খাদ্য ও পুষ্টিজেনে রাখুন

জেনে নিন ফরমালিন আমাদের সাস্থের জন্য কটা ক্ষতি কর। ( ফরমালিনের নিয়ে সব তথ্য)

ফরমালিন হচ্ছে বর্ণহীন গন্ধ যুক্ত ফরমালডিহাইড রাসায়নিক সংকেত ফর্মালিন (-CHO-)n হল ফর্মালডিহাইডের (CH2O) পলিমার) গ্যাস থেকে পানির সাথে মিশ্রিত একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রিজারভেটিভ – ইহা দেখতে সাদা – ১৮৫৯ সালে রুশ রসায়নবিদ আলেকজান্দর বুতলারভ ফরমালিনের অস্তিত্ব তাঁর প্রতিবেদনে তুলে ধরেন। পরবর্তীতে ১৮৬৯ সালে অগাস্ট উইলহেম ভন হফমেনস্বার্থকভাবে চিহ্নিত করেন। ফরমালিনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সংক্রমিত হতে না দেয়া।

অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাককে মেরে ফেলতে পারে। সাধারণত ৩৭ থেকে ৪০ শতাংশ জলীয় দ্রবণই হলো ফরমালিন এবং কখন ও এর সাথে ১০-১২ ভাগ মিথানল ও মিশ্রিত করা হয় অতিরিক্ত প্রিজারভেশন ক্ষমতা বড়ানোর জন্য । ( মিথানল হইতেছে কাঠের উপরের রঙে যে স্প্রিট ব্যাবহার করা হয় তাই । যা মানব দেহের জন্য খুভি ক্ষতিকারক এমন কি নিত্য প্রয়োজনিয় আসবাব পত্র, ল্যাবরেটরি, ইনাডস্ট্রি ইত্যাদিতে নির্দিষ্ট পরিমান ব্যাবহারের অনুমতি থাকলে এর বিশেষ কিছু বিধি নিষেধ আছে । যদিও ফরমালিন ভাল একটি প্রিজারভেটিভ কিন্তু পিজারভেটীভ এর ভিবিন্ন গ্রেড আছে। ফুড গ্রেড নন ফুড গ্রেড। নন ফুড গ্রেড গুলো খাওয়া যায় না আর সেগুলো চরম মাত্রায় বিষাক্ত। ফরমালিন হইল সেই নন ফুড গ্রেডের পিজারভেটিভ তাই খাদ্য দ্রবতে এর ব্যাবহার সম্পূর্ণ নিষেধ । তা ছাড়া বৈজ্ঞানিকভাবে মানুষের জন্য ফরমালিনের লিথাল ডোজ ৩০ মি.মি ( ভিন্ন ব্যাবহারিক বস্থুতে ) এবং বাতাসে ২পিপিএম-( পেইন্ট বা যে কোন ইনাডাস্ট্রি থেকে ) বায়ুতে মিশ্রিত হলে তাও সম্পূর্ণ নিষেধ । ( ( Formalin is commonly used to describe a mixture of 37% to 38% formaldehyde in water. Formaldehyde is a gas. It has the formula HCHO or CH2O. A small amount of stabilizer, such as methanol 10-12%, is usually added to limit oxidation and polymerization )

ফরমালডিহাইড মেথড অনুসারে ভিন্ন নামে থাকতে পারে ( যে কোন প্যাকেটে যদি এই সব যে কোন একটি নাম দেখতে পান তা হলে মনে করবেন ফরমালিন ): Formic aldehyde- ethanediol –Methanal –Methyl aldehyde –Methylene glycol –Methylene oxide অথবা নিম্ন লিখিত কেমিক্যাল আইটেম সমুহ ও ফরমালিনের উৎপাদক বিধায় ইহা ও এক ধরণের ফরমালিন বলা হয় ঃ Benzylhemiformal –2-bromo-2-nitropropane-1,3-diol –5-bromo-5-nitro-1,3-dioxane –Diazolidinyl urea –1,3-dimethylol-5,5-dimethylhydantoin (or DMDM hydantoin) –Imidazolidinyl urea –Sodium hydroxymethylglycinate –Quaternium-15 । তাই এই সব কেমিক্যাল পদার্থ যে কোন খাদ্য দ্রব্যে লিখা থাকলে বা সন্ধ থাকলে তা থেকে দূরে থাকা উচিৎ ।

