দৈনিক খবর

দিনে হিজড়া রাতে পুরুষ, আছে স্ত্রী ও সন্তান

যাত্রাবাড়ীর সোহাগ মিয়া ওরফে স্বজন ওরফে কাজল (৩২)। মূলত একজন পুরুষ। কিন্তু হিজড়া সেজে গত কয়েক বছর থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে চাঁদা ও তাদের ফাঁদে ফেলে মুক্তিপণ আদায় করে আসছিলেন। তার এই কাজে সহায়তার জন্য রয়েছে ছয়জনের একটি টিম।

কাজলকে দিনের বেলায় সবাই তাকে হিজড়া বলে চিনে। দাপিয়ে বেড়ান পুরো রাজধানী। তার সঙ্গে থাকে দলের সদস্যরা। তার কাজই হচ্ছে সহজ-সরল কোনো ব্যক্তি বা যুবককে দেখলেই তাকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়। কিন্তু রাত হলেই তিনি আবার বদলে যান। তার পরিচয় তখন দিব্যি একজন সংসারী। সেখানে আছে স্ত্রী ও সন্তান।

কাজল এমন কাজ করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তা অজানাই ছিল। কিন্তু সম্প্রতি এক কলেজছাত্রকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করলে তাদের গোমর ফাঁস হয়ে যায়। সেই কথিত হিজড়া কাজলসহ তার ছয় সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে ডিবি।

শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে ডিবির ওয়ারী টিমের সদস্যরা। এই চক্রের মূল হোতা সজনী বা সোহাগের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়।

ডিবি বলছে, কাজল দুই সন্তানের জনক। তৃতীয় লিঙ্গের বেশ ধারণ করে শুধু চাঁদাবাজি নয়, অপহরণ করতেন তিনি। এরপর ভুক্তভোগীকে আটকে রেখে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন কাজল ও তার টিমের সদস্যরা। তার টিমের সাত থেকে আটজন রয়েছে। যাদের সবাই পুরুষ। কিন্তু তারা নিজেদের হিজড়া বলে দাবি করে চাঁদাবাজি করে বেড়াতেন। এছাড়াও তারা চাঁদাবাজিসহ মানুষকে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন।

শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ওয়ারী ডিবির ডিসি মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, সজনি হিজড়া তার মতো আরও সাত থেকে আটজনকে নিয়ে তৈরি করেন নকল হিজড়া গ্রুপ। রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, দোকানপাট থেকে শুরু করে যেখানে-সেখানে টাকার জন্য মানুষকে নাজেহাল করেন তারা।

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গত ২৩ জানুয়ারি বিকেলে ঢাকার একটি কলেজের এক ছাত্রকে একা পেয়ে কাজল নারী সেজে তাকে জিম্মি করে মেসে নিয়ে যান। এরপর তাকে উলঙ্গ করে এক নারী পতিতার সাথে ছবি তোলেন। এরপর তার কাছ থেকে দেড় লাখেরও বেশি টাকা আদায় করে ছেড়ে দেন। পরে তার কাছে থেকে আরও টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন এই কাজল বা সজনী হিজড়া। এ ঘটনায় ৯ ফেব্রুয়ারি যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর ভাই। সেই মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, সোহাগের পরিবার, বাচ্চা রয়েছে। হিজড়াদের সমস্ত আচরণ সে রপ্ত করেছে। আসলে সে প্রতারক, ক্ষেত্র বিশেষে সে ছিনতাইকারী। নির্জন জায়গায় সর্বস্ব কেড়ে নেয় সে। আর কারও সর্বস্ব কেড়ে নিতে না পারলে তখন ওই ব্যক্তিকে তার চক্রের সদস্যদের দিয়ে মেসে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এরপর মোবাইলে নানা ছবি তুলে টাকা হাতিয়ে নেয়।

পুলিশ জানিয়েছে, হাতিয়ে নেয়া এসব টাকা দিয়ে কাজল হিজড়া পরবর্তীতে সুদের কারবার করে। কেউ টাকা ফেরত দিতে না পারলে তার চক্রে যোগ দিতে বলে।

এদিকে, তৃতীয় লিঙ্গের যারা মানুষ, তারাও মাঝে মধ্যে অভিযোগ করেছেন, রাস্তায় অনেক ভুয়া হিজড়া চাঁদাবাজি করছে।

Related Articles

Back to top button