জেনে রাখুননারীর স্বাস্থ্য

মহিলাদের মুখে দাঁড়ি ,গোঁফ কেন হয় ? এবং এর চিকিৎসা

পুরুষের যে সব জায়গায় দাঁড়ি গোঁফ জন্মায় সেই সব স্থানে মহিলাদের চুল গজানোকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে হির্সুটিজ্ম বলা হয় -এর মুল কারন পুরুষের যে এড্রোনাল হরমুন থাকে( testosterone ) মহিলাদের বেলায় ডিম্ব নালিতে testosterone হরমুন বেশি হয়ে গেলে মহিলাদের মুখে, বুকে বা অন্যান্য জায়গায় পুরুষের মত চুল জন্মাতে থাকে এবং হরমুনের পরিমানের উপর ব্রিদ্দি করেই চুলের পরিমান নির্ভর করে – যদি ও সকল মহিলার ডিম্বনালিতে ( testosterone ) স্বাভাবিক ভাবে থাকা উচিৎ তার পর ও যা ১০/১ জনের একটু বেশি থাকে , এর জন্য মহিলাদের মুখে স্বাভাবিক কিছু লোম থাকবেই যা নেচারেল । তবে এর পরিমান অর্ধেকের চেয়ে বেশি হয়ে গেলে তখন ই একেবারে পুরুষের মত মহিলাদের মুখে দাঁড়ি দেখা দিতে পারে। সে সময় মহিলাদের estrogen হরমুনএর পরিমান কমতে থাকে ) হির্সুটিজ্ম অধিকাংশ ক্ষেত্রে গুরুতর নয় এবং কোনো অন্তর্নিহিত অবস্থার সৃষ্টি হয় না ।

কিন্তু হঠাত করে যদি কোন মহিলার মুখে দাঁড়ি গোঁফ দেখা যায় তা হলে অবশ্যই তিনির ওভারিয়ান সিস্ট জাতীয় বা ওভারিয়ান টিউমার জাতীয় মারাত্মক কোন রোগের উপসর্গ মনে করতে হবে , যা বয়স্ক মহিলাদের ৪% এমনিতেই হতে পারে – আর যৌবন শুরু থেকে যদি আস্তে আস্তে চুল দাঁড়ি জন্মায় ছেলেদের মত তা হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েলি হরমুন ( estrogen ) ঘাটতি মনে করা হয় ইহা নিশ্চিত – বাড়তি কথা:- অনেক মেয়েরা কিশোরী অবস্তায় নেচারেল হরমোন গ্রউথ এর সময় একটু চুল জন্মালে খুব দুশ্চিন্তা পরে যান- যা মোটেই ঠিক নয় – আসলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা চলে যায় – তবে হা, যদি চুলের ঘনত্ব এবং কাল বর্ণের উজ্জ্বলতা এবং পরিমান ক্রমশ বাড়তে থাকে তখন অবশ্যই আপনার চিকিৎসক কে দেখানু উচিৎ, নেচারেলি ১১/১৩ মেন্সট্রুয়েশন সারকুলের পরে চলে যাওয়ার কথা )