বৈধভাবে নির্দিষ্ট পরিমান ফরমালিন কি কাজে ব্যবহার করা হয়:

ফরমালিন সাধারণত টেক্সটাইল, প্লাস্টিক, পেপার, রং, কনস্ট্রাকশন, পোলট্রি ও হ্যাচারি শিল্প, ল্যাবরেটরি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কাঠ ও প্লাইউড শিল্প, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেশনায় , অ্যাগ্রো প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি, সায়েন্টিফিক ল্যাব, ওষুধ কোম্পানি, ভ্যারাইটিজ কনজিউমার প্রডাক্ট, ট্রেডিং কোম্পানিসহ ব্যাবহারের প্রয়োজন বা মৃতদেহ সংরক্ষণে খুভ বেশী উপকারী একটি কেমিক্যাল । কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত বাংলাদেশ সহ কয়েক টি দেশে খাদ্যতে ফরমালিন ব্যাবহার করতে দেখা যায় যা কোন অবস্থাতেই স্বাস্থ্য সম্মত নয় ! – সেই সাথে খাদ্য দ্রবের সাথে সম্পর্ক যোক্ত কোন কিছুতেই ফরমালিন ব্যাবহার করে ঠিক নয় । যদিও কিছু কস্মেটিক্স ব্যাবহার সামগ্রী, নুখ পালিশ কিছু ক্রিম, শ্যাম্পু, সাবান ইত্যাদিতে ব্যাবহারের অনুমতি থাকলে ও তা ০.০২% ভিতরে থাকতে হয় ।

প্রাকৃতিক ভাবে কিছুটা ফরমালডিহাড্রেডের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় তামাক জাতীয় সিগারেটে এবং আর ও বেশী ফরমাল্ডিহাইড্রেড উৎপন্ন হয় যারা সিগারেট নিভিয়ে আবার পান করেন । সেই সাথে যারা সিগারেট পান করেন না তাহারা ও আক্রান্ত হন ধূমপায়ীর শ্বাসের মাধ্যমে । ( concentrations in cosmetics and other personal care products like lotions, shampoo, conditioner, shower gel, and some fingernail polishes. These may raise the concentration of formaldehyde in the air inside the room for a short time, but the levels reached are far below what is considered to be hazardous)

প্রথমে জেনে নিন আসবাব পত্র ও নিত্য ব্যাবহারিক জিনিসে বা শিল্প কারখানায় অতিরিক্ত ফরমালডিহাইড ব্যাবহারে কি ক্ষতি হতে পারে – ফরমালডিহাইড অতিরিক্ত ব্যাবহার যে সব আসবাব পত্রে করা হয় তার গ্যাস থেকে বাতাসের মাধ্যমে মানব দেহের শ্বাসের ছড়িয়ে পরে, ফুস ফুস, শ্বাস নালি, মুখ গহ্বরে আক্রান্ত হয়ে ( শ্বাস তন্ত্র ) ভিন্ন ধরণের প্রদাহ যোক্ত অসুখ বা তা থেকে ( বিশেষ করে হাঁপানি ও নিউমোনিয়া বা গলার টনসিল জাতীয়- and cancer of the nasopharynx বা cancer of the nasal sinuses. বা leukemia, ) ক্যানসার সেল ডেবলাপ্ট হওয়ার সম্বাভনা খুভ বেশী, সে জন্য উন্নত দেশে ফরমালডিহাইড অন্তর্ভুক্ত সকল কেমিক্যাল পদার্থ ব্যাবহার সিমিত করার জন্য ইতিমধ্যেই বেশ কড়া কড়ি আইন ও নিয়ম তৈরি করা হয়েছে এবং ফরমালিন জাতীয় কেমিক্যাল সুমহে যাহারা কাজ করেন তাদের জন্য ও বিশেষ নিয়ম ও সতর্কতা অবলম্বনের ব্যাবস্তা করা দরকার ( পেইন্টও প্লাস্টিক , চামড়া ইত্যাদির )

