দৈনিক খবর

বোম্বাই মরিচে কোটি টাকার বাণিজ্য

কৃষক জাকির হোসেন (লুঙ্গি জাকির) বলছিলেন, ‘বোম্বাই মরিচ কৃষককের মানিব্যাগ। আমরা সপ্তাহের বাজারে যাওয়ার সময় মানিব্যাগ নিয়ে যাই না। এক ব্যাগ মরিচ নিয়ে গেলেই বাজার-সদায় করে আরও টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারি। প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৫ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করতে পারি।’

জানা যায়, জাকিরের মতো কয়েকশ কৃষক গত কয়েক বছর যাবৎ আধুনিক পদ্বতিতে বোম্বাই মরিচ চাষাবাদ করে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। প্রতিবছর শুধু বোম্বাই মরিচ বিক্রির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

জেলার কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের চিত্র এমনই। এখানকার কৃষকরা যে মরিচ উৎপাদন করেন, তা তাদের স্থানীয় পাখিমারা বাজারেই বিক্রি করে থাকেন। এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা কিনে নিয়ে যান। নীলগঞ্জের এ বোম্বাই মরিচ ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে।

কৃষকরা কাচা মরিচ চাষ করলেও পটুয়াখালীর নীলগঞ্জ ইউনিয়নের মতো আধুনিক পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে বোম্বাই মরিচ চাষাবাদ খুব একটা দেখা যায় না। এখানকার কৃষকরা তাদের জমি উঁচু করে বেড তৈরি করেন। এরপর সেখানে বাঁশ কিংবা লোহার পাইপ দিয়ে কাঠামো তৈরি করে তার ওপর পলিথিন শিট দিয়ে ঢেকে দেন। এ শেটের নিচে চলে মরিচ আবাদ। বর্তমানে পাইকারি বাজারে তারা প্রতি পিস বোম্বাই মরিচ ২-৩ টাকায় বিক্রি করছেন। এতে তাদের খুব বেশি খরচ না হলেও লাভ অনেক বেশি।

কুমিরমারা গ্রামের কৃষক সুলতান গাজী বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশে ৪ শতক জমিতে দুটি পলিথিন শেটের বেড তৈরি করে মরিচ লাগিয়েছি। এতে আমার খরচ হয়েছে মোট ১০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত আমি ৫৪ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করেছি। এখনও যে মরিচ আছে, তাতে আমি অন্তত দেড় লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করতে পারবো। এখন মোবাইলেও মরিচ বিক্রি হয়ে যায়। পাইকাররা বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিলে আমরাও গাড়িতে মরিচ পাঠিয়ে দিই। অন্য ফসল পরিবহনে সমস্যা হলেও বোম্বাই মরিচ পরিবহন সবচেয়ে সহজ। গত সপ্তাহে একটি বাজারের ব্যাগে করে মরিচ নিয়ে গিয়ে ৮ হাজার টাকা বিক্রি করেছি।’

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পটুয়াখালী সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আধুনিক কৃষির সঙ্গে নীলগঞ্জের কৃষকরা সরাসরি সম্পৃক্ত। তারা অসময়ে ফসল ফলিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তাদের উৎপাদিত পণ্যের জন্য নতুন বাজার তৈরি হয়েছে। সরকারের কৃষি বিভাগও এ বিষয়ে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে। বোম্বাই মরিচ এখন এ এলাকার কৃষকদের কাছে একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিচিত।’

কৃষকরা শুধু বোম্বাই মরিচ নয়; তারা গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন শাক-সবজিও উৎপাদন করছেন। তাদের উৎপাদিত ফসলের তালিকায় আছে তরমুজ, টমেটো, রেড বিট, ক্যাপসিকাম, রক মেলন, লেটুসপাতা, থাইপাতাসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফসল।

Related Articles

Back to top button