আন্তর্জাতিকদৈনিক খবর

নারীদের জন্য ইসলামিক পোশাক বাধ্যতামূলক করল ইরান

এবার নারীদের জন্য ইসলামিক পোশাক বাধ্যতামূলক করল ইরানইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী আইনগতভাবে নারীদের চুল এবং মুখমণ্ডল আবৃত করে হিজাব পরার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ইসলামী বিধি মোতাবেক নারীদের সাজ-পোশাক বাধ্যতামূলক করেছে ইরান। হিজাব না পরে ইসলামী বিধি-বিধান (শরিয়া আইন) লঙ্ঘন করা নারীদের শনাক্ত করার জন্য দেশটি প্রকাশ্য স্থানগুলোয় গোপন ক্যামেরা স্থাপন করতে শুরু করেছে।

ইরানি পুলিশ জানিয়েছে, যে নারীরা শরিয়া আইন মোতাবেক চুল ঢাকা কাপড় পরবেন না, তাদের ‘পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে’ লিখিত বার্তা পাঠানো হবে। পুলিশের দাবি, ইসলামী হিজাব আইনের বিরুদ্ধে পশ্চিমাপন্থীরা যে প্রতিরোধ তৈরি করার চেষ্টা করছে, এর ফলে সেটি বন্ধ হবে। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ইসলামিক রিপাবলিক নিউজ এজেন্সিতে প্রকাশ হওয়া পুলিশের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘স্মার্ট ক্যামেরা আর অন্যান্য যন্ত্র’ ব্যবহার করে হিজাব না পরা (ইসলামবিদ্বেষী) নারীদের শনাক্ত করা হবে।

এরপর ইসলামী হিজাব আইন ভঙ্গ করা নারীদের ঠিকানায় কাগজপত্র এবং সতর্ক করে বার্তা পাঠানো হবে। ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী আইনগতভাবে নারীদের চুল এবং মুখমণ্ডল আবৃত করে হিজাব পরার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ওই বিপ্লবের একটা বড় লক্ষ্য ছিল নারীদের নগ্ন ও খোলামেলা পশ্চিমা (ইউরোপীয়) সাজ-পোশাক বন্ধ করা।

যদিও ওই সময় ইরানের অনেক নারীই ইসলামী বিধান অনুযায়ী পোশাক পরতেন, কিন্তু পশ্চিমাপন্থী শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলাভিকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনের আগে তেহরানের রাস্তায় নারীদের নগ্ন ও খোলামেলা পোশাক পরে এবং মাথা না ঢেকে চলাফেরা করতে দেখা যেত। আয়াতুল্লাহ খোমেনি ১৯৭৯ সালের ৭ মার্চ ডিক্রি বা নির্দেশনামা জারি করেন যে সব নারীকে তাদের কর্মক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে হিজাব পরতে হবে। ইরানি নারীরা মাথা না ঢাকলে তার বিচারে সেইসব নারী ”নগ্ন” বলে গণ্য হবেন।

এরপর ১৯৮১ সালে নারী ও কিশোরীদের ইসলামী রীতি অনুযায়ী ইজ্জত-আব্রু রক্ষা করার উপযোগী পোশাক পরা আইনত বাধ্যতামূলক করা হয়। তাতে বলা হয় যে নারীদের চাদর পরতে হবে অর্থাৎ তাদের পা অবধি পুরো শরীর ঢাকা ঢিলা পোশাক পরতে হবে এবং তার সঙ্গে পারলে নিচে ছোট একটা স্কার্ফ পরতে হবে। অথবা পুরোদস্তুর হিজাব এবং তার সঙ্গে লম্বা হাতা ওভারকোট দিয়ে শরীর ঢাকতে হবে।

শনিবার ইরানি পুলিশের ওই বিবৃতিতে পর্দা করাকে ‘ইরানি জাতির সভ্যতার ভিত্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের গুরুত্বের সঙ্গে এই আইন মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ইরানে বেপর্দা নারীদের ওপর সাধারণ জনগণের আক্রমণের ঘটনা একেবারে বিরল নয়। গত সপ্তাহেই ইরানের একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছিল। ওই ভিডিওতে দেখা যায় যে পর্দা না করার কারণে দু’জন নারীর গায়ে দই ছুড়ে মারছে একজন ব্যক্তি।

পরবর্তীতে হিজাব আইন ভঙ্গ করার অভিযোগে ওই নারীদের গ্রেফতার করা হয়। দই ছুড়ে মারা ইরানি ব্যক্তিকেও গ্রেফতার করেছে সে দেশের পুলিশ। বর্তমানে শরিয়া আইনকে আরও জোরালোভাবে কার্যকর করার জন্য দাবি করে যাচ্ছে ইরানের ইসলামপন্থীরা। গত সপ্তাহে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি পুনরায় জোর দিয়ে বলেন যে ইসলামী বিধি-বিধানের অংশ হিসেবে ইরানি নারীদের অবশ্যই হিজাব পড়তে হবে।

ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান গোলাম হোসেন মোহসেনি-ইজেই শুক্রবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, নারীদের আইন মেনে চলতে উৎসাহিত করার জন্য ধরপাকড় কোনো উপায় হতে পারে না। তিনি বলেছেন, ‘সাংস্কৃতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে সাংস্কৃতিক উপায়ে।’ সূত্র : বিবিসি, প্রেস টিভি

Related Articles

Back to top button