটামুটি বৃদ্ধি পায়। ফলিক এসিডের সাপ্লিমেন্ট যদিও ডাক্তারের পরামর্শে চলতে থাকে তার পরও ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা পূরণে টক ফল, টকমিষ্টি ফল, রঙিন ফল ও শাক-সবজি অবশ্যই খেতে হবে। তবে শাক রাতে না খাওয়াই ভলো।

উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও নিচের বিষয়গুলো একজন সন্তানসম্ভবা মায়ের মনে রাখা ভালো –

  • গর্ভবতী মাকে অল্প খাবার বাড়ে বাড়ে খেতে হবে।
  • বাইরের কেনা খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে হবে। যা তার সঠিক বিপাকে সাহায্য করবে।
  • বাসি বা পঁচা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • খাবার ধীরে ধীরে চিবিয়ে গিলে খেতে হবে।
  • দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকা যাবে না।
  • খাবার আনন্দের সাথে উপভোগ করে খেতে হবে।
  • গর্ভাবস্থায় সঠিক ওজন বৃদ্ধির দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

Related Articles

Back to top button