দৈনিক খবর

এবারও এইচএসসিতে আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজের চমক

নরসিংদীর আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ এবারও চমকপ্রদ ফলাফল করেছে। বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে প্রতিষ্ঠানটি থেকে অংশ নেওয়া ১ হাজার ২০২ জন পরীক্ষার্থীর সবাই পাশ করেছে। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৬৩ জন শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ এর গড় ৮৮.৪৪%।

কলেজের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ ২০১২ সাল থেকে টানা তিন বছর ঢাকা বোর্ডে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। গত ২০১৫ সাল থেকে সেরাদের তালিকা না হলেও ফলাফলে নিজেদের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখেছে।

বুধবার দুপুরে ফলাফলের খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা কলেজ প্রাঙ্গনে ছুটে আসে। পরে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল কাদির মোল্লার উপস্থিতিতে ভাল ফলাফল করায় আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে দোয়া করোনো হয়।

এবছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় মোট ১২০২ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ১০৬৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৭৫০ জন অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৮৩ জন, ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে ১৭৩ জন অংশ নিয়ে ১৫২ জন ও মানবিক শাখা থেকে ২৮১ জন অংশ নিয়ে ২২৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।

উল্লেখ্য, এসএসসিতে জিপিএ-৫ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে ৭৩৮ জন, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ১৭ জন ও মানবিক বিভাগে ৪৯ জনসহ মোট ৮০৪ জন শিক্ষার্থী কলেজটিতে ভর্তি হয়েছিল।

মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পাওয়া সাবরিনা আলম পূর্ণ জানান, ‘ পরীক্ষা ভাল দিলেও প্রথমে আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছি। কারণ আমি এসএসসিতে জিপিএ ৩.৯৪ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। শিক্ষকদের সঠিক দিক-নির্দেশনা, নিয়মিত ক্লাস, বিশেষ ক্লাস, হোম ভিজিট, টিউটেরিয়াল ও মাসিক পরীক্ষা সবকিছুর সমন্বয়ে আজকে আমি জিপিএ ৫ পেয়েছি।’

বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাফুয়ান হোসেন জানায়, ‘আমরা হোস্টেলে থাকি নাই। কলেজের শিক্ষকরা নিয়মিত আমাদের বাসায় এসে খোঁজ খবর নিতেন। এ কারনে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত লেখাপড়ায় ব্যস্ত থাকতে হয়েছে যার কারণে আজ আমাদের এ সাফল্য’।

জিপিএ-৫ পাওয়া লাজিনা জাহান ফিহা জানায়, ‘কলেজের এত ভাল ফলাফলের পিছনে রয়েছে কঠোর শৃঙ্খলা ও শিক্ষদের অক্লান্ত পরিশ্রম।’

কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও থার্মেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল কাদির মোল্লা বলেন, ‘এই কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে এই সফলতা অর্জন করে আসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আর তার মূলমন্ত্র হচ্ছে পরিশ্রম। আমাদের এক ঝাঁক তরুণ শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং শিক্ষার্থীদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ভাল ফলাফলের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘কলেজটির ধারাবাহিকত ফলাফল অব্যাহত রাখাটা বড় কঠিন ও পরিশ্রমের। সারাদেশের সার্বিক ফলাফল বিশ্লেষণ করলে আশা করছি দেশ সেরাদের মধ্যে আমাদের কলেজটি ভাল অবস্থানে থাকবে। মূলত নরসিংদীর মত মফস্বল শহরে মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের অঙ্গীকার নিয়েই কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। আমি সবসময় চেয়েছি সুশিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মানব সম্পদে পরিণত হউক।’

আবদুল কাদির মোল্লা বলেন, ‘আজকের এই সাফল্য শুধু এই প্রতিষ্ঠানের একার না। এই সাফল্য পুরো নরসিংদীবাসীর। এরই লক্ষ্যে আমার পরিচালনাধীন মজিদ মোল্লা ফাউন্ডেশন শুধু আমাদের পরিচালনাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, জেলার প্রায় ৩১৫টি স্কুল ও কলেজে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরনে সাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছি।’

কলেজের অধ্যক্ষ মো. মাহমুদুল হাসান রুমি বলেন, ‘আমাদের কলেজের এ সাফল্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও পরিচালনা পর্ষদের মেল বন্ধনের ফসল। এই কলেজের এক ঝাঁক তরুণ মেধাবী শিক্ষক সকাল থেকে শুরু করে মধ্য রাত অবধি তাদের নিরন্তর চেষ্টায়ই আজকের ধারাবাহিক এই সাফল্য। প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন দিক-নির্দেশক শিক্ষক রয়েছে। ওই শিক্ষক শুধু লেখাপড়া নয়, তাদের খেলাধুলা, স্বাস্থ্য, বিনোদন থেকে শুরু করে সকল ধরনের চাহিদা পূরণে সবসময় শ্রম দিয়ে আসছে। আর যার অনুপ্রেরণা ও সঠিক দিক নির্দেশনা আমাদের প্রতিষ্ঠান আজকের এই অবস্থানে তার পুরো কৃতিত্ব আমাদের কলেজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আবদুল কাদির মোল্লা মহোদয়ের।

উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানটি ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর ২০০৮ সালে প্রথম ফলাফলে পাসের হার ৯৯%, ২০০৯ সালে শতভাগ পাসসহ ঢাকা বোর্ডে পঞ্চম এবং সমগ্র বাংলাদেশে ষষ্ঠ স্থান, ২০১০ সালে শতভাগ পাসসহ ঢাকা বোর্ডে চতুর্থ স্থান, ২০১১ সালে ঢাকা বোর্ডে সপ্তম, ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ঢাকা বোর্ড তথা সমগ্র বাংলাদেশে শতভাগ পাসসহ দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। পরবর্তীতে শিক্ষাবোর্ড থেকে সেরাদের তালিকা প্রকাশ বন্ধ হলেও সকল ক্যাটাগরিতে ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯, ২০২০, ও ২০২১ সালেও দেশ সেরা ফলাফলের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে।

সূত্র: বাংলাভিশন২৪।

Related Articles

Back to top button