দৈনিক খবর

ছাদে কিংবা বাড়ির আঙ্গিনায় টবে চায়না মিষ্টি কমলা যেভাবে চাষ করবেন

ছাদে কিংবা বাড়ির আঙ্গিনায় আপনি খুব সহজেই মাল্টা ও চায়না কমলা চাষ করতে পারবেন। টবের মাটি তৈরী, পরিচর্যা, সার ব্যবস্থাপনা এবং রোগ ও পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা জানা দরকার। আসুন জেনে নিই টবে চায়না কমলা চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা কৌশল।

টবে বা ড্রামে চায়না কমলা চাষ করতে চাইলে সঠিকভাবে টবে বা ড্রামে কমলা চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা জানা প্রয়োজন। আপনাকে মিনিমাম ১.৫ থেকে ২ ফুট x ১.৫ থেকে২ ফুট সাইজের টপ বা ড্রাম ব্যবহার করতে হবে এর থেকে ছোট আকৃতির টবে বা ড্রামে চায়না কমলার চাড়া রোপণ করা যাবে না। এরকম একটি টবে বা ড্রামে ধারণকৃত মাটির ওজন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কেজি হবে।

১.৫ থেকে২ ফুট x ১.৫ থেকে ২ ফুট একটি টবের মাটি তৈরি এর সময় নিম্নোক্ত হারে সার মিশিয়ে নিন:-

১, গোবর বা কম্পোস্ট (১০– ১৫) কেজি, ২, ইউরিয়া সার (১৫০–১৫৫) গ্ৰাম, ৩, টিএসপি (১০০–১২০) গ্ৰাম
৪, এমওপি সার (১০০–১২০) গ্ৰাম, ৫, জিংক সালফেট (১০–১২) গ্ৰাম, ৬, সলুবোর বোরন ৫ গ্ৰাম।

সার গুলো মাটির সাথে মিশানোর দশ দিন পর একবার সবগুলো ঘেটে দিতে হবে এবং মিশানোর দিন হতে ১৫ থেকে ২০ দিন পরে গাছ রোপন করতে হবে। এছাড়া সারা বছর গাছের বৃদ্ধি সঠিক মাত্রায় রাখতে টবের কমলা গাছ কে প্রতি মাসে অন্তত একবার করে এক চা চামচ পরিমাণ NPK/মিশ্র সার এবং ৬০০ গ্রাম গোবর দুই লিটার পানিতে গুলিয়ে গাছের চারিদিকে গোড়া থেকে ৬”– ৮” দূরে মাটি খুরে মাটির সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করুন। এটি গাছের বৃদ্ধি কে প্রতিনিয়ত ত্বরান্বিত করবে।

চায়না কমলা গাছের প্রুনিং বা ডাল ছাটাই করণ:

সঠিক পরিমাণে এবং ভালো ফলন পেতে চাইলে অবশ্যই গাছ ছাটাই করতে হবে।ফল ধরার পূর্ব পর্যন্ত ধীরে ধীরে গাছটিকে ছেঁটে নির্দিষ্ট আকারে আনতে হবে। এর কারণ হলো পার্শ্ববর্তী ডাল গুলোতে সূর্যের আলো বেশি প্রয়োজন হয় এবং সেখানে ফল বেশি ধরে। গাছ বড় হলে বড় গাছে নিচের ১ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত সব ডাল ছেঁটে দিতে হবে। এছাড়া ছাঁটাইয়ের পর ডালের কাটা অংশে বোর্দো পেস্টের প্রলেপ দিতে হবে।

এছাড়া অনেক সময় গাছে একসাথে প্রচুর ফল আসে। এ কারণে অতিরিক্ত ফল থাকায় ফল বড় হয় না এবং ফলের আকৃতি ভাল হয়না। টবে চায়না কমলা চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা এর জন্য প্রতিটি ফলের গুচ্ছে দুটি করে সুস্থ সবল ফল রেখে বাকিগুলো ছেঁটে দিতে হবে। টবে চায়না কমলা চাষ পদ্ধতিতে অঙ্গ ছাঁটাই করা আবশ্যক একটি কাজ।

চায়না কমলা গাছের রোগবালাই ও চিকিৎসা, গাছের লিভমাইনার পোকা:

লিভ মাইনার কমলা গাছে একটি মারাত্মক ক্ষতি কারি পোকা। এ পোকা আক্রমণ করে গাছের ছোট এবং কচি সবুজ পাতা খেয়ে ফেলে। এছাড়া এটি ফলের উপর আঁকা বাঁকা সূরঙগের মত দাগ সৃষ্টি করে। প্রথম অবস্থায় আক্রমণ কৃত পাতা গুলো ছিড়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। হলুদ ফাঁদ তৈরি করে এই পোকা দমন করা সম্ভব।
কিন্তু আক্রমণের পরিমাণ অতিরিক্ত বেশি হলে লিফ মাইনার পোকা দমন করতে কিনালাক্স ২ এমএল প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এই ওষুধ টি প্রতি ১৫ দিন অন্তর অন্তর গাছে স্প্রে করলে এধরনের পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