মুনাফালোভিরা সরা সরি ভিন্ন খাদ্যতে কেন ব্যাবহার করতে চায় – ফল মুল, মাছ ইত্যাদি কে বেশী দিন ঠিকিয়ে রাখার জন্য বা পচন রোধ করার জন্য ফরমালিন ব্যাবহার করে থাকে যা সভ্য সমাজে ভাবতেই অবাক লাগে তাই এ বিষয়ে সাধারণ জঙ্গনের সচেতনতা ও কঠোর আইনের প্রয়োজন । পৃথিবীর ১৩ টি দেশে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের জন্য নিয়ম বহির্ভূত ভাবে খাদ্য দ্রব্যে ফরমালিন জাতীয় কেমিক্যাল পদার্থ মিশানো হয়ে থাকে তার মধ্যে বাংলাদেশ সহ চিন, ভারত, থাইল্যান্ড, বার্মা, পাকিস্থানের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য । সম্প্রতি এক তথ্যে দেখা যায় এই সব অঞ্চলে, ( ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্স অন ক্যান্সারের ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার রিপোর্টের দেয়া তথ্যমতে) , ১৯৭৫ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের হার দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে তা আবারও দ্বিগুণ হবে এবং এ হার তিনগুণে পৌঁছবে ২০৩০ সালের মধ্যে। যদি ও সারা বিশ্বে প্রতি বছর ১.৩ শতাংশ হারে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তেছে । তবে দুঃখ জনক হলেও সত্য – বাংলাদেশ ও তার আশে পাশের দেশ সমুহে এর বৃদ্ধির হার ২.৮ শতাংশ এবং মুল কয়েক টি কারনের মধ্যে প্রধান কারন ই হল সকল ধরণের খাদ্যে দ্রব্যে বিষাক্ত কেমিক্যাল পদার্থের সংমিশ্রণ করে বাজারজাত করা ।

অন্য এক তথ্যে দেখা গেছে, ভেজাল খাদ্য খেয়ে দেশে প্রতি বছর তিন লাখের বেশি মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রায় দেড় লাখ মানুষ ডায়াবেটিস ও ২ লাখ কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও গর্ভবতীরা। ভেজালের কারণে গর্ভবতী মায়ের শারীরিক জটিলতাসহ প্রতি বছর গর্ভজাত বিকলাঙ্গ শিশুর সংখ্যা কয়েক লাখ। ( ফরমালিন ও ক্যালসিয়াম কার্বাইড ) আরও বাস্তব প্রমান অনুসারে নিশ্চিত ভাবে বলা হয়েছে , বাংলাদেশে ক্যান্সার প্রতিরোধক ঔষধের বাজার প্রতি বছর শতকরা ২০ ভাগ হারে বেড়েই চলছে যেখানে বিগত নব্বই শতকে মাত্র ৩% ছিল ।

( ইন্টারন্যাশনাল কেমিক্যাল ইম্পোরট ডাটা ভিত্তিক তথ্য ) বাংলাদেশের গত বছরে ফরমালিন আমাদানি কৃত ডাটাতে দেখা গেল দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের চাহিদা ছিল ২০১২/১৩ সালে ৭৫ টন সেই খানে আমাদানি করা হয় ৩০০ টনের মত । চলতি বছর দেশের চাহিদা ছিল ১০০ টনের সেখানে আমাদানি করা হয়েছে ৫০০ টন । গড়ে বাদ বাকি ৪০০ টন ফরমাল্ডিহাইড্রেট গেল কোথায় ? নিশ্চয় যেভাবেই হউক মানুষের পেটে !!! ( আমার ব্যাক্তি গত অভিমত ) সে জন্য দেশে যতই শক্ত আইন করা হয়না কেন কাজ হবেনা , যতক্ষণ গন সচেতনতা সহ ওদের প্রতি ঘৃণা না জন্মানো যাবে এবং সেই সাথে মুল ডিস্ট্রিবিউটার ও আমদানিকারকদের উপর কড়া নজর দারি সহ আইনের সঠিক প্রয়োগ সব সময় প্রয়োজন । তাহলে কিছু টা প্রতিরোধ হতে পারে । কারন সাধারণ ফরমালিন যোক্ত খাদ্য দ্রব্য সরবরাহ কারিরা অপরাধী নয়, তাই ওদের কে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে , সর্বস্ব জরিমানা ইত্যাদি করে তেমন লাভবান হওয়ার কথা নয় , বা এ ধরণের ভয়ে সামিয়িক কিছু টা উপকৃত হলেও ওরা পেটের জ্বালায় আবার এই কাজে লাগবেই । তাই ইহা জনগন কে না দেখিয়ে মুল জায়গায় ঠিক মত নক করলেই মনে হয় সবচেয়ে বেশী সুফলতা বয়ে আনবে ।

