দৈনিক খবর

ছিলেন ফিফার পরামর্শক, হয়ে গেলেন বাফুফের স্টাফ!

সম্প্রতি খবরের শিরোনামে আসে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) আর্থিক বিষয়ের অনিয়ম। সে কারণে আর্থিক বিষয়ে সহযোগিতার জন্য বাফুফেকে একজন কনসালটেন্ট দিয়েছিল ফিফা। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়োগপ্রাপ্ত রফিকুল ইসলাম এক বছর ১০ মাস বাফুফেতে কনসালটেন্ট হিসেবেই কাজ করেছেন। কিন্তু গত দু’য়েক মাস ধরে বাফুফের কমপ্ল্যায়েন্স কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করছেন তিনি!

এদিকে ফিফার মাধ্যমে আসা কনসালটেন্ট বাফুফের স্টাফ বনে যাওয়ার ঘটনা ফেডারেশনের নীতি-নির্ধারকদের হতবাক করে দিয়েছে। বিশেষ করে নির্বাহী কমিটির অনেকেই বিষয়টি কোনোভাবে মানতে পারছেন না। এর আগে, ৩১ ডিসেম্বর বাফুফের নির্বাহী কমিটির সভায় বাফুফের কনসালটেন্ট হিসেবে রফিকুল ইসলামের নিয়োগের ব্যাপারে আলোচনা হয়। সভায় উপস্থিত সকলেই তাকে নিয়োগ না দেয়ার মত দেন।

একমাত্র সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী রফিকুল ইসলামকে বাফুফে স্টাফ করার পক্ষে মত দেন। সালাম মুর্শেদীর মতের বিপরীতে আবার পাল্টা যুক্তিও দিয়েছেন অনেকে। সংখ্যাগরিষ্ঠের মত উপেক্ষা করে সেই রফিক এখন বাফুফের কমপ্ল্যায়েন্স কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করে চলছেন। এদিকে বাফুফের অন্যতম সহ-সভাপতি ও ফিন্যান্স কমিটির সদস্য আতাউর রহমান ভূইয়া মানিক এই প্রতিবেদকের কাছে বাফুফের কমপ্ল্যায়েন্স কনসালটেন্টের বিষয়টি শুনে যারপরনাই বিস্মিত।

তিনি বলেন, ‘সেদিনের সভায় এই বিষয়ে আলোচনার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। সেখানে তো তাকে নিয়োগ না দেয়ারই সিদ্ধান্ত হয়েছিল।’ নির্বাহী সভায় আলোচনা ও সিদ্ধান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত উপেক্ষা করে তিনি কিভাবে কাজ করছেন এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফেডারেশনের কর্মকর্তারা। কোড অফ কন্ডাক্টের কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাফুফের নির্বাহী কমিটির একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, ‘বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চলছে বিস্ময়করভাবে। এর বড় উদাহরণ এটি। অনেক কিছু হয় নির্বাহী কমিটির অনেকেই অবগত থাকে না। আবার নির্বাহী কমিটির সভায় আলোচনা হয় এক, বাস্তবে ঘটে আরেক।’

এদিকে নির্বাহী কমিটির সভায় প্রায় সবাই বাফুফের কমপ্ল্যায়েন্স কনসালটেন্ট নিয়োগে ‘না’ মনোভাব পোষণ করার পরও তৃতীয় তলায় কনফারেন্স কক্ষের পার্শ্ববর্তী কক্ষের দরজায় সাদা কাগজে দৃশ্যমান ‘রফিকুল ইসলাম, এফসিএ বিএফএফ কমপ্ল্যায়েন্স কনসালটেন্ট।’ সপ্তাহে কয়েকদিন তিনি অফিসও করেন সশরীরে। নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব বাফুফে সচিবালয়ের। সেই বাস্তবায়নের তদারকির গুরু দায়িত্ব পেশাদার সাধারণ সম্পাদকের ওপর।

নির্বাহী সভার মতামতকে পাশ কাটিয়ে কিভাবে কমপ্ল্যায়েন্স কনসালটেন্ট এখনো বহাল তবিয়তে কাজ করছেন গত সপ্তাহে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ। বিশ্বজুড়ে ফিফার নিবন্ধিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা আর্থিক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে। ফিফার সেরকম এক নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ছিলেন রফিকুল ইসলাম। বাফুফে ভবনে তিনি সংস্থাটির হয়ে কাজ করলেও সম্মানী পেতেন ফিফার মাধ্যমে।

কিন্তু বাফুফে কমপ্ল্যায়েন্স কনসালটেন্ট হিসেবে নিয়োগ করলে বাফুফেকেই মোটা বেতনের অর্থ বহন করতে হবে। এত সম্মানী দিয়ে তাকে না রাখার ব্যাপারে প্রায় সবারই মত ছিল। এদিকে ফিফা রফিকুল ইসলামের প্রতিষ্ঠানের বদলে ইতোমধ্যে অন্য প্রতিষ্ঠানকে বাফুফের সঙ্গে যুক্ত করেছে। ফিফা যে প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়েছে সেই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বাফুফে কেন রাখবে এই দিকটিও ৩১ ডিসেম্বর তুলে ধরেছিলেন বাফুফের এক কর্মকর্তা। এতে ফিফার সঙ্গে বাফুফের সম্পর্কের টানাপোড়েন হতে পারে।

Related Articles

Back to top button