চায়না কমলা গাছের ডাম্পিং অফ রোগ:

চায়না কমলা গাছে ড্যাম্পিং অফ রোগ হলে গাছের গোড়া পঁচে যায়। এটি মূলত বর্ষার সময় দেখা যায়।
এছাড়া অতিরিক্ত পানি সেচ দেয়ার কারণে অনেক সময় এ সমস্যাটি হয়ে থাকে। এটি দূর করতে রেডোমিল্ড গোল্ড ২ গ্ৰাম ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় স্পে করতে হয়।

চায়না কমলা গাছের গেমোসিস রোগ:

গেমোসিস রোগ হলে গাছের কান্ড ও পাতা বাদামি বর্ণ ধারণ করে। গাছের কান্ড মাঝ বরাবর ফেটে যায় ও সেখান দিয়ে কস বের হতে থাকে। এ রোগটির অতিরিক্ত প্রাদুর্ভাব এর ফলে গাছটি উপর থেকে কান্ড শুকিয়ে মারা যেতে থাকে। কমলা গাছে গেমোসিস রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত ডালের অংশটি কেটে ফেলে দিতে হবে এবং কাটা অংশে বোর্দো পেস্ট এর মিশ্রণ লাগিয়ে দিতে হবে।

বোর্দো পেস্ট তৈরি করার প্রস্তুত প্রণালী:

১। একটি মাটির পাত্রে ১০০ গ্রাম ভাল ভাবে মিহি করা তুঁতে ও অন্য একটি মাটির পাত্রে ১০০ গ্রাম ভাল ভাবে মিহি করা চুন আলাদা আলাদা ভাবে নিতে হবে। ২। মাটির পাত্র ২টিতে ৫ লিটার করে পরিস্কার পানি নিতে হবে। ৩। বাঁশের কাঠি দিয়ে দুই পাত্রের তুঁতে ও চুন ভালভাবে ঘুটে নিতে হবে। এরপর ১০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। ৪। এরপর দু পাত্রের মিছ্রিত দ্রবণ বড় মাটির পাত্রে ঢালতে হবে এবং কাঠের কাঠি দিয়ে ভাল ভাবে ঘুটে নিতে হবে। এটাই হল বোর্দো মিক্সার। ৫। বোর্দো মিক্সার টি সঠিক মাত্রায় হয়েছে কিনা তা রং দেখে বোঝাযায়।
মিশ্রিত দ্রবনের রং গাড় নীল হলে বুঝতে হবে সঠিক হয়েছে। দ্রবণ সবুজ বা সাদা হলে যথাক্রমে তুঁতে ও চুন বেশি হয়েছে। তাছাড়া একটি ইস্পাতের চাকুর অগ্রভাগ মিশ্রনে ঢুকালে যদি চাকুতে কোন লাল দাগ না পড়ে তাহলে বুঝতে হবে যে মিশ্রন সঠিক হয়েছে। ৬। এবার স্প্রে করার জন্য একদম তৈরি।

আমাদের মনে রাখা দরকার:

১। তুঁতে ও চুন ভালভাবে মিহি হল কিনা দেখতে হবে। ২। দ্রবণ প্রস্তুত করার ২-৩ ঘণ্টার মধ্য স্পে করা দরকার।
৩। প্রস্তুত করা মিক্সার ইস্পাতের চাকুর অগ্রভাগ ডুবিয়ে দেখে নিন লালচে দাগ পড়ে কিনা। না পড়লে মিশ্রণ মাত্রা সঠিক হয়েছে।

বোর্দো মিক্সার ব্যবহারে সতর্কতা:

বোর্দো মিক্সার প্রয়োগে কোন কোন ফসলে বিশেষ করে টমেটো ফসলে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই টমেটো ফসলে প্রয়োগ না করা উত্তম। এটা ফল পাকাতে বিলম্ব করে। মিশ্রনটি তৈরির পর ১২ ঘন্টার বেশী রাখা যাবে না। এটা একটি বিষ, তাই তৈরির পর হাত ভাল ভাবে ধুতে হবে।

বোর্দো মিক্সার ব্যবহারের সুবিধা:

বোর্দো মিক্সার কয়েক দিন পর্যন্ত গাছে লেগে থাকে। এটা তৈরির উপকরণ সহজে পাওয়া যায় ও দামে সস্তা এবং ছত্রাক জনিত রোগ দমনে বেশ কার্যকর) টবে এই কমলা চাষের সঠিক পদ্ধতি ও পরিচর্যা মেনে চাষ করতে পারলে ভালো ফলন আশা করা যায়।

Related Articles

Back to top button