Countrywideদৈনিক খবর

জেসমিনকে আটকের সেই সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ, র‌্যাবের ১১ সদস্য প্রত্যাহার

সম্প্রতি নওগাঁয় এক ভূমি অফিসের নারী কর্মকর্তাকে আটক করার পর র্যাব হেফাজতে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান এর পরেই শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা। এদিকে র‌্যাব হেফাজতে নওগাঁ ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিন (৩৮) নিহতের ঘটনায় জয়পুরহাট র‌্যাব ক্যাম্পের ১১ সদস্যকে প্রত্যাহার করে র‌্যাব-৫ (রাজশাহী) ব্যাটালিয়নে সংযুক্ত করা হয়েছে। তদন্তের অপেক্ষায় তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে তাদের কেউ কাজ করছে না। ১১ জনের মধ্যে, কোম্পানি প্রধান থেকে ড্রাইভার আছে. সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে জেসমিনকে যেখান থেকে আটক করা হয়েছে এবং যে হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করেছে র‌্যাব সদর দফতরের তদন্ত কমিটি। এছাড়া ওই নারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট জব্দ ও লেনদেনের তথ্য নেওয়া হয়েছে। জেসমিন ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে লেনদেন আছে কি না এবং মামলার অভিযোগ সঠিক কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এনামুল হকের অভিযানে প্ররোচনার তথ্য পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি এখন রাজশাহীতে অবস্থান করছে।

অন্যদিকে জেসমিনের মৃত্যুর এক সপ্তাহ পার হলেও পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হয়নি। জেসমিনের পরিবারের সদস্যরা অজানা কারণে লোকচক্ষুর আড়ালে থাকে। তারা মিডিয়ার সামনে কথা বলতে চান না।
এ ব্যাপারে জেসমিনের চাচা ও নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক মন্টু জানান, তার ভাগ্নি সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন। তার বিরুদ্ধে এলাকায় কোনো অভিযোগ নেই। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা না করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা হাইকোর্টের আদেশের খোