সেই আরাভ খানকে নিয়ে মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য, দুবাইয়ে ঢাকার গোয়েন্দারা
বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমজুড়ে বেশ আলোচনায় ঢাকায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় অন্যতম ফেরারি আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান। তাকে দেশে ফেরাতে সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে এই মুহূর্তে আরাভ খান কোথায় রয়েছে- তা নিয়ে যেন কৌতূহলের কোনো শেষ নেই সাধারণ মানুষের।
তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ঢাকার কয়েকজন গোয়েন্দা এখন দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। তারা আরভের অবস্থান, জুয়েলার্স সহ সম্পদ এবং আনুষাঙ্গিক সম্পর্কে অনুসন্ধান করছে।
দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মামলার আসামি ফেরারি কীভাবে মাত্র তিন বছরে এত টাকা পেলেন তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গোপালগঞ্জের দরিদ্র পরিবারের ছেলে বড়লোক আরাভ খানকে কেউ পর্দার আড়ালে বসে সোহাগ মোল্লা তৈরি করছে কিনা সন্দেহও করেছে পুলিশ। এই আরাভ খানের পেছনে অর্থপাচারকারী আছে কি না, তা নিয়েও বিশদ বিশ্লেষণ চলছে।
আরেকটি সূত্র বলছে, ভারতীয় গোয়েন্দারাও আরভ ইস্যুটি পর্যালোচনা করছে। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে যাওয়ার এবং পাসপোর্ট নিয়ে দুবাই যাওয়ার খবরে নড়েচড়ে বসেছে ভারতীয় গোয়েন্দারা। সোশ্যাল মিডিয়ায় অরাভের শেয়ার করা ভিডিওগুলোর মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তারা। এছাড়া, তারা আরভের ইন্ডিয়া কানেকশনও খতিয়ে দেখছে।
এদিকে, বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের ইন্টারপোলের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) ডেস্ক এখন পর্যন্ত আরভের গ্রেপ্তার বা তার অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মঞ্জুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ অরভকে গ্রেপ্তার করে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে, গ্রেফতার এড়াতে শরীর ঢেকে রাখা আরাভ খানের সেই অহংকার এখন আর সোশ্যাল মিডিয়ায় নেই। দুবাইয়ে সোনার দোকান খোলা এই যুবক কয়েকদিনের জন্য লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছেন।
সূত্রের খবর, আরাভ খান গোপনে দুবাই ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা বা অন্য কোনও নির্ভরশীল দেশে অভিবাসন করতে মরিয়া। কিন্তু দুবাই পুলিশের নজরদারির কারণে তার পক্ষে সহজ হবে না।
জানা গেছে, ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে দুবাই গিয়েছিলেন আরভ। সেই পাসপোর্ট বাতিলের জন্য কূটনৈতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শিগগিরই তার পাসপোর্ট বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করার চেষ্টা করছে।
মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, বাংলাদেশি নাগরিক রবিউল ভারতে পালিয়ে গিয়ে সে দেশের পাসপোর্ট নিতে নিজের নাম পরিবর্তন করেন, যা ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় জানানো হয়। বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে।
এই আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা অরভের পাসপোর্ট পাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। একই সঙ্গে তার ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিলের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, সম্প্রতি ফেসবুকে আরভ যা বলেছেন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পর্যালোচনা করছে। এছাড়া আরভ ভারতে পাসপোর্ট করতে যে ঠিকানা ব্যবহার করেছিল এবং যে অফিস থেকে পাসপোর্ট পেয়েছিল সে বিষয়েও খোঁজখবর নিচ্ছেন তারা।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ পুলিশের অনুরোধে গত বৃহস্পতিবার রাতে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ তালিকায় আরাভ খানের নাম প্রকাশ করা হয়। তারপর থেকে, আরভ দুবাইতে নজরদারিতে রয়েছে, বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে।
এর আগে শনিবার এক অনুষ্ঠানে পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আরাভ খানকে গ্রেপ্তারে বাংলাদেশ পুলিশ দুবাই ও ইন্টারপোলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।
দুবাই সূত্র বলছে, ইন্টারপোলের জারি করা রেড অ্যালার্টের খবরে গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন আরাভ খান। দুবাইয়ে তার সঠিক অবস্থান জানা যায়নি। আরভের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তিনি এখন বাড়িতেই অবস্থান করছেন।
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ‘আরাভ জুয়েলার্স’ উদ্বোধন করতে দুবাই যান বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। আর এরপরই প্রকাশ্যে আসে আরাভ খান। তিনি একাধিক মামলার আসামি বলে জানা গেছে।