Countrywideদৈনিক খবর

এবার রাষ্ট্রধর্ম বাতিলের ইঙ্গিত দিয়ে রাশেদ খান মেনন সংসদে দাঁড়িয়ে জোর গলায় বললেন একটি কথা

বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। আর এর অন্যতম একটি বড় কারণ হচ্ছে দেশের ৯০ % এরও বেশি মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী।তবে অনেকেই এটি মানতে নারাজ। অনেকেই মনে করেন বাংলাদেশ হওয়া উচিত ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ। আর এই লক্ষ্যে অনেকেই বলেছেন অনেক সময়ে অনেক কথা। এবার এ নিয়ে কথা বলেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।সংবিধানে ধর্মীয় নিরপেক্ষতার সংজ্ঞা লঙ্ঘন করে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তিনি আরো বলেন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে সংবিধানে জমে থাকা জগাখিচুড়ি দূর করতে হবে।

শনিবার (৮ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিধিমালা ১৪৭ এর অধীন উপস্থাপিত প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে রাশেদ খান মেনন এসব কথা বলেন। এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু।

রাশেদ খান মেনন বলেন, এই সংসদ মুক্তিযুদ্ধের ফসল। কিন্তু এই সংসদ কখনোই মসৃণ ছিল না। এই সংসদকে আঘাত করা হয়েছে, বাতিল করা হয়েছে, সংসদকে উপহাস করা হয়েছে। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোস্তাক খুনি ও স্বাধীনতাবিরোধীদের মোকাবিলা করে সরকারকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেন। অবৈধ ক্ষমতার অধিকারী জিয়াউর রহমান সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী করে সংবিধান পরিবর্তন করে অধিকার খর্ব করেছেন।

তিনি বলেন, আমরা জানি ওঝার মৃত্যু সাপের কারণে হয়েছে, তাই হয়েছে। এরপর আরেক সেনাপ্রধান ক্ষমতায় এসে বলেন, রাষ্ট্রীয় সংবিধানে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এই সংসদের আরেকটি কালো অধ্যায় ছিল জিয়াউর রহমানের আমলে জারি করা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তিনি জামায়াতের ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকরণের ওপর জোর দেন। সংবিধানের চারটি মূলনীতিকে ক্ষুন্ন করা হয়েছে। এরপর ২০০৬ সালে কীভাবে কারচুপির নির্বাচন হয়।

তিনি আরও বলেন, ওই দিন (১৯৯১ সালে) তত্ত্বাবধায়ক রাষ্ট্রপতি দলগুলো রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে সংসদ ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত সংসদীয় দলগুলোকে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এটি ছিল পঞ্চম সংশোধনীর উজ্জ্বলতম অধ্যায়। তবে সেদিন প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষমতার আরেকটি কেন্দ্রীয় বোঝা ৭০টি বিধির প্রস্তাব আমরা বাতিল করতে পারিনি। সংবিধানের চার স্তম্ভে ফিরতে ব্যর্থ ড. বিএনপি ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে উৎসাহিত করার পরিবর্তে ধর্মের নামে সহিংসতা শুরু করেছে। আজ আবারও নিরপেক্ষ সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি করছে বিএনপি। ২০০১ সালে কারচুপির নির্বাচন কিভাবে টেবিল উল্টে।

রাশেদ খান মেনন বলেন, সংবিধানে জমে থাকা জগাখিচুড়ি এখনো দূর হয়নি। বিধি ১২ সংবিধানে ধর্মীয় নিরপেক্ষতার সংজ্ঞা লঙ্ঘন করে, কিন্তু ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম রয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী সংখ্যালঘুদের স্বীকৃতি দিলেও তাদের মধ্যে অসন্তোষ কাটেনি। তারা উপজাতি হিসেবে নয়, জাতিগত গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃত। পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের চারটি মূলনীতি ফিরিয়ে আনা হলেও এসব বর্জ্য অপসারণ না হলে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।

মেনন বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটা সত্য যে, গত কয়েক বছরে আমাদের সংসদের মান খারাপ হচ্ছে। এখানে এক ঘণ্টার ভাষণের মধ্যে মাত্র ৩ মিনিট কথা বলেন গ্রামের সাধারণ মানুষ। বাকি কথা দলনেত্রীর সম্পর্কে, নিজের সম্পর্কে। সংসদ এর বাইরে যেতে পারে না। রাষ্ট্রপতি বলেন, সংসদের পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে এখানে আইনজীবী না থাকায় ভবিষ্যতে আইন প্রণয়নের জন্য বাইরে থেকে আইন প্রণেতাদের আনতে হবে। আজ রাজনীতি ও নির্বাচনের বাণিজ্যিকীকরণের ফলে সংসদের চরিত্র পাল্টে যাচ্ছে, নতুন মুখের আবির্ভাব ঘটেছে। আজ সংসদে ব্যবসায়ীর সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়লে তাদের স্বার্থে সংসদে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। সংসদকে আজ সংস্কার করতে হবে। সংবিধান পর্যালোচনা করা দরকার। আজকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মান ও গুণসম্পন্ন সংসদ গড়তে হবে। বঙ্গবন্ধু বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশে আজ বৈষম্যের পাহাড়, তার প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি এই সংসদে।

প্রসঙ্গত, এর আগেও সরকারের একজন এমপি ও সাবেক প্রতিযন্ত্রী ড. মুরাদ হাসান। তিনি দেশের ৭২ এর সংবিধান বহাল করে দেশকে ধর্ম নিরপেক্ষ বানাতে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন আমাদের দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এটা আমি মানি না। এরপর তাকে নিয়ে সারা দেশে শুরু হয় নানা ধরনের আলোচনা সমালোচনা। আর এতদিন পরে আবারো এই বিষয় নিয়ে কথা বললেন রাশেদ খান মেনন।

Related Articles

Back to top button