Nationalদৈনিক খবর

চার দিন ধরে সাড়া নেই আরাভ খানের, আইডি ঘেঁটে চার দিন আগের পোস্টে যা দেখা গেল

দুবাইয়ের সেই আলোচিত আরাভ খানকে নিয়ে আলোচনা থেমে নেই বিভিন্ন তথ্য উঠে আসছে তার বিরুধ্যে।পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের পরিদর্শক মামুন এমরানকে না ফেরার দেশে পাঠানোর মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরভ খান গ্রেপ্তারের আশঙ্কা সত্ত্বেও সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় ছিলেন। দুবাইতে পলাতক থাকা অবস্থায় ফেসবুকে একের পর এক পোস্ট দিতে থাকেন টাকার অহংকারে। কিন্তু গত চারদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।

ঢাকাটাইমস রোববার আরাভের ফেসবুক পেজে বেশ কয়েকটি কল ও মেসেজ পাঠালেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। নতুন কোনো পোস্ট দেখা যায়নি।

এর আগে, বিদেশ মন্ত্রক সূত্র জানায় যে গত শুক্রবার ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে রেড নোটিশ তালিকায় আরভের নাম প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে দুবাই পুলিশ আরভকে কড়া নজরদারিতে রেখেছে। তবে তাকে গ্রেফতারের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কূটনৈতিক মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

রোববার বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের ইন্টারপোল ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) ডেস্ক আরভকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি। ডেস্ক কর্মকর্তারা ঢাকাটাইমসকে বলেন, আরভের গ্রেপ্তারের কোনো তথ্য নেই।

পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মঞ্জুর রহমানও ঢাকাটাইমসকে একই কথা বলেন।

এর আগে শনিবার পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এক ইভেন্টে বলেন, “আরাভ খানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের কাছে তার গ্রেপ্তারের কোনো তথ্য নেই। তবে বাংলাদেশ পুলিশ নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। তাকে গ্রেফতার করতে দুবাই ও ইন্টারপোল।

এদিকে, আরাভ খানের ব্যবহৃত সোশ্যাল মিডিয়ার আইডিগুলো পাওয়া গেছে, গত চার দিন আগে দেশবাসীর কাছে ‘দোয়া চাই’ স্ট্যাটাস দিয়ে নীরব হয়ে যান আরাভ খান। এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় আর কোনো পোস্ট বা ভিডিও মেসেজ দেখা যায়নি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দুবাইয়ের একাধিক সূত্র বলছে, পুলিশ পরিদর্শক হত্যার আসামি গ্রেপ্তারের ভয়ে ‘গা ঢাকা’ দিয়েছেন। এ অবস্থায় ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় অরাভের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তার ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিল করে দেশে ফেরাতে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর কাজ করছে।

গত শুক্রবার ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে রেড নোটিশের তালিকায় রবিউল ইসলামের নাম উঠে আসে। বাংলাদেশের অনুরোধে এই নোটিশ জারি করা হয়েছে। এতে তার ছবি, লিঙ্গ, জন্মস্থান, জন্ম তারিখ, বয়স, জাতীয়তা এবং অভিযোগের তথ্য রয়েছে। ‘বাংলাদেশী’ জাতীয়তা হিসাবে লেখা হয়। তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। ইন্টারপোলের রেড নোটিশ তালিকায় এখন রবিউলসহ মোট ৬৩ বাংলাদেশির নাম রয়েছে। এই তালিকায় সর্বশেষ ব্যক্তি হলেন রবিউল ওরফে আরাভ খান।

দুবাই সূত্র বলছে, ইন্টারপোলের জারি করা রেড অ্যালার্টের কারণে আরাভ খান গ্রেপ্তারের হুমকিতে রয়েছেন। দুবাইয়ে তার সঠিক অবস্থান জানা যায়নি। আরভের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তিনি এখন বাড়িতেই অবস্থান করছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পলাতক আরভ খান সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে নজরদারিতে রয়েছেন।

পুলিশ জানায়, আরভ খানের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য বাংলাদেশ পুলিশ ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করেছিল। আবেদনে পুলিশ পরিদর্শক হত্যা মামলার চার্জশিটে দেওয়া একই নামে রেড নোটিশ জারির আবেদন করা হয়। পরে ইন্টারপোল তা গ্রহণ করে। তবে এই নোটিশের অর্থ গ্রেফতারি পরোয়ানা নয়। এছাড়াও, ইন্টারপোল কোন দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে বাধ্য করতে পারে না। এ অবস্থায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

রেড নোটিশ জারির পরেও আরভের ফিরে আসা নিয়ে অনেক শঙ্কা রয়েছে কারণ তিনি দুবাইয়ে আরও বেশ কয়েকজন পলাতক আসামিকে ফিরিয়ে আনতে সফলতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আরভের কাছে ভারতীয় পাসপোর্ট থাকায় তাকে কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায় তা নিয়েও আলোচনা চলছে। রবিউল আরাভ খানের ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিলের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এটা করা হলে তাকে দেশে ফেরানো সহজ হবে বলে মনে করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। কূটনৈতিক মাধ্যমেও যোগাযোগ চলছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৮ সালের ৮ জুলাই রাজধানীর বনানীর একটি ফ্ল্যাটে খুন হন পুলিশ পরিদর্শক মামুন। এ হত্যাকাণ্ডের পর রবিউল ভারতে পালিয়ে যায়। রবিউল ২০২০ সালে ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। তার ভারতীয় পাসপোর্ট নং ইউ ৪৯৮৫৩৮৯ । ওই বছরের ২৮ জুলাই কলকাতা থেকে ইস্যু করা পাসপোর্টে রবিউলের নাম উল্লেখ ছিল আরভ খান। এই পাসপোর্ট নিয়ে তিনি দুবাই যান। আয়ের দৃশ্যমান কোনো উৎস না থাকা সত্ত্বেও তিনি স্বর্ণের ব্যবসা শুরু করেন।

উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ দুবাইয়ে তার মালিকানাধীন ‘আরভ জুয়েলার্স’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ দেশের অনেক তারকাই এই আয়োজনে অংশ নেন। পরে জানা যায়, আরভ হত্যা মামলার আসামি।এর পর এই বিষয়টি নিয়ে সর্বত্র ওঠে আলোচনা সমালোচনা।

 

 

Related Articles

Back to top button