খেলাধুলাদৈনিক খবর

সৌম্যকে নিজের পথ নিজেকেই খুঁজতে হবে: নির্বাচক বাশার

এক সময় প্রবল সম্ভাবনা নিয়ে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন সৌম্য সরকার। একের পর এক ম্যাচে জেতানো পারফরম্যান্সে হয়ে উঠেছিলেন দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু সেই সৌম্য এখন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন প্রতিনিয়ত। যেখানেই খেলছেন, হচ্ছেন ব্যর্থ। কোথাও রান পাচ্ছেন না। এবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানের হয়ে খেলছেন সৌম্য, সেখানেও তার ব্যাটে রান নেই। আজ মঙ্গলবার ফতুল্লায় এনিয়ে নির্বাচক হাবিবুল বাশারের কণ্ঠ থেকে ঝরে পড়লো হতাশা।

আজ ফতুল্লায় মোহামেডানের হয়ে খেলতে নেমে করেছেন মাত্র ৯ রান। আগের আট ম্যাচের মধ্যে সৌম্যর সর্বোচ্চ রান ৫৬, অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে ওই এক ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। এখন পর্যন্ত লিগের ৯টি ম্যাচ খেলে ২০.১৩ গড়ে করেছেন মাত্র ১৬১ রান। সৌম্যর এমন বর্ণহীন পারফরম্যান্সে হতাশ হাবিবুল, ‘সৌম্যর কাছে যে প্রত্যাশা, সে অনুযায়ী পাচ্ছি না। কিছু দিন আগেও জাতীয় দলে ছিল। বাংলাদেশের পক্ষে তার অনেক ভালো পারফরম্যান্স আছে। ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স। এখন প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফরম্যান্স পাচ্ছি না। ও এখনও আমাদের চিন্তাভাবনার মধ্যে আছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করলে আমাদের পুল আরও বড় হয়। আমরা বিশ্বাস করি, ওর সামর্থ্য নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। একটু হতাশ তো অবশ্যই।’

ভয় ডরহীন ক্রিকেট খেলে নাম কুড়ানো সৌম্য ভীষণ রকম প্রতিভাধর। কোচিং স্টাফ, টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে অধিনায়কদের পছন্দের ক্রিকেটার তিনি। বিশেষ করে হাথুরুসিংহের পছন্দের একজন ক্রিকেটার সৌম্য। কিন্তু এত কিছুর পরও নিজের যে কাজটি সেটিই করতে পারছেন না বাঁহাতি এই ব্যাটার।

হাবিবুল বাশার মনে করেন, নিজের এই বাজে পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার উপায় সৌম্যকেই বের করতে হবে, ‘ওর সাথে সবাই কথা বলছে। যে মানসিক সমর্থন দরকার সেটা সবসময় দেওয়া হয়। মাঝেমাঝে ক্রিকেটারদের নিজেকেই নিজে বাঁচাতে হয়। ও কিন্তু অনেক দিন ধরে খেলছে, মোটেও নতুন ক্রিকেটার না। যথেষ্ট অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। মানসিক সমর্থন তো সবসময় পায়। নিজেকেই ঠিক করতে হবে, কীভাবে খেলতে হবে সেটা নিজেকেই বের করতে হবে।’

নির্বাচক আরও বলেছেন, ‘ব্যাটিং প্ল্যান… সব ব্যাটারের একটা ব্যাটিং প্ল্যান থাকে, একটা নিজস্ব প্ল্যান নিয়ে মাঠে নামে। সেটা হতে পারে কোন বোলারকে মারবে, কোন বোলারকে মারবে না, কোন দিক ছোট, কোন দিকে বাতাস আছে। এমন সব ব্যাটারেরই কিছু বেসিক প্ল্যান থাকে। সৌম্যকে নিজের ব্যাটিং প্ল্যান ঠিক করতে হবে, কীভাবে ও ব্যাটিং করতে চায়। নিজের ব্যাটিং বোঝাটা গুরুত্বপূর্ণ। ওকে বোঝানোর কিন্তু কিছু নেই। ওর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও সাফল্য আছে। বড় বড় দলের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো ইনিংস আছে। ওকে কিছু বোঝানোর নেই। ওকে নিজেই বুঝতে হবে।’

