সৌরভকে হুঁশিয়ারি দিয়ে যা বলেছিলেন পারভেজ মোশাররফ
২০০৪ সালে সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বে পাকিস্তান সফরে গিয়েছিল ভারতীয় দল। সেই সফরে ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিসদের ভ’য়’ঙ্কর ইন-কাটারের সম্মুখীন হতে হয়েছিল ভারতীয় দলকে। তার থেকেও কঠিন ছিল সেইবারের পাকিস্তান সফরে যাওয়া।
নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনিতে মুড়ে রেখেছিল পারভেজ মোশারফের সরকার। সৌরভ তার আত্মজীবনীতে সেই সফরের কাহিনী তুলে ধরেছেন। লিখেছেন আকরামের ইন-কাটার সামলানো ২০০৪ সালে পাকিস্তান সফরে যাওয়ার থেকে অনেক সহজ ছিল। একদিন মাঝরাতে পাকিস্তানের বিখ্যাত গাওয়ালমান্ডিতে কাবাব ও তন্দুরি খাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন সৌরভ।
প্রয়াত পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রপতি পারভেজ মোশাররফ হুঁশিয়ারি দিয়ে সৌরভকে বলেছিলেন, ‘মাঝরাতে অ্যাডভেঞ্চারের ইচ্ছে দমন কর।’ সেই সফরে ভারতীয় দল লাহোরে ছিল পার্ক কন্টিনেন্টাল হোটেলে। সেই সময় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন পারভেজ মোশাররফ।
ভারতীয় ক্রিকেট দলকে নিরাপত্তার এমন বজ্র আঁটুনিতে বেঁধে রেখেছিলেন পারভেজ মোশারফ, পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার শামিল হয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়দের। নিরাপত্তার সেই বজ্র আঁটুনি সত্ত্বেও ভারতীয় দলের বেশ কয়েকজন সদস্য পরিকল্পনা করেছিলেন লাহোরের বিখ্যাত ফুড স্ট্রিট এলাকা গাওয়ালমান্ডিতে কাবাব এবং তন্দুরি খেতে যাবেন।
পারভেজ মোশাররফের জন্য আর সেই পরিকল্পনা প্রায় বাতিল হতে বসেছিল ভারতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যদের। সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন সৌরভ। আত্মজীবনীতে সৌরভ আরও লিখেছেন, ‘আমাদের দায়িত্বে থাকার নিরাপত্তা অফিসারকে যাওয়ার কথা জানাইনি। কারণ জানতাম তিনি আমাদের ওখানে যাওয়া আটকে দেবেন।’
দাদা লেখেন, ‘শুধুমাত্র আমাদের দলের ম্যানেজার রত্নাকর শেট্টিকে বিষয়টা জানিয়েছিলাম। আমি একটা টুপি পরেছিলাম যাতে আমার মুখ না দেখা যায়। ওই টুপি পরে পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। জানতাম আমি নিয়ম ভাঙছি তবুও আমার মনে হয়েছিল আমি রাইফেল এবং ট্যাঙ্কের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি।’
মুখ ঢাকা টুপি পরেও ভক্তদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারেননি সৌরভ। গাওয়ালমান্ডিতে পৌঁছতেই সৌরভকে চিনে ফেলেন একজন। তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি সৌরভ গাঙ্গুলী না?’ তখন সৌরভ অনেকটা নিচু স্বরে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘না।’ তখন সেই ভক্তটি বলেছিল, ‘আপনাকে পুরো সৌরভ গাঙ্গুলীর মতোই মনে হচ্ছে।’
তখন হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছিলেন বিখ্যাত সাংবাদিক রাজদীপ সরদেশাই। তিনি সৌরভকে দেখেই চিৎকার করে উঠেছিলেন, ‘সৌরভ, সৌরভ।’ এই প্রসঙ্গে সৌরভ বলেন, ‘আমি জানতাম, আমি সমস্যায় পড়ব।’ এর পরের ঘটনা উল্লেখ করেছেন তিনি।
সৌরভ বলেন, ‘তারপর আমাকে ঘিরে আস্তে আস্তে ভিড় বাড়তে শুরু করল। সেই ভিড়ের মাঝেই যখন আমি খাবারের দাম দিতে গেলাম, তখন দোকানদার খাবারের দাম নিতে অস্বীকার করেন। তারপর আমাকে বলে, আপনার মতো একজন আগ্রাসী অধিনায়ক পাকিস্তানের দরকার ছিল।’