দৈনিক খবর

গুলশানে আগুন: লাফ দেওয়ার আগে রাজীব বলেছিলেন, আমার ফ্যামিলিকে দেখিস

রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর এলাকার বহুতল আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত রাজীব কিরিচের ছোট ভাই সজীব কিরিচ বলেন, “ভাই রাত প্রায় ৮টা পর্যন্ত চেষ্টা করেছে আগুন থেকে বাঁচার জন্য। ওই সময় আমার চোখের সামনেই ১১ তলার বেলকনি থেকে লাফ দেয়। তার আগে সে ফোনে বলেছিল, ‘আমার ফ্যামিলিকে একটু দেখিস। তুই ছাড়া তো আর আমার কেউ নাই।” রাজীবের বাড়ি গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের পাওরান গ্রামে। বাবা বানাথ পিরিচের দুই ছেলের মধ্যে রাজীব পিরিচ ছিলেন বড়।

এর আগে গত রবিবার ১৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে গুলশান-২ নম্বরের ১০৪ নম্বর রোডের ১২ তলা ভবনের সপ্তম তলায় আগুন লাগে। এ সময় ৩৮ বছর বয়সী রাজীবসহ চার জন লাফিয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন (৩০) নামে একজনের রবিবার রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মৃত্যু হয়। রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

সজীব বলেন, “ভাই ১১ তলার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আমার সঙ্গে কথা বলছিল। একজন আরেকজনকে দেখে ফোনে কথা বলছিলাম। সে বলেছিল, আমার ফ্যামিলিকে একটু দেখিস।’ এরপর আরও অনেক কথা হয়েছে। কীভাবে আগুন থেকে রক্ষা পাবে, আগুন কোন দিক দিয়ে বেশি উঠছে, কোনদিকে ছড়িয়ে পড়ছে এসব জানাচ্ছিলাম। কিন্তু ১১ তলা থেকে সে লাফিয়ে পড়ে বাঁচার চেষ্টা করবে এটা আমাকে একবারও বলেনি।”

সেদিনের কথা স্মরণ করে সজীব বলেন, ‘আমার চোখের সামনেই ১১ তলার বেলকনি থেকে লাফিয়ে পড়ে ভাই বাঁচতে চেয়েছিল। নিচে পড়ার সময় আমি তাকে দেখছিলাম। কিন্তু কিছুই করার ছিল না। আগুন লাগার পর পরই ভাই আমাকে কল করে আগুন লাগার কথা বলেছিল। তখন সন্ধ্যা আনুমানিক সাতটা বাজে। আমার গ্রামের বাড়ি থেকে যানবাহনে ভবনটিতে যেতে ৩০ মিনিট সময় লাগে। আমি খবর শোনামাত্রই সেখানে চলে যাই।’

রাজীব ওই ভবনে বাবুর্চির চাকরি করতেন বলে জানান সজীব। সজীব বলেন, ‘আমি ভবনের ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছি। গেট বন্ধ থাকায় প্রবেশ করতে পারিনি। ভেতরে থেকে অ্যাম্ব্যুলেন্সে বের করার সময় সময় দেখি তার জ্ঞান নেই। তিনি বলেন, ‘ভাইকে অ্যাম্বুলেন্সে করে গুলশানের জেড. এইচ. সিকদার উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রাত আড়াইটার দিকে তার মৃত্যু হয়। ভোর ৪টার দিকে মরদেহ আমাদের কাছে দেওয়া হয়। আমরা তখনই বাড়ির পথে রওনা হই। সোমবার সকালে তাকে নাগরী খ্রিস্টান মিশনে সমাহিত করা হয়।’

এ সময় রাজীবের স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। রাজীবের মেয়ে রিঞ্জ কিরিচ স্থানীয় পাঞ্জুরা গার্লস স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। ছেলে প্রিন্স কিরিচ সেন্টা বানাথ ব্রাদার স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। একই এলাকার ইউপি সদস্য মাসুদ পারভেজ বলেন, রাজীবের রান্না করার সুনাম ছিল। নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। একটা কিছু করার মানসিকতা ছিল তার। তার মানুষকে রান্না করে খাওয়ানোর ইচ্ছা কাজ করতো। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেই কাজটিই করে গেছেন।’

Related Articles

Back to top button