দৈনিক খবর

‘ঘর থেকে বের হলেই মানুষ নানা কথাবার্তা বলে,আমার মুখ দেখলে নাকি অমঙ্গল হয়’,প্রয়াত সংগীত শিল্পীর স্ত্রী

গেল কিছুদিন আগে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন জনপ্রিয় কণ্ঠ শিল্পী আকবর।জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি-তে’ গান গেয়ে পরিচিতি পাওয়া গায়ক আকবর গত বছরের ১৩ নভেম্বর পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এই সংগীতশিল্পীর মৃ’ত্যু’র’ পর তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমার শারীরিক অবস্থা ভালো নেই। অনেক কথা শোনা যায়।

আকবরের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘আমি একজন বিধবা। আমার মুখ দেখে কেউ দিন শুরু করলে কি তার অমঙ্গল হবে? আমি কোন ধরনের সমাজে বাস করছি? আমার মেয়েও প্রতিদিন তার বিধবা মায়ের মুখ দেখে দিন শুরু করে, যেখানে আমার মেয়ের কোন দুর্ভাগ্য হচ্ছে না!’

তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ তোমার পিতার জীবনকে দুনিয়াতেই শেষ করে দিয়েছেন এবং তাকে আখেরাতের মেহমান বানিয়েছেন। এটা কি আমার দোষ? একটা মেয়ে কি চায়- তার আগে তার স্বামী মারা যাক? আচ্ছা অথৈর বাবা বেঁচে থাকতেও সমাজের মানুষ আমাকে বলেছিল আমি কেমন মেয়ে, আমার মনে হয় চরিত্রের সমস্যা আছে। আমার স্বাদ কেমন? আমি কেন এমন অসুস্থ ব্যক্তির সাথে? আমার স্বামী বেঁচে থাকলেও আমার সমস্যা আছে।

অবশেষে আকবরের স্ত্রী বললেন, ‘আমার স্বামী এখন মারা গেছে এটা নিয়ে আমার সমস্যা আছে। তারপর বলুন কোনটা আমার জন্য ভালো। মানুষ ঘর থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে কথা বলা শুরু করে। আমি সত্যিই এটা আর নিতে পারছি না। আমি আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস হারিয়েছি। অথৈর বাবা আমার জীবন নিয়ে গেছে। আমার শরীর পড়ে আছে। এই মৃ’ত’প্রা’য়’ শরীরটা নিয়ে মেয়েটার কথা চিন্তা করে যত আমি স্বাভাবিক হতে চাই, ততই মানুষ আমাকে নর্দমায় ফেলে দিচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে, আল্লাহ অথৈর বাবাকে না নিয়ে আমাকে নিয়ে গেলেই ভালো করত।’

প্রসঙ্গত, প্রায় ১৮ বছর আগে আকবর আলি গাজী কিশোর কুমারের গান ইত্যাদি মঞ্চে গেয়ে পরিচিতি পান। এরপর বাজিমাত তার আসল গান ‘তোমার হাত পাখর বাটা’ পরিবেশন করেন। গানটির অডিও ও ভিডিও দুটোই সুপার হিট হয়েছে। দেশ-বিদেশের মঞ্চে গান গেয়ে জীবন কাটাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু আকবর হঠাৎ কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। ডায়াবেটিসও হয়। এরপর থেকেই তার জীবনে ছন্দপতন ঘটে। বহু বছর ধরে ভুগতে থাকেন তিনি রোগে।

কিছুদিন আগে রাজধানীর বেটার লাইফ হাসপাতালে অপারেশনের মাধ্যমে তার ডান পা কেটে ফেলা হয়। এরপর ৫ নভেম্বর কিডনি জটিলতায় রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সেখান থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু ডাক্তারদের সমস্ত প্রচেষ্টা বৃথা যায় এবং আকবর মারা যান।

প্রসঙ্গত, মারা যাওয়ার পর সেই সপ্তাহের সোমবার (১৪ নভেম্বর) বাদজোহার ধর্মতলা মসজিদ প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা শেষে কারবালা কবরস্থানে তার মায়ের কবরের পাশে আকবরকে শায়িত করা হয়।

Related Articles

Back to top button