ফরমালিন স্বাস্থ্যের কি কি ক্ষতি করতে পারে ? – What are the health effects of Formalin ?

ফরমালিনের ব্যাবহারে কি কি অসুখ বা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রাথমিক ভাবে ফরমালিন যুক্ত ফলমূলসহ অন্যান্য খাবার গ্রহণের ফলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট,  হাঁচি,  কাশি,  শ্বাসকষ্ট,  আ্যাজমা,  বদহজম,  ডায়রিয়া,  আলসার,  চর্মরোগের উপদ্রব দেখা দেয় এবং পর্যায় ক্রমে যা দেখা দিয়ে থাকে। ফরমালডিহাইড চোখের রেটিনাকে আক্রান্ত করে রেটিনার কোষ ধ্বংস করে। ফলে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে– এই রাসায়নিক পদার্থ লিভার, কিডনি, হার্ট, ব্রেন সব কিছুুকে ধ্বংস করে দেয়। লিভার ও কিডনি অকেজো হয়ে যায়। হার্টকে দুর্বল করে দেয়। স্মৃতিশক্তি কমে যায়। ফরমালিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করার ফলে পাকস্থলী, ফুসফুস ও শ্বাসনালিতে ক্যান্সার হতে পারে। অস্থিমজ্জা আক্রান্ত হওয়ার ফলে রক্তশূন্যতাসহ অন্যান্য রক্তের রোগ, এমনকি ব্লাড ক্যান্সারও হতে পারে।

এতে মৃত্যু অনিবার্য। মানবদেহে ফরমালিন ফরমালডিহাইড ফরমিক এসিডে রূপান্তরিত হয়ে রক্তের এসিডিটি বাড়ায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করে। ফরমালিন ও অন্যান্য কেমিক্যাল সামগ্রী সব বয়সী মানুষের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে। ফরমালিনযুক্ত দুধ, মাছ, ফলমূল এবং বিষাক্ত খাবার খেয়ে দিন দিন শিশুদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে যায় বা কিডনি, লিভার ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট, বিকলাঙ্গতা সহ শিশুদের বুদ্ধিমত্তা দিন দিন কমিয়ে দিতে পারে । গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রেও মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা, বাচ্চার জন্মগত দোষত্রুটি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে বা প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হতে পারে। অনেক সময় এ রকম ও দেখা যায়, কয়েক দিন পরপর একই রোগী ডায়রিয়ায় ভুগছেন, পেটের পীড়া ভালো হচ্ছে না, ঘন ঘন চর্মরোগে আক্রান্ত হইতেছেন । অর্থাৎ দীর্ঘ দিন ফরমালিন বা ঐ জাতীয় কেমিক্যাল পদার্থ দীর্ঘদিন যাহারা খেয়ে থাকেন তিনিদের ৮৭% সম্বাভনা আছেই পাকস্থলী, ফুসফুস , শ্বাসনালি, ও অস্থিমজ্জায় ক্যানসারের মত মারাত্মক অসুখ হওয়ার । ( ল্যাব রিসাচ )

সর্বশেষ তথ্য অনুসারে পূর্ণ নিশ্চিত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা:- যাহারা ৫.৬০ পিপিএম হতে ১৫প্পিএম পর্যন্ত ফরমালিন যোক্ত খাবার গ্রহন করবেন একনাগারে ২ বছর তাদের বেলায় ৯০% বেলায় শ্বাস তন্র, পাকস্থলী বা লিভার ক্যানসার হবেই _ ( ক্যানসার রিসার্চ ইন্সটি , ইউকে )

