খাদ্য ও পুষ্টি

আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় মিনারেলগুলোর মধ্যে বেশি দরকার ক্যালসিয়াম

আমাদের শরীরের জন্য প্রায় ২৪ ধরণের মিনারেল দরকার। এসব মিনারেলের প্রত্যেকটি আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য থেকে পেতে হয়। আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় মিনারেলগুলোর মধ্যে পরিমাণে যেটি সবচেয়ে বেশি দরকার তা হল ক্যালসিয়াম। একজণ পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ থাকে প্রায় ১০০০-১২০০ গ্রাম।

জন্মের পর একটি বাচ্চার দেহে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সাধারণত থাকে ২৭.৫ গ্রাম, যা বাচ্চার বয়স ও ওজন বাড়ার সাথে সাথে বেড়ে যায়। এই ক্যালসিয়ামের শতকরা প্রায় ৯৯ ভাগ থাকে হাড়ের ভিতর এবং বাকি এক ভাগ থাকে বিভিন্ন নরম প্রত্যঙ্গে। ক্যালসিয়াম শরীরের হাড় ও দাঁতের গঠন, রক্তের জমাট বাঁধা, হৃদযন্ত্রের ও পেশীর সংকোচন-প্রসারণ স্নায়ুতন্তুর ও স্নায়ুকেন্দের উত্তেজনা নিয়ন্ত্রন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে ক্যালসিয়াম।

শরীরে  ক্যালসিয়ামের অভাব হলে দেহের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, হাড় ক্ষয় হয়, রিকেট ও টিটনি সহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিদিন খাবারের মাধ্যমে গ্রহণকৃত ক্যালসিয়ামের পরিমান খুব অল্প হলে,দেহের জমাকৃত ক্যলসিয়াম ভাঙতে শুরু করে এবং তা মুত্র,মল ও ঘামের মাধ্যমে দেহ থেকে বের হতে থাকে।

এভাবে যখন প্রতিদিনের খাবারে ক্যালসিয়াম প্রায় অনুপস্তিত থাকতে শুরু করে তখন একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের দেহ থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম বের হেয় যায়। গরমের দিনে ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে যাওয়া ক্যালসিয়ামের পরিমান উল্লেখযোগ্য। অতিরিক্ত ঘামতে থাকলে একজন পূর্ণবয়স্ক লোকের দেহ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪২-১২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম বের হয়ে যেতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে-

  • একজন ছেলের (১৫-৫০+ বছর বয়স) দৈনিক ৪০০-৫০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাওয়া দরকার।
  • একজন মেয়ের (১১-১৪ বছর বয়স) দৈনিক ৬০০-৭০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাওয়া দরকার।
  • একজন মেয়ের ( ১৫-১৮ বছর বয়স) দৈনিক ৫০০-৬০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাওয়া দরকার।
  • একজন মেয়ের (১৯- ৫০+ বছর বয়স) দৈনিক ৪০০-৫০০মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাওয়া দরকার।
  • একজন গর্ভবতী মা ও দুগ্ধদানকারী মা কে  দৈনিক ১০০০-১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাওয়া দরকার।

নিম্নে যেসব খাবারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে তাদের নাম ও তাতে উপ্সহিত ক্যালসিয়ামের পরিমাণ উল্লেখ করা হল। এইসব খাদ্যগুলো নিয়মিত গ্রহণের মাধ্যমে আমারা আমাদের শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে পারি।

  • খাবার যোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম রুপা পাতিয়া মাছে রয়েছে- ৮৯০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
  • খাবার যোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম রুই মাছে রয়েছে- ৬৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
  • খাবার যোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম খয়রা মাছে রয়েছে- ৫৯০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
  • খাবার যোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম খলসে মাছে রয়েছে – ৪৬০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
  • খাবার যোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম কই মাছে রয়েছে- ৪১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
  • খাবার যোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম মৃগেল মাছে রয়েছে- ৩৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
  • খাবার যোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম পাবদা মাছে রয়েছে- ৩১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
  • খাবার যোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম ডাটাতে রয়েছে- ২৬০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
  • খাবার যোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম সিমে রয়েছে- ২১০ মিলি গ্রামক্যালসিয়াম।
  • খাবার যোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম লাল ডুমুরে  রয়েছে- ১৮৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
  • খাবার যোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তেতুলে  রয়েছে- ১৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
  • খাবার যোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম মিষ্টি কুমড়ার ফুলে  রয়েছে- ১২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
  • খাবার যোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম থানকুনির পাতাতে রয়েছে- ১০৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
  • খাবার যোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম পনিরে  রয়েছে- ৭৯০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
  • খাবার যোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম মহিষের দুধের ছানায় রয়েছে- ৪৮০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
  • খাবার যোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর দুধের ছানায় রয়েছে- ২০৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
  • খাবার যোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর দুধে রয়েছে- ১২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
  • খাবার যোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম মহিষের দুধে রয়েছে- ২১০  মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।
  • খাবার যোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম ছাগলের  দুধে রয়েছে- ১৭০  মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।

যাদের লাক্টোজ ইন টলারেন্স আছে অথবা দুধ খাওয়ার পর হজমে সমস্যা হয় তারা দুধের পরিবর্তে টক দই খেতে পারেন। কারণ লাক্টোজ ইন টলারেন্সের জন্য দায়ী দুধের শর্করা লাক্টোজ , দইতে ল্যাক্টিক এসিডে পরিণত হয়।

Related Articles

Back to top button