দৈনিক খবর

পোড়াদহ মেলায় ৪০ কেজির ব্ল্যাক কার্পের দাম ৮০ হাজার

পঞ্জিকা অনুযায়ী আজকে (১৫ ফেব্রুয়ারি) মাঘ মাসের শেষ বুধবার। প্রায় চারশো বছরের গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বগুড়ায় প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী ‘পোড়াদহ’ মেলা।

এবার বগুড়ার বিখ্যাত পোড়াদহ মেলা মানেই বিশাল আকৃতির, বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মেলা। প্রতিবছর এ মেলা কেন্দ্র করে জমে ওঠে মাছের বাজার। প্রতিবছর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় প্রধান আকর্ষণ হয়ে থাকে বড় আকৃতির বাঘাইড় মাছ। তবে গেল বছর মহাবিপন্ন বাঘাইড় মাছ প্রদর্শন ও বিক্রি বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিঠি দেয় বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।

চিঠিতে বলা হয়- বাঘাইড় মাছ একটি মহাবিপন্ন প্রাণী। তাই পোড়াদহ মেলায় মহাবিপন্ন বাঘাইড় কেনা-বেচা বন্ধ করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হলো। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন- ২০০২ অনুযায়ী মেলায় মহাবিপন্ন বাঘাইড় কেনা-বেচা করা হলে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

এদিকে মেলার প্রথম দিনেই সবার নজর কেড়েছে এক মণ (৪০ কেজি) ওজনের বিশাল এক ব্ল্যাক কার্প। যেটির দাম হাঁকা হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। সজীব হাসান নামে একজন ক্রেতা মাছটি ৪৮ হাজার টাকা দাম বললেও দিতে রাজি হননি বিক্রেতা মো. বজলুর রহমান।

অপরদিকে ২৪ কেজি ওজনের আরেকটি ব্ল্যাক কার্পের দাম হাঁকা হয়েছে ২৪ হাজার টাকা। মাছটি কিনতে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকিয়েছেন আবু সাঈদ নামে এক ক্রেতা। বিক্রেতা জহুরুল ইসলাম ২২ হাজার টাকার কমে মাছটি বিক্রি করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় এসে দেখা মেলে বড় বড় এসব মাছ।

সরেজমিনে দেখা যায়, পোড়াদহ মেলা প্রাঙ্গণে কয়েকশো খুচরা মাছ বিক্রেতা এসেছেন। সারিবদ্ধভাবে এসব ব্যবসায়ী দোকান বসিয়েছেন। দোকানে মাঝারি, ছোট বিভিন্ন জাতের মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন তারা। মেলার পূর্বপ্রান্তে উত্তর-দক্ষিণে লম্বালম্বিভাবে বসেছেন একাধিক দোকানি। তাদেরই একজন মো. বজলুর রহমান। তিনি নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার মোহমায়া গ্রাম থেকে ব্ল্যাক কার্প মাছ এ মেলায় বিক্রি করতে এনেছেন। বিশাল আকারের এ মাছটি দেখতে সকাল থেকেই ভিড় করছেন ক্রেতারা ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা। ক্যামেরায় মাছের ছবি ধারণ করছেন তারা। জহুরুল ইসলামের দোকানে গিয়েও দেখা যায় একই দৃশ্য।

বিক্রেতা বজলুর রহমান জানান, গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের ঈদগাহ মাঠ এলাকার বাসিন্দা তিনি ৷ তিনি প্রতিবছর এ মেলায় বড় বড় মাছ নিয়ে আসেন। এখানে বড় আকারের মাছ বেশি বিক্রি হয়। ক্রেতারা দামাদামি করলেও তারা বড় আকারের মাছ কিনতেই বেশি পছন্দ করেন। তাই এবারও তিনি বিভিন্ন জাতের বড় মাছ এ মেলায় উঠিয়েছেন। এরমধ্যে ব্ল্যাক কার্প মাছটি এ মেলার সবচেয়ে বড় মাছ।

তিনি জানান, ২ হাজার টাকা কেজি হিসেবে মাছটির দাম হাঁকিয়েছেন ৮০ হাজার টাকা। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বেশ কয়েকজন ক্রেতা মাছটি কিনতে দাম হাঁকিয়েছেন। এরমধ্যে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৪৮ হাজার টাকা দাম বলেছেন।

রুবেল মিয়া, মুকিদ হাসান, কবির হোসেনসহ একাধিক মাছ বিক্রেতা জানান, ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় রুই, কাতলা, মৃগেল, গাঙচিল, চিতল, বোয়াল, হাঙড়ি, গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, বিগহেড, কালিবাউশ, পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাঝারি ও বড় আকারের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এসব মাছ ওজনে ৫ থেকে ২৫ কেজি পর্যন্ত।

তারা জানান, প্রতিকেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৫০০ টাকা, কাতলা ৩৫০-৬০০, মৃগেল ২৫০-৩০০, গাঙচিল ৩০০, চিতল ৩০০-৫৫০, বোয়াল ৬০০-১২০০, হাঙড়ি ২০০-৪০০, গ্রাসকার্প ২৫০-৩৫০, সিলভার কার্প ৩০০-৩৫০, বিগহেড ২৫০-৪০০, কালিবাউশ ২৫০-৪০০, পাঙ্গাস ১৫০-৪০০ টাকা।

মেলায় আসা আহম্মেদ খাজা, ইসতিয়াক হোসেন, তোজাম্মেল খানসহ কয়েকজন ব্যক্তি জানান, পোড়াদহ মেলা বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। প্রতিবছর আমরা এ মেলায় মাছ কিনতে আসি। এবারও এসেছি। মেলায় বিগত বছরে বড় বড় মাছ উঠতো। এবারের মেলায় তুলনায় বড় মাছ উঠেনি। তারা মেলায় ঘুরে সামর্থ্য অনুযায়ী মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরবেন বলেও মন্তব্য করেন।

তাদের মধ্যে আহম্মেদ খাজা ১৩ কেজি ওজনের একটি বিগহেড মাছ কিনেছেন। তিনি জানান, পরিবার নিয়ে আত্মীয়ের বাড়ি এসেছেন তিনি। মেলায় এসে মাছের দরদাম করছেন। কয়েকটা মাছের দোকান ঘুরেই পছন্দমত একটা বিগহেড মাছ কিনেছেন।

স্থানীয় ও মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, অনেক মাছচাষি কেবল মেলায় অধিক লাভে বড় মাছ বিক্রয়ের জন্য মাছ বড় করেন। মেলায় বিক্রয়ের জন্য বেশ আগে থেকেই নদী থেকে বাঘাইর, আইড় ইত্যাদি মাছ ধরে পুকুরে বা জলাশয়ে বেঁধে রাখা হয়। মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামগঞ্জের সবাই তাদের মেয়ে, জামাইসহ আত্মীয়-স্বজনদের নিমন্ত্রণ করেন। অতিথিদের বড় আকৃতির মাছ, মিষ্টি দ্বারা আপ্যায়ন করেন।

মেলা আগের স্থানে পরিবর্তন হওয়ায় বড় আকারে মেলাটি হচ্ছে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার মাছও বেশি বলে মন্তব্য করেন মেলার মাছ কিনতে আসা অনেক ক্রেতা। অর্থনৈতিকভাবেও এই মেলার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতি বছর এ মেলায় কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়। লেনদেনের বড় অংশ উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্তগামী হওয়ায় এর গুরুত্ব আরও অনেক বেশি।

Related Articles

Back to top button