ফরমালিন যোক্ত খাবার চিনবেন কিভাবে ( সংগৃহীত ):

প্রসঙ্গত উল্লেখ করতেই হয় , ফরমালিন যোক্ত খাবার কিভাবে চিনা যাবে সে জন্য হাজার খানেক মেইল পাঠাই আমাদের রিসার্চ লাইব্রেরী ও গবেষকদের কাছে । একমাত্র ভারত, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড চাড়া সবাই জানালেন ফরমালিন আবার খাবারে দেওয়া হয় নাকি ? বা জানেন না বা অনেকে উলটো অনুরুধ করেছেন আমি যেন তিনিদের কে জানাই কি কি খাবারে দেওয়া হইতেছে ইত্যাদি !!! তার পর ও নিজ দেশের সুনাম ধন্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার সম্প্রতি দেওয়া কিছু উপদেশ থেকে কিছু টা জানার চেস্টা করলাম।

বর্তমানে বাংলাদেশে ফরমালিন বা অন্যান্য কৃত্রিম উপাদান ছাড়া খাবার খুভ কম আছে ইহা বলে লাভ নেই ,মনে রাখবেন খাবারে তাপের মাধ্যমে ফরমালিনের ক্ষতিকর প্রভাব নষ্ট হয় না বরং লিকুডেশন বাড়ে ( তরলীকরণ ) তারপর ও যত টুকু পারেন সতর্ক থাকতেই হবে বা অন্য কে সতর্ক রাখা মানবিক দায়িত্ব । এ ছাড়া ও যায় ফরমালিন ছাড়া ক্যালসিয়াম কার্বাইড , কপার সালফেট, কার্বনের ধোঁয়া, পটাশের লিকুইড সলিউশন, জ্বালানো মবিল, ডিডিটি এমন কি আলকাতরা বা ইউরিয়া সার ও ব্যাবহার করে থাকেন সুবিধা ভোগী কিছু ব্যাবসিয়ারা – যা কল্পনা করার মত নয় এমন কি মাল্টি ন্যাশনাল কিছু কোম্পানিরা ও ব্যাবহার করিতেছে , যেমন ফলের রস, স্ন্যাক্সফুড, জ্যাম-জেলি, আচার-চাটনি, সেমাই ও নুডলস ইত্যাদিতে । তাই সুন্দর প্যাকেটের যোগে খাদ্য দেখতে সুন্দর হলেই যে ভাল হবে তাও বলা মুশকিল ।

১০০% নিশ্চিত ভাবে ফরমালিন দেওয়া খাদ্য দ্রব্য চুখে দেখে বলার মত নয়, সে জন্য কিছু ইলেক্ট্রনিক গ্যাস ডিটেক্টর আছে যা দিয়ে পরিক্ষা করলে ৯৫% নিশ্চিত হওয়া যায় বা বাজারে কিছু স্টিকার কিনতে মিলে তা দিয়ে পরিক্ষা করলে বুজা যায় , তাও সাধারণ জনগণের জন্য ব্যয় সাধ্য বিধায় আপাদত নিজের বুদ্ধি খাটিয়েই শাকসবজি, মাছ ইত্যাদি কিনতে হবে । ( যদি ও কিছু দিনের ভিতরে খুভ সস্থা দামে এ সব স্টিকার বাজারে আসার কথা )

