দৈনিক খবর

এবার দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে ইইউ, চলছে যেসব হিসাব-নিকাশ

বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি এখন দেশের রাজনীতিতে একটি মূখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছেন। চলমান বছরের শেষ দিকে কিংবা আগামি বছরের শুরুর দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে বাংলাদেশের নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠিয়ে থাকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এই নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যবেক্ষক পাঠানোর আগে বেশ কিছু বিষয়ে হিসাব-নিকাশের বিষয় রয়েছে।

বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) অনেক হিসাব-নিকাশ করতে হবে। প্রথমত, বাংলাদেশের উচিত আনুষ্ঠানিকভাবে ইইউকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আমন্ত্রণ জানানো। দ্বিতীয়ত, সেই নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ও পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে ইইউকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক মিশন পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ জন্য তাদের দৃষ্টিতে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। তৃতীয়ত, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কিভাবে করবে সে বিষয়ে ইইউ ও বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা হতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), ২৮টি ইউরোপীয় দেশের জোট, আসন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পর্যবেক্ষক মিশন পাঠানোর সিদ্ধান্ত এখনো নেয়নি। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে ইইউ পর্যবেক্ষক মিশন পাঠাতে আগ্রহী।

ইইউ আগামী নির্বাচনে একটি পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে বাংলাদেশে ইইউ প্রতিনিধি দলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি গতকাল দেশের একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, নির্বাচন ‘যথেষ্ট অংশগ্রহণমূলক’ এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা (নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নিয়ে) হলে হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইইউর পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ জোসেফ বোরেল) নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশকে অগ্রাধিকারের দেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনের এখনো কয়েক মাস বাকি, তাই কে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে আর কে করবে না তা ঠিক করা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ মন্ত্রীরা বিভিন্ন বৈঠকে আগামী নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানোর কথা বলছেন। এই অবস্থানকে বিদেশিরা স্বাগত জানিয়েছে।

গত দুই নির্বাচনে পর্যবেক্ষক মিশন পাঠায়নি ইইউ

ইইউ সর্বশেষ ২০০৮ সালে বাংলাদেশের নবম জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠায়। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ইইউ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক মিশন পাঠায়নি। তৎকালীন পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক ইইউ-এর উচ্চ প্রতিনিধি ক্যাথরিন অ্যাশটন বাংলাদেশের নির্বাচনের প্রায় দুই সপ্তাহ আগে এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, জাতিসংঘের উদ্যোগসহ অনেক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলো স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে, প্রধান দলগুলি ১১ তম জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল, কিন্তু ইইউ কোনো পর্যবেক্ষক মিশন পাঠায়নি। এর কারণ ছিল ইইউর বাজেট ঘাটতি এবং অন্যান্য দেশে নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দেওয়া। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতি বছর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সব নির্বাচন ইইউ দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয় না. ইইউ ওই নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠায়নি, তবে বিশেষজ্ঞ পাঠিয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদী পর্যবেক্ষণ

ইউরোপিয়ান এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিসের ওয়েবসাইটে বিদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠানোর উদ্দেশ্য ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। বলা হয়েছে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ শুধু একদিনের কাজ নয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মান ক্রমাগত পুনর্মূল্যায়ন ও উন্নত করতে হবে। একটি ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ (সবার জন্য সমান সুযোগ), প্রার্থীদের মধ্যে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশ ও সমবেত হওয়া, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান এবং একটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন নির্বাচন পরিচালনা সংস্থা ছাড়া একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন অসম্পূর্ণ। একটি প্রাণবন্ত নাগরিকসমাজ এবং বৈচিত্র্যময় গণমাধ্যমও এ ক্ষেত্রে অপরিহার্য পূর্বশর্ত।

যে প্রক্রিয়ায় পর্যবেক্ষণ

যে দেশে নির্বাচন সেই দেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ইইউর হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ সদস্য রাষ্ট্র ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সঙ্গে আলোচনা করে, পর্যবেক্ষণের জন্য অগ্রাধিকারের দেশের তালিকা ঠিক করেন। একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন পরিচালনা করা হয় যেখানে বিবেচনা করা হয় ঐ দেশে পর্যবেক্ষক মিশন পাঠানো বাস্তবসম্মত কি না বা মিশন পাঠানোর কোনো ফল আসবে কি না। মূলত, এই অনুসন্ধান মিশন সম্ভাব্য পর্যবেক্ষক মিশনের বিশ্বাসযোগ্য কর্মপরিবেশ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলোচনা ও সমঝোতা করে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচ্চ প্রতিনিধি তখন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একজন সদস্যকে পর্যবেক্ষক মিশনের প্রধান হিসেবে নিয়োগ করেন। সেই মিশনের সদস্য হিসাবে স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী অ্যাপয়েন্টমেন্ট ওয়েবসাইটে ঘোষণা করা হয়। পর্যবেক্ষক মিশন তাদের পর্যবেক্ষণের উপর ইইউকে রিপোর্ট করে। এ ছাড়া স্থানীয় কর্তৃপক্ষও তাদের পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে।

দেশে একটি সংসদীয় গণতন্ত্র, এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে দেশে বেশ কিছু সংখ্যক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের নির্বাচনকে ঘিরে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বার্তা এবং নির্দেশনা দিয়েছে। তবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল অংশ নেবে কিনা সে বিষয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেয়নি দলটি।

Related Articles

Back to top button