বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে যে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, তুললেন মানবাধিকার প্রসংগ

বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কতটা প্রভাব রাখবে সে বিষয়ে অনেকে কৌতূহলের শেষ নেই। এদিকে বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি এই বিষয়ে লবিং চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেছে ক্ষমতাসীন দল আ.লীগ। এবার বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কথা বলেছেন এবং সেই সাথে মানবাধিকারের বিষয়েও কথা বলেছেন।

আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশকে গণতন্ত্র, সমতা, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি এসব কথা বলেন। তার চিঠিটি সম্প্রতি পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের কাছে পৌঁছে দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওই চিঠিতে জো বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আমি আপনাকে এবং বাংলাদেশের জনগণকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে তাদের নিজেদের ভাগ্যের জন্য এবং নিজেদের ভাষায় কথা বলার জন্য সাহসিকতার সাথে লড়াই করেছিল, তাই তারা তাদের স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার মূল্য গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারে। বাংলাদেশ যেহেতু আগামী নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তাই আমি আমাদের জনগণের গণতন্ত্র, সমতা, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে তাদের গভীর মূল্যবোধের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমরা বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানাই জনগণকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সুরক্ষিত রাখার অঙ্গীকারের জন্য। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদান সবচেয়ে বেশি। গ্লোবাল একশন প্লান সহআয়োজনে বাংলাদেশকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। কারণ, এই উদ্যোগ বৈশ্বিক মহামা”রী খতম করার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে।

জো বাইডেন তার চিঠিতে আরো লিখেছেন, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে যাওয়া প্রায় ১০ লাখ শরণার্থীদের প্রতি বা”হু প্রশস্ত করে দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। আপনি সহযোগিতা ও উদারতার চর্চায় বিশ্বে নজির স্থাপন করেছেন। আমরা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে যাওয়া শরণার্থী সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যারা তাদের বিরুদ্ধে নৃ’শং”/সতা চালিয়েছে তাদের জবাবদিহি করতেও আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ওই চিঠিতে জো বাইডেন আরও লিখেছেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের অন্তত ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে দারুণ কিছু অর্জন করেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রগতি হয়েছে, জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ও জলবায়ু সমস্যা সমাধান করা হয়েছে এবং মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে যাওয়া শরণার্থীদের বিষয়ে মানবিক সহায়তার অংশীদার করা হয়েছে।

একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একটি সমৃদ্ধ, নিরাপদ, গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। চিঠির শেষে জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, স্বাধীনতা দিবসে আপনাকে এবং বাংলাদেশের জনগণকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। ‘জয় বাংলা’ বলে চিঠি শেষ করেন তিনি।

প্রসংগত, বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক রয়েছে যা ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জনের সময়কালের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম দেশগুলির মধ্যে একটি ছিল যারা বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেয় এবং বাংলাদেশের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমানে মানবিক সহায়তা প্রদান করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য একটি প্রধান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদার, যেখানে দুই দেশ ২০২০ সালে ৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পণ্য ও পরিষেবার বাণিজ্য করেছিল।