দৈনিক খবর

জীবিত অবস্থাতেই নিজের ক’ব’র বাঁধাই করলেন ৭০ বছর বয়সী দুলাল ফকির

জীবিত অবস্থাতেই নিজের ক;ব;র বাঁধাই করেছেন ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ দুলাল ফকির। মোট দুই স্ত্রী, ৯ ছেলে ও ১ মেয়ে নিয়ে দুলালের সংসার। তবুও এত প্রিয়জন থাকতেও মৃ;ত্যুর আগেই নিজ হাতে বাঁধাই করেছেন নিজের কবর।

দুলাল বরগুনা সদরে ঢলুয়া ইউনিয়নের পোটকাখালী এলাকায় ছোট স্ত্রী, ১ মেয়ে ও ৪ ছেলেকে নিয়ে বসবাস করেন। পেশায় তিনি একজন ডোম ও সা’পুড়ে। দুলাল ফকির ও ডো’ম দুলাল নামেই এলাকায় পরিচিত তিনি।মূলত বাবার কবর বাঁধাই করতে না পারার আক্ষেপ থেকে জীবিত অবস্থায় নিজ হাতে পোটকাখালী গণকবরের সামনে সামান্য জায়গায় নিজের কবর বাঁধিয়েছেন এই বৃদ্ধ। মৃ’ত্যুর পর নিজ এলাকায় নিজের বানানো কবরেই সমাধিস্থ হতে চান তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময়ে ইটের ভাটায় কাজ করতেন দুলাল। ওই ভাটায় প্রথমবার উৎপাদিত হওয়া ইট গ্রামের বাড়িতে ভাইদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বাবার কবর বাঁধাই করার জন্য। কিন্তু তার ভাইয়েরা ওই ইট দিয়ে গোসলখানা, টয়লেট নির্মাণ করেন। এতে মনঃকষ্টে ও আক্ষেপে জীবিত অবস্থায় নিজের কবর বাঁধিয়ে রেখে যাচ্ছেন তিনি।

ডো;ম দুলাল ফকির জানান, আমার বাবা মারা গেছে বহু বছর হয়েছে। তখন আমার ইটভাটার প্রথম ইট আমি বাড়িতে পাঠিয়ে দেই বাবার কবর বাঁধানোর জন্য। কিন্তু আমার ভাইয়েরা ওই ইটগুলো দিয়ে গোসলখানা বানিয়েছে, কেউ প্রসাবখানা বানিয়েছে।

এটি দেখার পর ঘেন্না লাগে আমার। আমি ভাবি আমার অবস্থাও তো এমন হতে পারে, তাই নিজের জন্য কিছু করতে হবে। এই ভেবে আমি সরকারি ১০ একর জমির সামান্য একটু জায়গায় এই কবরটি বানিয়েছি। সবাইকে বলে দিয়েছি যাতে আমার মৃত্যুর পর এখানে দাফন করা হয়।

তার পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা জানান, তিনি একজন নামকরা সাপু;ড়ে ও ডো;ম। তিনি বেঁচে থাকতেই নিজের ক;বরস্থা;ন বানিয়েছেন। তার মৃ;ত্যু যেখানেই হোক তাকে এখানেই দা;ফন করা হবে।

এখন পর্যন্ত ৯ সন্তান ও দুই স্ত্রীর ভরনপোষণ একা হাতেই সামলান দুলাল। তাদের মধ্যে ৫ ছেলে নিয়ে বড় স্ত্রী থাকেন বরগুনা পৌরসভার চরকলোনী এলাকায়। আর ছোট স্ত্রী, ১ মেয়ে ও ৪ ছেলেকে নিয়ে তিনি থাকেন ঢলুয়া ইউনিয়নের পোটকাখালী এলাকায়। জেলার লঞ্চ অ;গ্নিকা;ণ্ডে মৃ;তদের গ;ণকব;রটিও এই এলাকাতেই অবস্থিত। গণকবরটি দেখাশোনার দায়িত্ব দুলাল ডো;মের ওপর।

ডো;ম দুলাল ফকির জানান, আমি ৪৮ বছর ধরে লা;শ;কা;টা;র পে;শা;য় আছি। এখন এই গ;ণক;ব;রের দায়িত্বটাও আমার ওপর। তবে এখানে একটা মসজিদ আছে, কিন্তু নিয়োগপ্রাপ্ত ইমাম নেই, ম;রদে;হ গোসলের জায়গা নেই।

ম;রদে;হের স্বজনদের বসার জায়গা নেই। আমি নিজে ইমামের বেতন দেই। তবে আমার পক্ষে আর সম্ভব না। তাই মৃ;ত্যুর আগে এই মসজিদে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন ইমাম, ম;রদে;হ গোসলের জায়গা ও স্বজনদের বসার জায়গা দেখে যেতে চাই। সরকারের কাছে আমার এই একটাই দাবি।

জী;বিত অবস্থায় কবর বানানোর বিষয়ে স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা আবু হানিফ জানিয়েছেন, মৃ;ত্যুর আগে ক;বরের জন্য জায়গা চিহ্নিত করে রাখা ইসলামে বিধান রয়েছে। তবে ক;বর খুঁড়ে রাখা বাড়াবাড়ি। তবে ক;বরস্থা;ন উঁচু করে তৈরি করা ভালো। মৃ;ত্যু;র কথা স্মরণ করা ঈমানের অংশ।

Related Articles

Back to top button