দৈনিক খবর

হিরো আলমের শেষ, নাকি নতুন শুরু!

ভোটের লড়াইয়ে জিততে জিততে হেরে গেলেন দেশের সবচেয়ে আলোচিত ও সমালোচিত ব্যক্তিত্ব আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। মাত্র ৮৩৪ ভোটে পরাজিত হলেন আলোচিত এই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। তীরে এসেও শেষ পর্যন্ত তরী ডুবল হিরো আলমের।

দেশজুড়ে তিনি বরাবরই আলোচনার শীর্ষে থাকেন। কখনো অভিনয় করে, কখনো গান গেয়ে, কখনো কবিতা আবৃত্তি করে। এর আগেও নিজ এলাকা থেকে করেছিলেন জাতীয় নির্বাচন! তবে এবার তিনি চমকে দিতেই যাচ্ছিলেন গোটা দেশবাসীকে!

বগুড়ার-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৬৩ কেন্দ্রের প্রাপ্ত ভোটে এগিয়েও ছিলেন হিরো আলম। তবে শেষ পর্যন্ত সব কেন্দ্রের প্রাপ্ত ভোটে পরাজিত হন হিরো আলম।

ওই আসনে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন (মশাল) প্রতীকে ২০ হাজার ৪০৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম হিরো আলম ১৯ হাজার ৫৭১ ভোট পেয়ে প;রাজি;ত হয়েছেন।

হিরো আলম প্রথম দিকে বগুড়ার প্রত্যন্ত এরুলিয়া গ্রামে সিডি বিক্রির কাজ করতেন এবং পরবর্তীতে স্যাটেলাইট ক্যাবল ব্যবসায় নামেন। ক্যাবল সংযোগের ব্যবসা চলাকালে শখের বশে তিনি সঙ্গীত ভিডিও নির্মাণ শুরু করেন।

ইউটিউবে একের পর এক গান আপলোড করে ধীরে ধীরে আলোচনায় আসে হিরো আলম। ২০১৬ সালের দিকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা তাকে নিয়ে ট্র;ল এবং মি;ম তৈরি শুরু করলে দ্রুতই তিনি পরিচিত হয়ে উঠেন। এসময় ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমসহ আরও বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি তারকা আশরাফুল আলমের সাথে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন।

এভাবেই দ্রুত পরিচিত হয়ে উঠেন তিনি। এরপর শুরু করেন সিনেমা প্রযোজনা ও অভিনয়। এরপর বিবিসি হিন্দি, জি নিউজ, এনডিটিভি, ডেইলি ভাস্কর, মিড-ডেসহ ভারতের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমগুলো তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ফলে তিনি ভারতীয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মাঝেও আলোচিত হন হিরো আলম। ইয়াহু ইন্ডিয়ার এক জরিপ অনুসারে সেসময় ভারতীয় অভিনেতা সালমান খানের চেয়ে আলমকে বেশিবার গুগলে অনুসন্ধান করা হয়েছিল!

বেশ কিছু সিনেমা তৈরির পর গানের জগতে পা রাখেন হিরো আলম। বিখ্যাত গায়কদের গান গাইতে থাকেন তিনি। সম্প্রতি মিউজিক ভিডিও আকারে রবীন্দ্রসংগীতসহ বিভিন্ন গান ভুলভাবে উপস্থাপন করার জন্য গত বছরের শুরুতে তাকে আইনি নোটিশও দেওয়া হয়েছিল।

বি;কৃ;ত ও অ;শু;দ্ধ বাংলা শব্দ উচ্চারণসহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। তবে হিরো আলম স্বীকার করেছেন যে তিনি তাঁর অনুসারীদের জন্য তাঁর গান এবং অভিনয়ের গুণগত মান উন্নত করার চেষ্টা করবেন।

এরপর তিনি কবিতা আবৃত্তি করে চমকে দেন ভক্তদের। এছাড়া ২০১৯ সালে একুশে বইমেলায় তার আত্মজীবনী “দৃষ্টিভঙ্গি বদলান আমরা সমাজকে বদলে দেবো” প্রকাশিত হয়, যেটি বেশ আলোড়ন ফেলে দেয় পাঠকদের মাঝে।

প্রতিনিয়ত একের পর এক কর্মকান্ডের মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন হিরো আলম। তবে সর্বশেষ বগুড়ার-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনের উপনির্বাচনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত তীরে এসে তরী ডুবলো হিরো আলমের।

তবে নির্বাচনে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হিরো আলম মন জয় করেছেন জনগণের। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাকে নিয়ে বি;দ্রু;প অনেকটাই কমে এসেছে। এমনকি বগুড়ার-৪ আসনের উপনির্বাচনেও তাকে স;মর্থ;ন দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিশাল সংখ্যক মানুষ।

অনেকেরই প্রত্যাশা ছিল, বি;তর্ক ছাপিয়ে নতুন এক রেকর্ড করে বসবেন হিরো আলম। হয়ে যেতে পারেন এমপি! তবে শেষ পর্যন্ত থামতে হলো এই আলোচিত-সমালোচিত মিডিয়া ব্যক্তিত্বকে।

তবে এই পরাজয় কি থামাতে পারবে হিরো আলমকে? এটাই কি হিরো আলমের শেষ অধ্যায়? নাকি নতুন শুরুর বীজ তিনি আজই বপণ করে নিলেন! ভোটের মাঠে ব্যালট পেপারের জনপ্রিয়তা কিন্তু ভিন্ন ইঙ্গিতই দিচ্ছে! এখন সময়ই বলে দেবে, হিরো আলমের হিরোগিরির পরের অধ্যায়টা কি হয়!

Related Articles

Back to top button