দৈনিক খবর

তিনি যতটি সি’গারেট পুড়িয়েছেন ততটি লাইন লিখলে মহাকাব্য হতো : রাষ্ট্রপতির স্ত্রী

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আত্মজীবনীমূলক ‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’ বইয়ের সব ঘটনা ও কাহিনী ঠিক থাকলেও প্রেম-বিয়ে নিয়ে লেখা অংশের বিষয়ে তার স্ত্রী রাশিদা খানম রসিকতা করে বলেছেন, এ বিষয়ে গণ্ডগোল আছে, সবটুকু বিশ্বাস করবেন না।

গতকাল বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বঙ্গভবনের দরবার হলে আয়োজিত রাষ্ট্রপতির আত্মজীবনীমূলক ‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির প্রদত্ত ভাষণসমূহের সংকলন ‘স্বপ্ন জয়ের ইচ্ছা’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে তিনি এ কথা বলেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা খানম বলেন, ‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’ বইয়ের অনেক ঘটনারই প্রত্যক্ষদর্শী আমি। বিশেষ করে কলেজ জীবন থেকে ৭১ এর সেই মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর স্মৃতি আজও আমাকে নাড়া দেয়।’

তিনি বলেন, ‘সব ঘ্টনা ও কাহিনী ঠিকঠাক থাকলেও প্রেম-বিয়ের ঘটনার বর্ণনায় কিছু গণ্ডগোল আছে। অর্থাৎ সুবিধা মতো কিছু বাড়িয়ে বলা, আবার কিছু ক্ষেত্রে চেপে যাওয়া, এটা মনে হয় সব পুরুষ মানুষরাই করে থাকে। এ বিষয়ে আপনারা সবটুকু বিশ্বাস করবেন না। ’

রাষ্ট্রপতির স্ত্রীর বক্তব্য শুনে এ সময় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকারসহ বঙ্গভবন দরবার হলে উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে যায়।

বক্তব্যে সরলতা এবং রস বোধের উপস্থিতির জন্য সুখ্যাতি থাকা সাবেক স্পিকার এবং দুইবারের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের স্ত্রী রাশিদা খানম বলেন, ‘সুদীর্ঘ ৬০ বছর ধরে তার সঙ্গে সংসার করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে তিনি এ পর‌্যন্ত যতগুলো সি’গেরেট পু’ড়িয়েছেন প্রতিটির বিনিময়ে একটি লাইন লিখলে, লিখতে পারলে একটা মহাকাব্য হয়ে যেত। দীর্ঘ ৬০ বছরে তার সঙ্গে আমার অনেক অম্ল-মধুর স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এসব কিছুর জন্য আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ’

রাশিদা খানম বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ব্যক্তিগত জীবনে আমার দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছরের সহযাত্রী। ৬ দশকের ঘর সংসার, অনেক ঘটনা, অনেক স্মৃতি। ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনের অনেক বিষয় বইয়ে উঠে এসেছে। ’

মহান আল্লাহর কাছে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন রাষ্ট্রপতির স্ত্রী। রাষ্ট্রপতির বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে আলোচনার পর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। প্রকাশনা উৎসবের পাশাপাশি সংসদ সদস্যদের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রসিকতা করে বলেন, নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে উপলক্ষ করেই রাষ্ট্রপতি তার বইয়ের প্রকাশনা উৎসবটাও সেরে নিলেন। যাকে বলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা।

লেখক হিসেবে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সাফল্য কামনা করে তার স্ত্রী বলেন, ছোট গল্পের চরিত্রের মতোই শেষ হইয়াও হইলো না শেষ। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই আজকের প্রকাশনা উৎসবের বই দুটির গ্রন্থকার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে। কারণ এতদিন তার পরিচয় ছিল রাজনীতিবিদ হিসেবে, আইনবিদ, সংসদ সদস্য, ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার, বিরোধী দলীয় উপনেতা ও সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি হিসেবে। আজ আরও একটি পরিচয় যুক্ত হলো লেখক হিসেবে। যদিও এটা অনেকটাই বেটার লেট দেন নেভার। লেখক হিসেবে আমি তার সাফল্য কামনা করি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান আলোচক হিসেবে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রধান বিচারপতি বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, মিডিয়াসহ বিভিন্ন পেশার আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’ এটি মূলত রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আত্মজীবনীমূলক বই। আর ‘স্বপ্নজয়ের ইচ্ছা’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড মূলত ২০১৩-২০১৮ সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণের সংকলন।

Related Articles

Back to top button