দৈনিক খবর

অটোরিকশার ঘানি টানা

দৈনন্দিন জীবনে আমরা জানি, সরিষার দানা পিষে তেল-খৈল বের হয়। গ্রামাঞ্চলে হরহামেশাই চোখে পড়ত গরু দিয়ে ঘানি টানা। এখন আগের মতো গরু নয়। তেলের ঘানি টানছে ব্যাটারিচালিত তিন চাকার অটোরিকশা।

মানুষ ছাড়াই অনবরত ঘুরছে। ঘোরাচ্ছে ঘানি। সরিষার দানা পিষে তেল-খৈল বের হচ্ছে। ফলে কমেছে ঝক্কি আর ব্যয়। বেড়েছে উৎপাদন-মুনাফা। অটোরিকশা মেরামতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এনামুল হক নামের এক মেকানিক এই ঘানি টানার অটোরিকশা তৈরি করেছেন।

কুড়িগ্রাম জেলা শহর লাগোয়া সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের ত্রিমোহনী বাজারসংলগ্ন কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কের পাশে পশ্চিম দিকে মেকানিক এনামুল হকের অটোরিকশা মেরামতের ওয়ার্কশপ। তাঁর ওয়ার্কশপ ঘেঁষে মাহবুব আলমের মনিহারি মালপত্রের দোকান। দোকানের সামনে তাঁর তেল মাড়াইয়ের ঘানি।

মাহবুব আলম জানান, তাঁরা ঘানি দিয়ে মাড়াই করা সরিষার তেল বিক্রির পেশা বংশপরম্পরায় করে আসছেন; কিন্তু ঘানি টানার গরু পালনের ঝক্কি-ব্যয় আর সীমিত পরিমাণ উৎপাদনের কারণে কোনো রকমে সংসার চালাতে হতো।

এ অবস্থায় তাঁর দোকান লাগোয়া অটোরিকশা মেরামতের মেকানিক ঘানি ঘোরানোর জন্য অটোরিকশাটি তৈরি করে দেওয়ায় পাল্টে গেছে আগেকার চালচিত্র। উৎপাদন বেড়েছে। লাভ বেড়েছে। তবে সরিষার দাম বাড়ায় বর্তমানে লাভ কিছুটা কম।

তিনি আরও জানান, এখন প্রতিদিন ৩০ কেজি সরিষা মাড়াই করা হচ্ছে। সরিষার দাম, একজন মজুরের মজুরি, ব্যাটারি চার্জ ও অন্যান্য খরচ বাদ দিলে তেল-খৈল মিলিয়ে মুনাফা থাকছে ৮০০ টাকা।

ভোক্তা মুক্তারাম এলাকার ফাতেমা বেগম, আমিনুর রহমান এবং রাজারহাটের মোতালেব হোসেন জানান, এই ঘানির উৎপাদিত তেলের মান আগের মতোই আছে। এ ছাড়া স্বাদ, গন্ধ, ঝাঁজ সব একই রকম। অটোরিকশা মেকানিক এনামুল হক জানান, তাঁর ওয়ার্কশপের পাশে তেলের ঘানি গরু টানত। এটা দেখে গরু ছাড়া অটোরিকশা দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘানি টানার বিষয়টি মাথায় আসে।

এরপর পুরোনো অটোরিকশার ফ্রেম, চাকা, ব্যাটারি, মোটর ইত্যাদি যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে মাত্র ৭০ হাজার টাকা খরচ করে চলতি বছরের প্রথম দিকে ঘানি টানার অটোরিকশাটি বানিয়েছিলেন। এটির সফলতা দেখে আগ্রহী অনেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

ইতোমধ্যে কুড়িগ্রাম পৌরসভার পলাশবাড়ী ও গাড়িয়ালপাড়া, চিলমারী, লালমনিরহাট এবং রাজশাহীতে পাঁচটি ঘানি টানা অটোরিকশা বানিয়ে সরবরাহ করেছেন। এখন নতুন আরেকটি অটোরিকশা তৈরির কাজ করছেন।

এ প্রসঙ্গে জেলা বিসিক কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘শিখন পরিদর্শনের মাধ্যমে দেশীয় এই প্রযুক্তি ব্যবহারে ঘানি মালিকদের উৎসাহিত করার কার্যক্রম চলছে। এর ফলে এর ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।’

Related Articles

Back to top button