দৈনিক খবর

ফিলিপিনে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি বাংলাদেশি টাকায় সাড়ে তেরশো টাকা

“কোন পেঁয়াজের টপিং নেই। প্রতিটি রেস্তোরাঁ পেঁয়াজের কমতি দেখছে। আপনি সব জায়গাতেই এটাই দেখতে পাবেন”। আনুষ্ঠানিক তথ্য অনুযায়ী, ফিলিপিনে গতমাসে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে ৭০০ পেসো ছুঁয়েছে, বাংলাদেশি টাকায় যার দাম সাড়ে তেরশো টাকারও বেশি।

মাংসের চেয়ে এই দামতো বেশিই, বরং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির দৈনিক নূন্যতম মজুরির চেয়েও এর দাম বেশি। সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে দাম কিছুটা কমে এলেও অনেক ক্রেতার জন্যই পেঁয়াজ এখনো বিলাসিতা বলে মনে করেন রিজালডা মাউনস, যিনি সিবু শহরের একটি পিজার দোকান চালান।

“আমরা আগে প্রতিদিন তিন থেকে চার কেজি পেঁয়াজ কিনতাম। এখন আমাদের দিনে আধা কেজি কেনার সামর্থ্য আছে”, বিবিসিকে বলছিলেন মিজ মাউনস।

ব্যাপক প্রভাব

সেবুর রাস্তায় স্থানীয় এবং পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় খাবারেরও দাম বেড়েছে। ভাজা শাকসবজি, মাংস এবং সামুদ্রিক খাবার মূলত সাধারণত পেঁয়াজ এবং ভিনেগার ডিপিং সস দিয়ে পরিবেশন করা হয়।

“পেঁয়াজ আমাদের খাবারের একটি প্রধান অংশ। এটি আমাদের খাবারের নোনতা স্বাদের বিপরীতে একটি মিষ্টি স্বাদ যোগ করে,” বলেন অ্যালেক্স সুয়া, যিনি নিজেও দোকানে পেঁয়াজের ব্যবহার কমিয়েছেন।

” সরকার মূল্যবৃদ্ধি রোধে পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করছে বলে আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা আশা করি যে তারা দাম আরও কমানোর জন্য এই ধরনের পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখবে,” যোগ করেন তিনি।

পেঁয়াজের চাহিদা এত বেড়েছে যে এপ্রিল লাইকা বিয়োরে নামে এক যুবতী ইলোইলো শহরে আয়োজিত তার বিয়েতে হাতে নেয়ার জন্য পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি তোড়া বেছে নিয়েছিলেন।

“আমি আমার বরকে জিজ্ঞেস করেছি যে আমরা ফুলের পরিবর্তে পেঁয়াজ ব্যবহার করতে পারি কি না, কেননা বিয়ের পরে ফুলগুলো শুকিয়ে যাবে আর শেষ পর্যন্ত তা ফেলে দেওয়া হবে,” একটি স্থানীয় সংবাদপত্রকে জানান মিসেস বিয়ারে।

তিনি ঠাট্টার সুরে বলেন, “তাহলে পেঁয়াজই কেন না? তাছাড়া এটি যৌক্তিকও, কারণ বিয়ের পরেও এটি ব্যবহার করা যেতে পারে”। দেশটিতে পেঁয়াজ পাচারের কারণে অন্যরা সমস্যায় পড়েছেন।

এই মাসের শুরুতে, ফিলিপিন এয়ারলাইন্সের ১০ জন ক্রু সদস্যকে লাগেজে করে প্রায় ৪০ কেজি পেঁয়াজ এবং ফল পাচারের অভিযোগে তদন্তের আওতায় আনা হয়। শুল্ক কর্মকর্তারা পরে বলেছিলেন যে তারা কোন অভিযোগের মুখোমুখি হবেন না। তবে অনুমতি ছাড়া পণ্য বহনে যাত্রীদের সতর্ক করেছিলেন।

ক্রমবর্ধমান সংকট

কৃষি সচিব হিসাবে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া মিঃ মার্কোসের উপর এই সংকট চাপ সৃষ্টি করেছে। কিছু সংসদ সদস্য তাকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ফিলিপিনের ক্রমবর্ধমান খাদ্যমূল্য নিয়ে শুনানিতে বক্তৃতা দিতে গিয়ে ফিলিপিনের সিনেটর গ্রেস পো বলেন, “আগে চিনি ছিল, এখন পেঁয়াজ। রান্নাঘরের সবকিছু নিয়েই মনে হচ্ছে আমাদের শুনানি করতে হবে”।

ক্যান্টার ওয়ার্ল্ডপ্যানেল কনসালটেন্সির মেরি-অ্যান লেজোরাইন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনও দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বড় হু’মকি৷

“অধিকাংশ ভোক্তাদের জন্য ক্রয় ক্ষমতা সীমিত হয়েছে, যাদের এমনিতেই শুধুমাত্র অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাইরে কেনার ক্ষমতা নেই। যদি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘাটতি দেখা দেয় এবং এর ফলে দাম বেড়ে যায়, তাহলে এটি ফিলিপাইনের ভোক্তাদের একটি বড় অংশের উপর খুব ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে,” বলেন মিসেস লেজোরাইন। কিন্তু মিঃ মাপা বিশ্বাস করেন যে সরকার আরো আমদানি করায় পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল হতে পারে।

“তবে সময়টি দুর্ভাগ্যজনক হতে পারে, কেননা ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পেঁয়াজের সঙ্গে ফসল কাটার মৌসুমের মিলে যায়”। “ফসল সংগ্রহ এবং আমদানি করা পণ্য- দুটোই প্রায় একই সঙ্গে বাজারে এলে দাম নাটকীয়ভাবে কমে যেতে পারে।”

সূত্র: বিবিসি বাংলা।

Related Articles

Back to top button