সাধারণ ভাবে ফরমালিন সনাক্ত করতে হলে সন্দেহযুক্ত ফরমালিন মাছ ধুয়ে পানিতে ৩% (আয়তন) হাইড্রোজেন পারক্সাইড মেশালে ফরমালডিহাইড অক্সিডাইজড হয়ে ফরমিক অ্যাসিডে রূপান্তর হয়। ফরমিক এসিড প্রমাণের জন্য সে পানিতে অল্প মারকিউরিক ক্লোরাইড মেশালে সাদা রঙের তলানি পড়বে। তাতেই প্রমাণ হবে ফরমিক অ্যাসিড তথা ফরমালডিহাইড তথা ফরমালিন। ( ল্যাব ) অথবা ফরমালডিহাইডের দ্রবণের সঙ্গে ২ সিসি ফিনাইল হাইড্রোজাইন হাইড্রোকোরাইড (১%) এবং ১ সিসি ৫% পটাসিয়াম ফেরিসায়ানাড দিয়ে তারপর ৫ সিসি ঘনীভূত হাইড্রোকোরিক অ্যাসিড মেশালে পুরো দ্রবণ গাঢ় গোলাপী রঙ হয়ে থাকে।

দুধের বেলায়ঃ একটি টেস্ট টিউবে ১০ এম এল দুধ নিয়ে তাথে ৫এম এল সালফিউরিক এসিড ও ফেরিক ক্লোরাইডের মিশিয়ে একটু নড়া চড়া করলে যদি নীল-লোহিত বর্ণের রিং তৈরি করে তা হলে বুজতে হবে এতে ফরমালিন মিশ্রিত আছে ( Take 10 ml of milk in test tube and 5 ml of conc. sulphuric acid is added on the sides of the test tube with out shaking. If a violet or blue ring appears at the intersection of the two layers, then it shows the presence of formalin ) তবে গুড়া দুধের বেলায় ধরা খুভ কস্টকর বিশেষ করে মেলানিন সহ কেমিক্যাল পদার্থের । কথিত আছে বড় বড় খামার বাড়ির কর্তারা প্যাকেট জাত দুধ উৎপাদন কারীর কাছে পৌছে দেয়ার আগে, দুধে কয়েক ফোটা ফরমালিন মিশ্রিত করে নেয় যা ” খামারীর ফোটা ” নামে অনেকেই জানেন মুলত ইহাই ফরমালিন অথচ এই দুধ খেয়ে ছোট ছোট কোমলমতী বাচ্চারা অবসন্নতা ও মেধা শূন্যতায় ভুগতে পারে সে কথা মনে রাখা উচিৎ ।

(যদিও বৈজ্ঞানিক ভাবে ১০০% নিশ্চিত নয় তার পর ও গড়ে ৬০% ফরমালিন মুক্ত থাকা সম্বভ কেননা পরীক্ষায় দেখা যায ফরমালিন মিশ্রত পন্য এক ঘন্টা পানিতে ডুবিয়ে রাখলে সর্বোচ ০.০৫ পিপিএম পরিমাণ কমতে পারে। যেখানে মাছে ফরমালিনের মাত্রা ০.৫-৫.০ পিপিএম দেখা যায় তখন কত টুকু ফরমালিন মুক্ত হবে বুজতেই পারছেন ! )

ফরমালিন দূর করতে হলে যা যা করতে পারেন ( সংগৃহীত ):

পরীক্ষায় দেখা গেছে পানিতে প্রায় ১ ঘন্টা মাছ ভিজিয়ে রাখলে ফর্মালিনের মাত্রা শতকরা ৬১ ভাগ কমে যায়ঃ- লবনাক্ত পানিতে ফর্মালিন দেওয়া মাছ ১ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ ফর্মালিনের মাত্রা কমে যায় বলে মনে করা হয় – প্রথমে চাল ধোয়া পানিতে ও পরে সাধারন পানিতে ফর্মালিন যুক্ত মাছ ধুলে শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ ফর্মালিন দূর হয় – সবচাইতে ভাল পদ্ধতি হল ভিনেগার ও পানির মিশ্রনে (পানিতে ১০ % আয়তন অনুযায়ী) ১৫ মিনিট মাছ ভিজিয়ে রাখলে শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ ফর্মালিনই দূর হয়– এক লিটার পানিতে এক কাপ ভিনেগার মিশিয়ে শাকসবজি, ফলমুল কিংবা মাছ ১৫ মিনিট রাখুন এবং এরপর ধুয়ে নিন ভালো করে এবং এই পদ্ধতি অনেক টা ভাল অন্যান্য পদ্ধতির চাইতে । ঠিক সে ভাবে ফল মুল ও শাঁক সবজির বেলায় ও করতে হবে বলে জানানো হয়েছে ।

