Countrywideদৈনিক খবর

পরকীয়ায় প্রেমিকের সাথে পালালেন স্ত্রী, দেশে ফিরে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে স্বামীকে

পরকীয়া প্রেমের জেরে স্বামীর সংশার ত্যাগ করে প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যান মোসা. রাবেয়া বেগম। বিয়ে করে সুন্দরী স্ত্রীকে বাড়িতে রেখে বিদেশ যাওয়াই কাল হলো প্রবাসী ছগিরের। তবে পালিয়ে গিয়ে বেশি দিন  টিকতে পারেনি ওই নারী। ৮ দিন পর ফিরে এসে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা করেন।

অন্যদিকে ছগির জোমাদ্দার স্বামী দেশে ফিরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ঘটনাটি ঘটেছে মহিপুর থানার লতাচাপলি ইউনিয়নের পুনামাপাড়া এলাকায়।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৬ অক্টোবর ধুলাসার ইউনিয়নের গঙ্গামতি এলাকার লতাচাপলী ইউনিয়নের পুনামাপাড়া গ্রামের আব্দুল মজিদ জোমাদ্দারের ছেলে ছগির, প্রতিবেশী মোঃ দেলোয়ার ফকির মেয়ে মো. রাবেয়া বেগমকে বিয়ে করেন। তারা বেশ কয়েক বছর ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করেছিল। তাদের মোঃ সোহাগ জোমাদ্দার জুনায়েত নামে ৭ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। এ অবস্থায় ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি ছগির জোমাদ্দার জীবিকার সন্ধানে সৌদি আরবে যান। এরপর স্বামীর অবর্তমানে চিন্তাহীন জীবনযাপন শুরু করেন রাবেয়া বেগম। এক পর্যায়ে মোবাইল ফোনে এবং প্রকাশ্যে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

কিন্তু দিনে দিনে সে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে প্রতিবেশী সোহরাফ হোসেন খানের ছেলে মো. জহিরুল ইসলাম খানের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করে। ছগিরের বড় ভাই বাদশা জোমাদ্দার লতাচাপলি ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দিতে বাধ্য হন। ছেলে মোঃ সোহাগ জোমাদ্দার জুনায়েতের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে উভয় পরিবারের মধ্যে সমঝোতা হলে রাবেয়া বেগম আবার সংসার শুরু করেন।

কিছুদিন পর রাবেয়া ইদ্রিস নামে এক যুবকের সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সন্দেহ হলে তারা বিদেশে অবস্থানরত ছগির জোমাদ্দারকে জানালে তিনি আইএমও নম্বর হ্যাক করে আলামত সংগ্রহ করেন। রাবেয়া বেগম বিষয়টি জানতে পেরে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে ছেলে জুনায়েতকে স্কুলে রেখে বিদেশি প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যান। রাবেয়াকে না পেয়ে শ্বশুর বাড়ির লোকজন স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অবহিত করেন।

পরে মহিপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে পুলিশ তদন্ত করে পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে। আট দিন পর গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাবেয়া তার বিচ্ছিন্ন প্রেমিকের জন্য জায়গা না পেয়ে আবার স্বামীর বাড়িতে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়।

তার পরিবারের সদস্যরা সালিশ বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা করেন। এদিকে, ছগির জোমাদ্দার ১৪ মার্চ দেশে ফিরে আসেন। রাবেয়া বাদী হয়ে কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২৯ মার্চ যৌতুক নিরোধ আইনে ৩০০ নং মামলা করেন।

বিদেশে মামলায় ছগির জোমাদ্দার, তার ভাই দুলাল জোমাদ্দার, বাদশা জোমাদ্দার, ইব্রাহিম জোমাদ্দার ও বোন নার্গিস বেগমকে আসামি করা হয়।

আদালত প্রধান আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন, বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবীর সহকারী মো. হাফিজুর রহমান পানু মৃধা।

স্বামী ছগির জোমাদ্দার বলেন, জীবিকার সন্ধানে বিদেশে গিয়ে সব হারিয়েছি। বিদেশে থাকা অবস্থায় তাদের উপার্জিত সব টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে গেছে। আমার সাজানো সংসার ধ্বংস হয়ে গেছে। উল্টো মামলা করে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।

মেয়েটির বাবা। দেলোয়ার ফকির বলেন, মামলার বিষয়ে কিছু বলতে পারব না, সব সেকান্দার ভাই জানেন। মেয়ের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মোবাইল ফোনে কথা বলতে চাই না।

এ প্রসঙ্গে ধুলাসার ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শাহ আলম হাওলাদার বলেন, রাবেয়া আমার ওয়ার্ডের দেলোয়ার ফকিরের মেয়ে। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে মেয়েটি শ্বশুর বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। সেখান থেকে কুয়াকাটায় ফিরে এলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. ইসমাইল হাওলাদার আমাকে খবর দেয়। মেয়েটির চাচা সেকান্দার সিকদার আমাদেরকে তার উপস্থিতিতে নিয়ে গেলেন।

এ ব্যাপারে লতাচাপলি ইউনিয়নের ৪র্থ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ইসমাইল হাওলাদার জানান, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে মেয়েটি শ্বশুর বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। আট দিন পর কুয়াকাটায় ফিরলে তার ফুফু আমাকে খবর দেয়। আমি স্থানীয় ইউপি সদস্য। আমি শাহ আলম হাওলাদারকে খবর দিয়ে মেয়েটিকে তার মামা সেকান্দার সিকদারের কাছে হস্তান্তর করি। এখন মেয়েটি বাদী হয়ে যৌতুকের মিথ্যা মামলা করেছে।

লতাচাপলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, বিষয়টি আমি প্রথম থেকেই অবগত। মেয়েটি বারবার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছে। সম্প্রতি পালিয়ে গিয়ে আট দিন পর ফিরেছেন। উল্টো তার স্বামীকে যৌতুকের মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।

এই মামলায় আদালতে ছগির নির্দোষ প্রমাণ করতে হলে আগে তাকে আত্মসমর্পন করতে হবে বলে জানিয়েছেন এই মামলার দায়ীত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা। আত্মসমর্পনের পর তাকে আদালতের কাছে তার নির্দষ হওয়ার প্রমান তুলে ধরলেই কেবল শাস্তির হাত থেকে রেহাই পাবে ছগির।

Related Articles

Back to top button