মুখে চুল গজানুর সময় মহিলাদের কি কি লক্ষণ বা উপসর্গ থাকতে পারে:-

হির্সুটিজ্ম প্রধান উপসর্গ – মুখে , পেটে , বুক ইত্যাদি জায়গায় ( পুরুষ – প্যাটার্নের মত ) ক্রমবর্ধমান হারে চুল বাড়তে থাকা – ( টেস্টারন হরমুন জনিত কারনে হলে ) অনিয়মিত মাসিক বা বয়স সময়সীমার ভিতরে মেয়েদের পিরিয়ড টাইম শুরু হতে দেরি হওয়া – অতিরিক্ত ব্রণ বা একনি – মেয়েদের আচার ব্যাবহার পুরুষের মত এবং কন্ঠ স্বর বড় আকৃতির যা শুনতে পুরুষ কন্ঠ মনে হয় ( ডিপিনিং ভয়েস ) – পুরুষের মত মাতার টাকের ভাজ – শারীরিক ঘটন প্রায় পুরুষ আকৃতির বিশেষ করে পেশী বহুল কাঁদ এবং হাতের কুনই সমুহ – যা একটি মেয়ের যৌবনের শুরু থেকে এই সব লক্ষন দেখা দিতে থাকে – Cushing সিন্ড্রোম জনিত কারনে চুল গজাতে থাকলে নিম্ন লিখিত লক্ষন থাকবেই ( যাদের শরিরে অতিরিক্ত পরিমান glucocorticoid থাকে ) :- , স্থূলতা – উচ্চ রক্তচাপ ( উচ্চ রক্তচাপ )– ডায়াবেটিস–ত্বকের পুরত্ত বেড়ে যাওয়া ), চামড়ায় লম্বা ভাজ বা দাগ থাকবে যা সাপের চামড়ার মত ভাজ দেখা যায় -তবে ইহা সবাধারনত ২৩ বছর পর বেশি দেখা যায় –

কি কি কারণে মহিলাদের মুখে চুল গজাতে পারে:-
( Facial hair growth in women are overproduction of testosterone):- মুখে চুল দাঁড়ি গজানুর সাথে ল্যাবরেটরিতে পরিক্ষা করালে টেস্টারন হরমোন উচ্চ মাত্রায় থাকবেই – বন্ধ্যাত্বের কারনে হতে পারে যা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রম ( PCOS ) ( এখানে সুন্দর একটি কথা মনে করিয়ে দেই – যদি কোন মহিলার বিয়ের অনেক দিন পর ও সন্তান না হয় এবং স্বামীর কোন দোষ না থাকে তা হলে অনেক সময় দেখা যায় এই হরমুনের ব্যাঘাত জনিত কারনে ডিম্ব ঠিক মত পরিস্প্রুটিত হয়না । বা অনেকের কয়েক বছর পর সন্তান হয় । তখন কেউ কেউ মনে করেন মাজারে বা সাধু বাবার দোয়ার আশীর্বাদে তিনিদের এই সন্তান টি জন্ম নিয়েছে , বেঁচে থাকলে পরবর্তীতে জানানোর চেস্টা করব ,আসলে এই সব অনেক কিছু আছে আমাদের ভুল বা ভ্রান্ত ধারনা – যদি ও হরমোন সেক্রেশন বাড়া কমা অনেক সময় মানসিক আস্তা বা বিশ্বাসের কারনে কিছুটা রদবদল হয় )
অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি বা অভারি তে টিউমার থাকলে – চুল ব্রিদ্দির জন্য কিছু ঔষধ ব্যাবহারে — যেমন — phenytoin (Dilantin ) , minoxidil ( Rogaine ), diazoxide ( Proglycem ), এবং cyclosporine অ্যানাবলিক স্টেরয়েড বা কেন্সার জনিত কিছু ঔষধ বা endometriosis এর চিকিৎসা জনিত ঔষধ ( ডিসমেনরিয়া বা জরায়ু সংক্রান্ত আসুখ )  জেনেটিক্স – বংশ গত কারনে হতে পারে যা মায়ের জিন থেকে অনুসরনীয় – এবং জাতিগত ভাবে – ইউরোপীয় , মধ্য প্রাচ্যের , এবং দক্ষিণ এশিয়ার মহিলাদের বেশি হয়ে থাকে তার কারন উক্ত অঞ্চলের পূর্ব পুরুষ নারীদের বেলায় বেশি ছিল ।

