দৈনিক খবর

একসঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে মা পাশ করলেও ফেল করলো মেয়ে

এবার নীলফামারীর ডিমলায় মেয়ের সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন মা মারুফ আক্তার। তবে ফেল করেছেন মেয়ে শাহী সিদ্দিকা। জানা যায়, চলতি বছর মারুফা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব সরকারি মহাবিদ্যালয় থেকে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪.৩৮ পেয়েছেন। আর তার মেয়ে একই কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অকৃতকার্য হয়েছেন। আজ বুধবার ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রকাশিত ফলাফলে এই তথ্য জানা গেছে।

এর দুই বছর আগে, এসএসসি পরীক্ষায় একসঙ্গে অংশ নিয়ে মেয়ের চেয়ে ভালো ফলাফল করেন মারুফা। তিনি এসএসসিতে জিপিএ-৪.৬০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন এবং তার মেয়ে শাহী সিদ্দিকা পেয়েছিল জিপিএ-৩। মারুফা আক্তার নীলফামারী জেলার ডিমলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের পুন্যারঝার গ্রামে সাইদুল ইসলামের স্ত্রী। তার স্বামী পেশায় একজন মাছ ব্যবসায়ী। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে মেয়ে শাহী সিদ্দিকা বড়।

দ্বিতীয় ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী, তৃতীয় মেয়ে নবম শ্রেণি ও ছোট মেয়ে ৬ষ্ট শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে দশম শ্রেণিতে উঠলে মারুফাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনা। পরবর্তীতে চার ছেলে-মেয়েকে মানুষ করতে চলে যায় ১৫ বছর। তবে দীর্ঘ সময় পরেও মারুফার লেখাপড়ার ইচ্ছে কমেনি। স্বামীর উৎসাহে মেয়ের সঙ্গে পুনরায় ছোটখাতা ফাজিল মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ২০২০ সালে মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন। এমনকি মেয়ের চেয়ে ভালো ফলাফল করেন।

মারুফা আক্তার বলেন, ‘ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। অভাবের সংসারে বড় হয়েছি। ২০০৩ সালে যখন এসএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু পরীক্ষার আগেই বিয়ে দিয়ে দেন বাবা-মা। ইচ্ছে থাকলেও প্রতিবাদ করে পড়াশোনাটা করতে পারিনি। তবে পড়াশুনার তাড়নায় মনে দাগ কেটেছে সব সময়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিয়ের পর চার ছেলে-মেয়েকে মানুষ করতে গিয়ে নিজের পড়ার কথা ভাবার সময়ই হয়নি। পরে নিজের অদম্য ইচ্ছা ও স্বামী-সন্তানদের অনুপ্রেরণায় পুনরায় পড়াশোনা শুরু করি। সমাজের আর দশটা মানুষের মতো আমিও একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে যাতে নিজের পরিচয় দিতে পারি। এজন্য কষ্ট করে পড়াশোনাটা আবার শুরু করেছি। এইচএসসি পাশ করে কষ্ট সার্থক হয়েছে।’

মারুফা আরো বলেন, ‘মেয়ের ফলাফল কিছুটা খারাপ হওয়ায় সবার মন খারাপ হলেও আমার ফলাফলে সবাই খুশি। এবার ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাই। ভর্তি যুদ্ধে সফল হতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিব।’ মারুফা আক্তারের স্বামী সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তার ইচ্ছার মর্যাদা দিয়েছি। সে যতদূর পড়াশোনা করতে চায়, আমি চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করব। তার এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই। মা ও মেয়ে একসঙ্গে পাশ করলে আরো ভালো লাগত।’

এ বিষয়ে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘চরম দারিদ্র্যতার মাঝেও প্রত্যন্ত গ্রামের মারুফা এইচএসসিতে শুধু পাসই করেনি, ভালো ফলাফল অর্জন করেছেন। তার বিষয়টি আসলে অবাক লাগার মতো। বিষয়টি অনেককে অনুপ্রেরণা জোগাবে। উচ্চতর শিক্ষায় লেখাপড়ার সুযোগ পেলে তার পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে। আমি চাই তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করুক।’

এদিকে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘মা মারুফা একজন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মানুষের ইচ্ছাশক্তি থাকলে লেখাপড়ায় বয়স কোনো বাধা নয় তিনি সেটা প্রমাণ করেছেন। মারুফা আক্তারের এমন উদ্যোগ অনেককে অনুপ্রাণিত করবে। আমরা তার সাফল্য কামনা করি।’

Related Articles

Back to top button