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে জাতীয় দলে অভিষেক হয় সৌম্যর। ২০২২ সালের নভেম্বরে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন সৌম্য, পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। এখন পর্যন্ত ১৬ টেস্ট, ৬১ ওয়ানডে ও ৭২টি টি-টোয়েন্টিতে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন সৌম্য। এদিকে আয়াল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডের আগেই হুট করে আফিফকে সিলেট থেকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আফিফের ব্যাটিং নিয়ে নাকি মোটেও সন্তুষ্ট ছিলেন না হাথুরুসিংহে। এই কারণেই তাকে বলা হয়েছে পারফরম্যান্স করে ফিরে আসতে! আফিফও নাকি উপরের দিকে খেলার ইচ্ছের কথাও জানিয়েছিলেন!

হাবিবুল বাশার জানালেন আফিফকে যে কারণে পাঠানো হয়েছে, ওই কাজ সে ঠিকঠাক করছে, ‘ওকে যে কাজ দেওয়া হয়েছে সেটা কিন্তু করছে। দেখা যাক সামনে কী হয়। প্রত্যাশা যা ছিল তা মোটামুটি পূরণ করছে। যখন কেউ জাতীয় দলের বাইরে যায় তখন তার কাছে প্রত্যাশা থাকে সে যেন ঘরোয়া ক্রিকেটে যথেষ্ট রান করে। আত্মবিশ্বাস নিয়ে জাতীয় দলে ফিরতে পারে। দলে থাকলে কম্বিনেশন ও পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তন হয়। আফিফ টপ অর্ডারে পারফর্ম করে আসছে। সামনে লম্বা সময় পড়ে আছে। আমার বিশ্বাস ও লম্বা সময় দলকে সার্ভিস দিবে।’

এদিকে জাতীয় দলের পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে সুযোগ এসেছিল সাইফউদ্দিনের। কিন্তু ইনজুরিসহ বাজে ফর্ম তাকে ছিটকে দিয়েছে। যদিও চলতি মৌসুমে আবাহনীর জার্সিতে ব্যাটিং-বোলিংয়ে একেবারে খারাপ কাটছে না সাইফউদ্দিনের। নির্বাচক হাবিবুল বাশারও সাইফউদ্দিনকে নিয়ে ইতিবাচক কথাই বললেন, ‘সাইফউদ্দিন ভালো করছে। তবে আমাদের এ মুহূর্তে ৪ জন ফাস্ট বোলার খুব ভালো করছে। এজন্য নতুন একজনকে নিয়ে দেখা। সাইফউদ্দিন তো আমাদের হাতে আছেই।’

মুলত বিশ্বকাপ সামনে রেখেই একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের খোঁজে বাংলাদেশ। সাইফউদ্দিনকে বিবেচনাতে রাখলে নতুন হিসেবে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে দলে নিয়েছেন নির্বাচকরা। যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের এই পেসারকে দেখতেই মূলত দলে নেওয়া, ‘আমরা তো একটা অলরাউন্ডার খুঁজছি। মৃত্যুঞ্জয় ব্যাটিং করতে পারে। গত ২-৩ বছরে এইচপি স্কোয়াডে ছিল। সেখানে দেখেছি ভালো গতিতে বল করতে পারে। বোলিং অ্যাবিলিটি যথেষ্ট ভালো। আমাদের তো দুজন বাঁহাতি বোলার আছে শরিফুল ও মোস্তাফিজ। যদি ভবিষ্যতে তাকে তৈরি করতে হয়, সেই ভাবনা থেকেই তাকে নেওয়া।’

Related Articles

Back to top button