দৈনিক খবর

দুই রাকাত নামাজ পড়ার জন্য ২০৬ কিমি পথ পাড়ি দেন বৃদ্ধ

সাইকেল চালিয়ে ২০৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ২ রাকাত জুম্মার নামাজ আদায়ে উদ্দেশ্যে মাগুড়া জেলা থেকে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর সদরের আল আমান বাহেলা খাতুন জামে এসেছেন ৮০ বছরের বৃদ্ধ আবুল হোসেন। টানা ৬৪ ঘণ্টা সাইকেল চালিয়েছেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে থেকে ওই বৃদ্ধকে দেখতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা বয়সী মানুষ ভিড় করছে তরুণরা সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়েছে নেট দুনিয়ায়।

বুধবার আসরের নামাজের পূর্বে তিনি মসজিদে এসে পৌছাঁন। এসময় উপস্থিত ইমাম, মুয়াজ্জিন ও স্থানীয় মুসল্লিরা তাকে স্বাগতম জানান। জানা যায়, মাগুড়া জেলার আঠারোখাদা গ্রামের আবুল হোসেন শেখ গত দুই সপ্তাহ আগে নান্দনিক কারুকার্য সম্পন্ন ও দৃষ্টিনন্দন আল আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদের ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখে তিনি সিদ্ধান্ত নেন এই মসজিদে এসে জুম্মার নামাজ আদায় করবেন। সেই সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে গত সোমবার ফজরের নামাজ আদায় শেষে মগুড়া থেকে সাইকেল চালিয়ে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি এসে পৌঁছান। ব্যক্তি জীবনে বৃদ্ধ আবুল হোসেনের স্ত্রী, ৪টি পুত্র সন্তান ও ৫ কন্যা সন্তান রয়েছে।

আবুল হোসেন শেখের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ফেসবুকে এই মসজিদের ভিডিও দেখি। দেখার পর থেকে মসজিদটা স্ব চোখে দেখার ও জুম্মার নামাজ আদায় করতে ইচ্ছে হয়। ঐ ইচ্ছে পূরণের জন্য গত সোমবার ফজর পড়ে সাইকেল নিয়ে বের হই। আল্লাহ তায়া সহিসালামতে বুধবার আসরের সময় পৌঁছে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, এখন সুস্থ আছি। রাস্তায় দুদিন কেটেছে, রাত যাপন করেছি। এখানের আসার পর সবাই আমাকে অনেক সমাদর করছেন। আল্লাহ চাইলে শুক্রবার জুম্মার নামাজ আদায় করে বাড়ির উদ্দশ্যে আবারও সাইকেল চালিয়ে যাত্রা করবো। তবে জীবনের শেষ ইচ্ছে বায়তুল্লাহ জিয়ারতে যাওয়ার। সেটা তো আর সাইকেল নিয়ে যাওয়া যাবে না।

মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বেলকুচি পৌর ভবনের দক্ষিণে আড়াই বিঘা জমিতে ছেলে আল-আমান ও মা বাহেলা খাতুনের নামে ‘আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ’ কমপ্লেক্স নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেন উপজেলার মুকুন্দগাঁতী গ্রামের শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী সরকার। তিনি নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করে নয়নাভিরাম এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটি নির্মাণে প্রায় চার বছর সময় লেগেছে। শুরু থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৫ শ্রমিক কাজ করেছেন।

মসজিদের খাদেম আব্দুল মান্নান বলেন, এ মসজিদে ছাই রঙের বিশাল আকারের মনোরম একটি গম্বুজ রয়েছে। এছাড়া মেঝেতে সাদা রঙের ঝকঝকে টাইলস ও পিলারে মার্বেল পাথর জড়ানো। তৃতীয় তলায় গম্বুজের সঙ্গে লাগানো ছাড়াও অন্যান্য স্থানে চীন থেকে আনা বেশ কয়েকটি আলো ঝলমল ঝাড়বাতি লাগানো হয়েছে। দুই পাশে নির্মাণাধীন ১১ তলা সমতুল্য (১১০ ফুট) উচ্চতার মিনার থেকে আজানের ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ছে। এ মসজিদটিতে একসঙ্গে প্রায় পাঁচ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।

রহমত গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার এ মসজিদটি নির্মাণ করেছেন। মানবিক এ শিল্পপতি গত বছরের আগস্ট মাসে মারা যান। এরপর তার পরিবারের চেষ্টায় শেষ হয় মসজিদের কাজ।

Related Articles

Back to top button