কি করতে হতে পারে ? যখন আপনার চিকিৎসক আপনার পুরনাঙ্গ ইতিহাস নিবেন – কি ঔষধ সেবন করতেছেন, আপনার মাসিক চক্র, আপনার পরিবারের ইতিহাস সম্পর্কে, জিজ্ঞাসা করবেন ই এবং সেই সাথে চুল ব্রিদ্দির জন্য ovarie টিউমার বা সিস্ট সন্দেহ ও করতে পারেন তাই — রক্তের পরীক্ষায় এন্ড্রোজেনের মাত্রা সিটি স্ক্যান , এমআরআই , আল্ট্রাসাউন্ড – ইত্যাদি করাতে পারেন। যদি আপনার ডাক্তার একটি কারণ খুঁজে না পান তা হলে তিনি চুল সরানোর যে কৌশল বা চেষ্টা করতে পারেন. ( যদি উক্ত সমাজে হির্সুটিজ্ম একটি হতাশাজনক ও লজ্জাজনক মনে করা হয় তা হলে )

চিকিৎসাঃ- ( এফডিএ কৃতক হির্সুটিজ্মের জন্য ঔষধ অনুমোদন এখন ও দেওয়া হয়নি এবং অবশ্যই গর্ভ বতি হলে এ সব অসুখের চিকিৎসা সম্পূর্ণ নিষেধ ) – একজন হরমোন বিশেশজ্ঞ উপদেশ দিতে পারেন যে ওষুধ ব্যাবহারে চুলের বৃদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে ( ঔষধের নাম দেওয়া নিষেধ বিধায় উল্লেখ করতে পারিনি ) যা 6 মাস বা তার বেশি সময় লাগতে পারে ।

প্রাথমিক ভাবে Plucking বা shaving অথবা waxing এর যে কোন একটা করলেই হয়- যদি হরমোনের প্রভাব বেশি না হয় ( অনেকে মনে করেন সেইভ করলে চুল আর ঘন হয় , কথাটি সম্পূর্ণ সত্য নয়- যেখানেএকদম চুল দাঁড়ি নেই, সেখানে অল্প কিছু চুল গজালেই সেটাকে ঘন মনে হওয়া স্বাভাবিক । শেইভ করবার পর যখন নতুন দাঁড়ি উঠে, সেটার মাথা হয় ভোঁতা, যা হাত দিলে অনেক শক্ত মনে হয়। দুটো মিলে ঘন এবং কাল চুলের এক ধরনের ইলিউশন তৈরী হয়। অন্য যখন প্রথম দাঁড়ি উঠে তখন গ্রোথ টা কম থাকে কিন্তু পরবর্তিতে এই রেট টা বাড়ে, কাজেই এমন মনে হতে পারে তবে ইলিউশন এবং অক্ষিডাইজেশন বাড়ার কারণে কাল হয় ইহা সত্য । এই কারনে অনেকে মনে করেন বছরের পর বছর শেইভ এর কারনেই এই গ্রোথ টা বাড়ছে। তা ছাড়া যদি সত্যিই দাঁড়ি কামানোর ফলে দাড়ির ঘনত্ত বাড়ত তা হলে , চুল ব্রিদ্দির জন্য চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে চুল কাটার দোকানে গেলেই চুল ব্রিদ্দি পেত ) – তার পর ও যদি আপনি মানশিক ভাবে নিজকে বুজাতে না পারেন তা হলে অন্যান্য বেবস্তা করতে পারেন – কেন না হরমোন সেক্রেশনের পরিমান অনেক সময় মানশিক আস্থা বা বিশ্বাসের উপর ও নির্ভর করে – )
Eflorinithine ( Vaniqa ) মুখের চুল জন্য এক জাতীয় ক্রিম – যা প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যাবহারে চুল চলে যায় তবে যাদের সেকেন্ডারি পর্যায়ে অসুখ টি চলে গেছে তাদের বেলায় চুল আবার গজাতে পারে।

লেজার থেরাপিঃ- মহিলাদের অবাঞ্ছিত চুল সরাতে পারে. লেজার থেরাপিতে চুলের follicles বন্ধ করে দেয় ফলে চুল ধ্বংস হয়ে যায় । কারও কারও মতে লেজার থেরাপি ঘন চুল এবং হালকা চামড়ার সঙ্গে মহিলাদের উপর ভালো কাজ করে থাকে যদি ও পরবর্তীতে চামড়ার ভাজ পরার সম্বাভনা রয়ে যায় ।