( Fruits: If you suspect that the fruit contains formalin, you must sink it under water for at least 1 hour. Then the formalin will be removed and you can eat the fruit.
Vegetables: Vegetables can be ripen by formaldehyde too. You should sink those under salt-water for at least 10 minutes before cooking. It will remove the formalin from the vegetables.
Fishes: Sink the fishes under water for one hour. It will remove 60% formalin. If you sink it under salt-water for one hour, 90% formalin will be removed. If you sink the fishes under vinegar mixed water [90% vinegar, 10% water], 100% formalin removal can be guaranteed!)

কিভাবে কিছু টা সন্দেহ করতে পারেন ফরমালিন যোক্ত মাছ বা সবজি ? ফরমালিনযুক্ত মাছের ফুলকা ধূসর, চোখ ঘোলাটে ও ফরমালিনের গন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়া ফরমালিনযুক্ত মাছে মাছি বসে না। আঁইশ তুলনামূলক ধূসর বর্ণের হয়, শরীরে আঁশটে গন্ধ কম পাওয়া যায়, দেহ তুলনামূলক শক্ত হয়। অন্যদিকে ফরমালিনবিহীন মাছের ফুলকা উজ্জ্বল লাল বর্ণের হয়, চোখ ও আঁইশ উজ্জ্বল হয়, শরীরে আঁশটে গন্ধ পাওয়া যায়, মাছের দেহ নরম হয়, ত্বকের আঁশ পিচ্ছিল থাকে। ফরমালিন যুক্ত ফলে প্রাকৃতিক সুবাসের পরিবর্তে ঝাঁঝালো এক প্রকার গন্ধ থাকে। ফলের বোটার অংশটি নাকের কাছে ধরুন। যদি প্রাকৃতিক গন্ধ না পান বা ঝাঁঝালো গন্ধ নাকে লাগে তাহলে নিশ্চিত ভাবেই এতে ফরমালিন মেশানো হয়েছে মনে করতে পারেন।
ক্যালসিয়াম কার্বাইড ( calcium carbide )

সাধারনত ক্যালসিয়াম কার্বাইড এক ধরনের কেমিক্যাল (Ca C2) ধূসর কালো দানাদার রসুনের গন্ধযুক্ত রাসায়নিক পদার্থ। ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করা হয় ইস্পাত কারখানায়, ধাতব বস্তু কাটাকাটিতে বা ওয়েল্ডিং ইত্যাদি কাজে । অ্যাসিটিলিন গ্যাস তৈরি করার জন্য ইহা ব্যবহার করা হয়, বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরির জন্যও এটি ব্যবহার করা হয় , যার দুটি ফর্মের কার্বন এটম ডাবল ও ট্রিপল এটম বন্ডে রূপান্তরিত করা যায় । তবে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারে ক্যালসিয়াম কার্বাইড এর সঙ্গে আর্সেনিক এবং ফসফরাস মিশ্রিত করে ব্যাবহার করা হয় । অন্য দিকে ইহা পানির সঙ্গে বিক্রিয়া করে ইথিলিন গ্যাস আর চুন তৈরি করে। এই ইথিলিন গ্যাসকে পলিমার বিক্রিয়া করা হলে পলিথিন তৈরি হয় বা বলতে পারেন পলিথিন তৈরির কাঁচামাল । অন্যদিকে ক্যালসিয়াম ও কার্বন নিয়ে গঠিত পদার্থটিতে দুটি ক্ষতিকারক পদার্থ আর্সেনিক এবং ফসফরাস থাকে । তাই নিঃসন্দেহে মারাত্মক ক্ষতিকারক ইহা কাউকে বলার অপেক্ষা রাখেনা । সদ্য গবেষণায় সকলেই একমত ২১% সম্বাভনা আছে – যকৃৎ, কিডনি ও ফুসফুসের ক্যানসারের ।

কীভাবে ফল কে পাকায়:

ক্যালসিয়াম কার্বাইড জলীয় সংস্পর্শে এলেই অ্যাসিটিলিন গ্যাস নির্গত করে, যা পাকানোর সময় ফলের সাথে মিশে ক্ষতিকর ইথাইলিনে রূপান্তরিত হয়। অ্যাসিটিলিন ইথাইলিনে রূপান্তরিত হয়ে ফল খুব শিগগিরই ফলের কষ ও ঘামের সঙ্গে এ পদার্থ মিশে গ্যাস তাপের সৃষ্টি করার ১২ /১৪ ঘণ্টার ভিতর ফল পাকতে শুরু করে কেউ কেউ সাথে কেরোসিন ব্যাবহার করেন ।

ক্যালসিয়াম কার্বাইড স্বস্থ্যের জন্য কি কি ক্ষতি করেঃ

কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল খেলে মানুষ দীর্ঘমেয়াদি নানা রকম রোগে বিশেষ করে বদহজম, পেটের পীড়া, পাতলা পায়খানা, জন্ডিস, গ্যাস্ট্রিক, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, লিভার ও কিডনি ন্ষট হওয়াসহ ক্যান্সারের মত জাটল রোগের সৃষ্টি হয়। এছাড়া মহিলারা এর প্রভাবে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দিতে পারে।– শ্বাসের সঙ্গে ক্যালসিয়াম কার্বাইডের গ্যাস গ্রহণ করলে তা ফুসফুসের জন্য তিকর। সাধারণত এর ফলে শ্বাসকষ্ট ও কাশি হয়। অতিমাত্রায় গ্রহণ করলে ফুসফুসে পানি জমে তীব্র শ্বাসকষ্ট হতে পারে।–ক্যালসিয়াম কার্বাইড ত্বকের সংস্পর্শে এলে জ্বালা-পোড়া হয় এবং লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে।–চোখের সংস্পর্শে এলে চোখেও জ্বালা পোড়া হয় এবং চোখের কর্নিয়া বিনষ্ট হতে পারে।–ক্যালসিয়াম কার্বাইড মুখ, গলা এবং কোমল ঝিলি পর্দায় প্রদাহ সৃষ্টি করে।–ক্যালসিয়াম কার্বাইড থেকে উৎপন্ন অ্যাসিটিলিন গ্যাস অতিমাত্রায় শরীরে প্রবেশ করলে মাথা ঝিমঝিম করে, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করা, ডায়রিয়া, পেটব্যথা, বমিবমিভাব এবং বমি হতে পারে। এমনকি অ্যাসিটিলিন বিষক্রিয়ার ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

কীভাবে বুঝবেন ফলকে কার্বাইড দিয়ে পাকানো হয় ?-

ফল দেখতে চেহারা উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয় লাগবে ।- ফল সমূহ দেখতে সম্পূর্ণ ফলের রঙ এক ধরনের দেখাবে, অথচ কার্বাইড দিয়ে না পাকালে ফলের গোড়া বা অন্যান্য অংসে সাদা কালো বা কসের দাগ থাকবেই অথবা একটি গাছের ফল কোন সময় সমান ভাবে পাকেনা । টমোটো, আম, পেঁপে ইত্যাদি ফলকে কৃত্রিমভাবে পাকানো হলে ফলত্বক সুষম রঙ ধারণ করে। কলার ক্ষেত্রে ফলত্বক হলুদ বর্ণের থাকলেও কাণ্ডের অংশ গাঢ় সবুজ রঙের থাকে। – ফলের গন্ধ রসুনের মত হালকা গন্ধ থাকতে পারে বা মিস্টি গন্ধ থাকবেনা – অথবা ফল মুখে দিলে দেখবেন টক বা মিষ্টি কোনো স্বাদই নেই বরং বিষাদ, পানসা, শক্ত ও তেতো স্বাদযুক্ত মনে হবে ।

কি পরীক্ষা করতে পারেন:- কার্বাইডের অস্তিত্ব শনাক্তের জন্য আড়তগুলোর আম ডিস্টিল ওয়াটারে ডুবিয়ে তাতে ক্যালসিয়াম ইনডিকেটর দেওয়া হয়। কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম কিছুক্ষণ পর সবুজ রং ধারণ করে।

Related Articles

Back to top button