Countrywideদৈনিক খবর

‘আবাসিকতার কাহিনী-গল্প বাদ দে, হলে আমরা যেটা বলবো সেটাই হবে’

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কয়েকটি ঘটনা বর্তমান সময়ে বেশ আলোচনায় রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রলীগের এক নেত্রী এবং তার কয়েকজন সহযোগী মিলে র‍্যাগ দেওয়ার নামে বেদম প্রহারের করে। এবার ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের সিট থেকে এক ছাত্রকে তার জিনিসপত্র ও বই বাইরে ছুড়ে ফেলে হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) লালন শাহ হলের এক আবাসিক ছাত্রীকে জোর করে হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ঐ ছাত্র হলেন মাহাদী হাসান যিনি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।

শনিবার তিনি হলের প্রভোস্টের কাছে অভিযোগ করে অভিযুক্তদের নাম উল্লেখ করে হলের আবাসিকতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান। তবে প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ করলেও তারা তা গ্রহণ করেননি বলে জানান ঐ শিক্ষার্থী।

অভিযুক্তরা হলেন বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র তরিকুল ইসলাম তরুণ, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ফাহিম ফয়সাল এবং বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের রাজু। তারা সবাই শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, মাহাদী লালন শাহ হলের ৪২৮নং কক্ষের আবাসিক ছাত্র। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তরুণ, ফাহিম ও রাজু ৪২৭ নম্বর কক্ষে ডাকেন। অভিযুক্তরা আগে থেকেই সেখানে অপেক্ষা করছিল। রুমে ঢুকে ফাহিম মাহাদিকে প্রশ্ন করতে থাকে। এ সময় নিজের সিটেই থাকতে চান মাহাদী। রাজু তাকে ধমক দিয়ে বলে- তুই কে? তোকে আগে কখনো হলে দেখিনি। কে তোকে হলে তুলেছে? আর ওইসব আবাসিতার কাহিনী বাদ দে। আমরা যা বলবো হলে তাই হবে।’

তখন তরুন মাহাদীকে বলল, ‘আমাকে চিনিস তুই, আমি কে? এখনও ভালই ভালই বলছি, ৪২৮ থেকে সবকিছু নিয়ে কোথায় যাবি যা। ৩০৮ এ থাকবি নাকি কোথায় থাকবি আমরা জানিনা। একথা বলে তারা মাহাদীর বই, খাতা, তোষক ও বালিশ কক্ষের বাইরের করিডোরে ফেলে দেয় এবং বলে এখানে তোর সবকিছু আছে নিয়ে চলে যাস।’

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, ছাত্রলীগ কর্মী নুরুজ্জামান খান সাগরের মাধ্যমে প্রথমে হলের গণরুমে ওঠেন। পরে তিনি অতিথি হয়ে ৩০৮ নম্বর কক্ষে যান। সেখান থেকে তিনি ছাত্রলীগের সকল মি”ছিল-মিটিংয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। পরে তিনি ৪২৮ নম্বর কক্ষে অবস্থান নিলে সেখানে উঠতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন।

তদন্তে জানা যায়, অভিযুক্তরা শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী। তারা ওই হলের সিট নিয়ন্ত্রণ করে। তবে ফাহিম ফয়সাল বলেন, আগে সাগর ভাইয়ের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। আমরা এখন তাকে মি”ছিল মিটিংয়ে পাই না।

অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সে অন্য এক ছেলের সিটে থাকতো। আমরা উভয়ের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করেছি।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন, যে হলে উঠেনি তাকে সিট থেকে সরানোর প্রশ্নই আসে না। আমরা কোনো আবাসিক শিক্ষার্থীকে হলে উঠতে বাধা দেয় না। বরং আমরা বৈধ ছাত্রদের সর্বোচ্চ সাপোর্ট দেই।

অভিযোগের বিষয়ে প্রক্টর প্রফেসর ড. শাহাদাত হোসেন আজাদ বলেন, এটি একটি আবাসিক হলের ঘটনা, তাই প্রথমে হলের প্রভোস্ট, প্রভোস্ট কাউন্সিল বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। সংক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী তাদের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হলে আমি ছাত্র উপদেষ্টাকে মাধ্যম করে প্রক্টর বরাবর লিখিত দিতে বলেছি। তারপর আমরা বিষয়টি দেখব, কারণ এটি প্রশাসনের আগে দেখার বিষয়।

অধ্যাপক ডা. ওবায়দুল ইসলাম লালন শাহ হলের প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি এ বিষয়ে বলেন, আমি ঘটনার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি এবং আমি বিষয়টি ইতিমধ্যে তদন্ত করছি। খতিয়ে দেখার পর ঘটনার সত্যতা যাচাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিবো।

 

 

Related Articles

Back to top button