এ ছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে আপনার হাউজ ফিজিশিয়ান যে সকল ঔষধ দিতে পারেন ঃ- জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি – যাতে ইস্ট্রোজেনের পরিমান বাড়ে সে জন্য ( বিশেষ করে সামান্য চুল, দাঁড়ি যাদের -তাদের জন্য নিয়ম মাফিক আপনার চিকিৎসকের পরামর্শে বেশ কিছু দিন ব্যাবহারে সম্পূর্ণ ভাল হয়ে যাওয়ার কথা ) বা Spironolactone (Aldactone) জাতীয় ঔষধ ( এন্ড্রোজেন হরমুন বিরোধি ) — ভাল কার্যকর ( সবাধান এই সব ঔষধ আপান্র জি পি র পরামর্শ ছাড়া ব্যাবহার করবেন না – কারন এর পারশ প্রতিক্রিয়া অনেক মারাত্মক হতে পারে যা আপনার জানা না থাকতে পারে )

হারবালঃ
Palmetto ( Serenoa repens ইহা দেখতে ক্ষুদ্রাকার তাল গাছের মত, যা সমুদ্র পারে বেশি জন্মায় ) যার ব্যাবহারে শরীরে পুরুষ হরমোন মাত্রা কমইয়ে দেয় , যার অর্থ বিরোধী androgenic প্রভাব আছে। পৃথিবীর ভিবিন্ন জায়গায় বেশ কদর দেখতে পেলাম । পলিসিস্টিক অভারাইটিস সিন্ড্রোম চিকিৎসার জন্য বিজ্ঞান অনুসারে বর্তমানে বেশ ব্যাবহার হইতেছে – তবে সাবধান Palmetto রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে বিধায় অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ বা যাদের রক্তের ঘনত্ব কম তাদের জন্য বা গর্ভবতী দের বেলায় অনুমোদিত নয় Chaste Tree ( Vitex Agnus castus ) নির্যাস এন্ড্রোজেন বিরোধি গুন আছে । তবে ইহা মারাত্মক ভাবে ঘুম ঢেকে আনে বিধায় ব্যাবহারে বেশ বাধা নিষেধ আছে । অন্যান্য নতুন কিছু গবেষণা অনুসারে তৃণ হরিত চা ( Mentha spicata ) , 1 কাপ প্রতিদিন দুই বার . একটি প্রাথমিক সমীক্ষায় দেখিয়েছেন – পুদিনা চা drank হির্সুটিজ্ম মহিলাদের রক্তে টেস্টারনের মাত্রা ১৫% কমাতে সক্ষম এবং অন্য এক রিসার্চে দেখিয়েছেন পুদিনা চা ওভারির প্রদাহ জাতীয় অসুখে ( PCOS) বেশ কিছু টা পরিবর্তনে সাহায্য করে ।

লাইফস্টাইলঃ– মাত্রাতিরিক্ত ওজন যাতে না হয় সে দিকে অবশ্যই লক্ষ রাখবেন – কেন না হির্সুটিজ্ম যাদের হতে থাকে তাদের শরীর সবাভাবিকের চাইতে স্বাভাবিক কিছু ব্রিদ্দি পেতে পারে তাই সুষম খাদ্য খাওয়া এবং যথেষ্ট ব্যায়াম ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে – এবং ডিম্ব নালিতে সাহায্য করতে পারে এমন সব খাবার বেশি বেশি করে খাবেন – যেমন ঃ যেমন ব্লুবেরি , চেরি, এবং টমেটো হিসাবে ) ফল ও ( যেমন স্কোয়াশ এবং ঘণ্টা peppers হিসেবে ) সবজি সহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খাবার সমুহ।

Related Articles

Back to top button