নাম তার জান্নাতুল ফেরদৌস। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দুই হাতের ক’ব্জিবিহীন হাতে লিখে এবার এইচএসসিতে জান্নাতুলের অর্জন জিপিএ-৫। এর আগে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৭২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে এই শিক্ষার্থী। ডাক্তার হয়ে সকলের সেবা করার স্বপ্ন নিয়ে বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন সাভারের আশুলিয়ার জান্নাতুল নামের এক কব্জিবীবিহীন শিক্ষার্থী।
আজ বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মা নুলুফা বেগম জিপিএ-৫ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আশুলিয়ার বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ হতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাথে পাশ করে এই শিক্ষার্থী। সে তার পরিবারের সাথে আশুলিয়ার পল্লীবিদুৎ এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে। জান্নাতুল ফেরদৌস কুমিল্লা জেলার চাটখিল উপজেলাধীন মানিকপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে।
জান্নাতুল বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবার সাথে মায়ের বিচ্ছেদ হওয়ায় মামা ও খালার সাথে ভাড়া বাসায় থেকে কোন মতে দিনপাড় হচ্ছে তাদের। যেহেতু মামা-খালার বাসায় থেকে তার পড়ালেখা, সেহেতু তাদের পক্ষে লেখাপড়ার অতিরিক্ত খরচ জোগান দেওয়া সম্ভব ছিল না। মা তাকে যথেষ্ট উৎসাহ দিয়ে অনেক কষ্ট করে ফরম পূরণের টাকা সংগ্রহ করেছিলেন। কোনো বাঁধা তাকে আটকাতে পারেনি। যদিও টাকার অভাবে নানাভাবে বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে সে।
জান্নাতুল ফেরদৌসের মা নিলুফা বেগম জানান, তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে। যার কারণে পড়াশোনার প্রতি তার প্রবল আগ্রহ। মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার খরচ বহন করা তার জন্য খুবই কষ্ট সাধ্য। তাই তিনি সবার নিকট জান্নাতুলের জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন। অনেক সময় অনেকে আমাদেরকে সাহায্য সহযোগিতার কথা বললেও বাস্তবে কেউ এগিয়ে আসেনি, শুধু মাত্র ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ছাড়া। চেয়ারম্যান সাহেব ওর পড়াশোনার জন্য আমাদেরকে অনেক সাহায্য সহযোগিতা করেছেন।
শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া। আমি ডাক্তার হয়ে সকলের সেবা করতে চাই। অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমার বাবা না থাকায় মা আমাকে অনেক কষ্ট করে পড়াচ্ছেন। তার একার পক্ষেও সম্ভব না। আমার বড় খালাও আমাদের অনেক সহযোগিতা করেন। বর্তমানে তাদের সাথেই থাকি। খালা-খালুই বর্তমানে আমার দেখাশোনা করেন। আমি অনেক কষ্টে হাজী মতিউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করি। পরে আমার পরিবারের পক্ষে আমার কলেজের পড়াশোনা চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম স্যার আমাকে পড়াশোনার জন্য অনেক সাহায্য সহযোগিতা করেন। আমি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। পাশাপাশি আমার স্কুল থেকে শুরু করে কলেজের স্যার-ম্যাডামরাও আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন।
