দৈনিক খবর

মধ্যরাতে পুলিশের স্ত্রীকে হাত ধরে টেনে কাছে নেয়ার চেষ্টা, চিকিৎসকের মেসেজ- ‘রাগ- কথা বলা যাবে’

রোগীকে সু-চিকিৎসা প্রদান করা একজন চিকিৎসকের অন্যতম নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু ভাবতেও অবাক লাগে যারা চিকিৎসার সুযোগ নিয়ে রোগীর মায়ের সাথে এমন অসামাজিক কাজ করতে পারে, তারা কি আসলেই কোনো চিকিৎসক নাকি মানুষরূপী কোনো জানোয়ার!

খুলনায় মেয়ের চিকিৎসার সুযোগ নিয়ে ডা. নিশাত আব্দুল্লাহ একান্তে পাইতে চাইতেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী নুসরাত আরা ময়না। বুধবার (১ মার্চ) দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন অভিযোগ করে পুরো ঘটনা তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে নুসরাত আরা ময়না জানান, মাত্র এক বছর বয়সে তাদের একমাত্র সন্তান অথৈর হাত আগুনে পুড়ে যায়। সে সময় চিকিৎসকরা একটু বড় হলে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। কিন্তু আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে তা করা সম্ভব হয়নি। ২০২২ সালের ২১ আগস্ট খুলনা সরকারি শেখ আবু নাসের হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে যান সহযোগী অধ্যাপক ডা. নিশাত আবদুল্লাহ শিগগিরই অপারেশন করতে বলেন। ডাঃ আবু নাসের হাসপাতালে অপারেশন করতে চেয়েছিলেন। এর পরিবর্তে হক নার্সিং হোম নামে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে অপারেশনের পরামর্শ দেন নিশাত আবদুল্লাহ।

নুসরাত আরা ময়না জানান, গত ১৮ জানুয়ারি আঙুলের অপারেশন করা হয়। এর পরে, প্রতিদিন ড্রেসিং করা উচিত। অপারেশনের পর হাতের অবস্থার অবনতি হলে দুই ঘণ্টা পর তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে হাতের ছবি পাঠাতে বলেন চিকিৎসক। নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিত ছবি পাঠাতে থাকি। এই উপলক্ষে ডাক্তার আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে অশ্লীল এবং পরামর্শমূলক বার্তা পাঠাতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি একাই দেখা করতে চাপ দিতে থাকেন। তার কথায় রাজি না হওয়ায় সে অথয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করে।

সংবাদ সম্মেলনে অথয়ের মা বলেন, গত ৬ ফেব্রুয়ারি ডাঃ নিশাত আবদুল্লাহ আমার মেয়েকে ড্রেসিং এর জন্য শেখপাড়া হক নার্সিং হোমের চেম্বারে যেতে বলেন। সন্ধ্যায় সেখানে গেলেও প্রায় দেড় ঘণ্টা আমাকে সেখানে রাখা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমি আমার মেয়েকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে গেলে ডাঃ নিশাত আবদুল্লাহ একপর্যায়ে আমার হাত ধরে টেনে হিঁচড়ে নানা রকম আপত্তিকর কথা বলে তার কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে আমি আমার মেয়েকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে আসি। তিনি ক্লিনিকের মালিককে জানালে নিশাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে আমাকে কিছু না বলে শাসান ডা. তিনি বলেন, ঘটনার পর অথয় পোশাক পরেছিলেন এক নার্স। এরপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ওষুধ দেন। পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে।

২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে হঠাৎ করেই আঙুল হারান অথয়। দ্রুত নার্সিং হোমে ছুটে গেলেন ডা. নিশাতসহ অন্য কেউ অথয়ের চিকিৎসা করতে রাজি হয়নি। রাত ১২ টার পর একরকম ড্রেসিং করে বাসায় ফিরলাম। এরপর থেকে অথয় কোনো চিকিৎসা নিচ্ছেন না। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আবু নাসের হাসপাতাল, হক নার্সিং হোমে গিয়েছি, কেউ অথয়ের চিকিৎসা করতে রাজি নয়। এরই মধ্যে তার বাবার নামে মামলা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।

উল্লেখ্য, খুলনায় চিকিৎসকের ওপর হামলা ও রোগীর মায়ের শ্লীলতাহানির ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় শহীদ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের চিকিৎসক নিশাত আবদুল্লাহ বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে সোনাডাঙ্গা থানায় রোগীর বাবা এএসআই নাইমুজ্জামান শেখসহ অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অপরদিকে হামলাকারী পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক নিশাত আবদুল্লাহ ও হক নার্সিং হোমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল হক ফকিরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এএসআই নাইমুজ্জামান শেখের স্ত্রী নুসরাত আরা ময়না বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নগরীর শেখপাড়া এলাকার হক নার্সিং হোমের অপারেশন থিয়েটারে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ করে পুলিশের এএসআই নাঈম ও তার সঙ্গীরা প্রবেশ করে। আব্দুল্লাহকে মারধর করেন শেখ নিশাত। ভাংচুরের পাশাপাশি অপারেশন থিয়েটার। এক মাস আগে অস্ত্রোপচার করা রোগীর ‘জটিলতার’ কথা বলে তারা এ হামলা চালায়। ডাঃ নিশাত বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এদিকে এ ঘটনায় গোটা এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি দুই পক্ষেরই।

Related Articles

Back to top button