দৈনিক খবর

প্রতিবেশীর অত্যাচারে ২ মাস ধরে সপরিবারে বাড়িছাড় নারী ফুটবলার!

সরকারের দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় মিলি আক্তারের (১৭) পরিবার বসবাস করতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। অসহায় পরিবারটি গত প্রায় দুই মাস ধরে নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে। প্রতিবেশীদের অত্যাচার নির্যাতনের কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

নারী ওই ফুটবল খেলোয়াড় ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের বারুইগ্রাম এলাকার মো. শামছুল হকের মেয়ে মিলি আক্তার।

থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগ ও সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মিলি আক্তারের বাবা-মা ছাড়াও ছোট বোন রয়েছে। বাবা দিনমজুরি করে সংসার চালান। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা গোল্ডকাপ টুর্ণামেন্টে নান্দাইল উপজেলার রানার্সআপ দলের নিয়মিত গোলকিপার ছিলেন মিলি। এ ছাড়াও অনুর্ধ্ব-১৫, ১৬ ও বর্তমানে ১৭ দলের গোলকিপারও তিনি।

মিলি জানান, তাদের এক টুকরো ভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই। সেই ভিটাতে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর একটি ঘর বরাদ্দ হয় গত ২০১৮ সালে। ঘর তৈরির পর বৃদ্ধ বাবা-মা ছাড়াও চার বোন কোনমতে বসবাস করে আসছিলেন। এ অবস্থায় তাদের ঘরের সামনেই অবস্থান প্রতিবেশী আবুল হোসেন বসতঘর। তার পরিবারের লোকজন সামান্য ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সময় মিলির পরিবারের সঙ্গে বাজে আচরণ করে। এ ছাড়াও পয়ঃনিষ্কাশনের ময়লা-আর্বজনা ঘরের সামনে ফেলে রাখে। এতে দুর্গন্ধ ছাড়াও চলাচলে মারাত্মক অসুবিধা হয়। প্রতিবাদ করলে তাদের কাছে ভিটা ও ঘর বিক্রি করে চলে যেতে বলেন তারা।

এভানে নানাভাবে হয়রানি চলতে থাকে। তাদের কথায় ভিটা ছেড়ে না যাওয়ায় প্রতিনিয়তই নানাভাবে অত্যাচার ও নির্যাতন করে আসছে প্রতিবেশী পরিবারটি। এ ঘটনা নিয়ে সামাজিকভাবে জানালে তারা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে অত্যাচারের মাত্রা বড়িয়ে দেয়। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে গত দুই মাস আগে বাড়ি ছেড়ে পাশের এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতে হচ্ছে তাদের।

বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সরেজেমিনে গেলে দেখা যায়, এক চিলতে জমির ওপর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে তালা দেওয়া। বসতঘরের সামনে ময়লা-আবর্জনা ছাড়াও সামনেই প্রতিবেশীর ময়লা-আবর্জনা বের হওয়ার ড্রেন। ব্যাপক দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বাড়িতে প্রবেশ করার কোনো রাস্তা নেই। সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এসব বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে আশপাশের অনেকেই জানান, প্রতিবেশী আবুল হোসেন ও তার পরিবারই এসব ঘটনার জন্য দায়ী। উপস্থিত লোকজন তখন আবুল হোসেনের মেয়েদের দোষারোপ করে জানান, মিলির পরিবারের পক্ষ নিয়ে কেউ কথা বললে তাদেরকেও ছাড় দেয় না আবুল হোসেনের পরিবার। বিভিন্ন সময়ে তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়।

এ বিষয়ে ঘটনার সত্যতাও মেলে। এ প্রতিনিধি আবুর হোসেনের খোঁজ করলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন এক নারী। তিনি তেড়ে এসে বলেন, এখানে কী করতে আসছেন, কারা আপনাকে পাঠিয়েছে। এখান থেকে চলে যান। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই নারী আবুল হোসেনের মেয়ে হেলেনা খাতুন (২৫)। মিলিদের পরিবারের সঙ্গে কী সমস্যা জানতে চাইলে উত্তেজিত হয়ে তিনি বলেন, আপনারা যা পারেন করেন। এরা এখানে থাকতে পারবে না সাফ কথা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় নারী ফুটবল দলের গোলকিপার কোচ মাসুদ আহম্মেদ উজ্জল কালের কণ্ঠকে জানান, মিলি বর্তমানে জাতীয় নারী ফুটবল দলের নিয়মিত গোলকিপারের একজন। পারিবারিক ঝামেলার কারণে সে বর্তমানে ছুটিতে রয়েছে। তার বিষয়টি নিয়ে আমরা অবগত।

এ ব্যাপারে চন্ডীপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দন ভুইয়া জানান, ঘটনাটি নিয়ে বেশ কয়েকবার বসা হয়েছিল। কিন্তু আবুল হোসেনের পরিবার কোনো কিছু মানেনি। তারপরও ফের বিষয়টি নিয়ে বসবো।

Related Articles

Back to top button