দৈনিক খবর

যে গ্রাম সবজি উৎপাদনে বদলেছে

বলা হয় এ গ্রামের ঘরের নববধূরা সবজি রান্না দিয়েই শুরু করেন সংসার জীবন। আর নতুন বর সবজির জমি ঘুরেই শ্বশুরবাড়ির স্বাদ উপভোগ করেন। এটি হচ্ছে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার মুগুজি গ্রাম। ঐতিহ্যবাহী সবজির এই গ্রাম ঘুরে জানা গেছে বিচিত্র তথ্য। গত দুই থেকে তিন বছর আগেও এই গ্রামের সবজির জমিতে সবজি ঠিকই আসতো কিন্তু কৃষকের হতাশার আর্তনাদ টাটকা সবজিকে মলিন করে দিত। এখন সব হতাশা কাটিয়ে দুইটি ফাঁদ ব্যবহার করে সেই গ্রামের সবজি এখন রফতানি হবে বিদেশেও। গ্রামের পথে প্রান্তরে টাটকা গন্ধ। মাঠে মাঠে সবুজ সবজি। চুলায় তাজা সবজির রান্না। আর বাতাসে সবজির টাটকা গন্ধ।

পূর্বে সবজি চাষের জন্য এই এলাকার কৃষকরা সবজির জমিতে ১০বার কীটনা’শক ও সার দিতেন। এতে খরচ বাড়তি হতো কয়েকগুণ। নষ্ট হয়ে যেতো সবজি। আর দাম কমে ব্যয়ের সমান হয়ে যেত। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য কৃষকরা সম্মিলিতভাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতকে জানায়। পরে কৃষি কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেন মুগুজিসহ আশপাশের এলাকার সবজির মাঠ। তারা কীটনাশকের পরিবর্তে পোকামাকড় মারার ফাঁদ ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

পরে দুটি ফাঁদ ব্যবহার করেন কৃষকরা। এর একটি হচ্ছে স্টিকি ট্র্যাপ ও অপরটি সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ। এই ফাঁদগুলোর কোনটি প্লাস্টিকের পটের মতো কোনটি কাগজের ওপর আঠা যুক্ত। এই ফাঁদ ব্যবহারের পর থেকে এই এলাকার কৃষিতে বিপ্লব এসেছে অন্যরকম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, যদি এই ফাঁদগুলোর ব্যবহার সঠিক ও সফলভাবে ছড়িয়ে দেয়া যায় তবে শুধু বরুড়া নয় সারাদেশে সবজির ফলনে নতুন মাত্রা আসবে। অনেকেই বলছেন, বিষমুক্ত ও সতেজ সবজি বিদেশে রফতানি করতেও প্রস্তাব আসছে।

মুগুজি ব্লকের উপসহকারী কৃষিবিদ মনিরুজ্জামান বলেন, সে’ক্স ফেরোমেন ফাঁদে প্লাস্টিক পাত্রের (পটের) মুখ থেকে সে’ক্স ফেরোমন টোপটি একটি সরু তার দিয়ে এমনভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়। সেটি পানি থেকে মাত্র ২-৩ সেমি. ওপরে থাকে। সেই সেক্স ফেরোমনের গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে পুরুষ মাছি/পোকা প্লাস্টিক পাত্রের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ও সাবান পানিতে পড়ে আটকে যায় এবং পরে মারা পড়ে।

ইয়েলো স্টিকি ট্র্যাপ বা হলুদ ফাঁদ হচ্ছে পুরোপুরি পরিবেশ বান্ধব। সাদা মাছি ও শোষক পোকা হলুদ রঙে আকৃষ্ট হয়। হলুদ আঠালো ফাঁদ আটকে ক্ষতিকর পোকাগুলোকে মারা হয়। সবজি চাষের প্রতি বিঘা জমিতে ২৫-৩০টি হলুদ আঠালো ফাঁদ লাগালেই হয়।

স্থানীয় কৃষক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, মুগুজি গ্রামের মাঠে নানান ধরনের সবজির চাষ হচ্ছে। তবে শুধু নিরাপদ শসা চাষ হচ্ছে ৬ কোটি টাকার। আগামী পনের দিনের মধ্যে এই গ্রামের শসা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে মধ্য প্রাচ্যের দেশ দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হবে। গেলো বছর এই মাঠে সাড়ে চার কোটি টাকার শসা বিক্রি হয়।

কৃষক আমীর হোসেন বলেন, শসা চাষে ২০ শতকে খরচ হয়েছে এক লাখ টাকা আর বিক্রি হবে তিন লাখ টাকায়। বি’ষমুক্ত উপায়ে চাষ করায় ক্রেতাদের চাহিদা বেড়ে গেছে। আগে ১০বার সার আর ও’ষুধ দিতে হতো। এখন আর তা নেই।

Related Articles

Back to top button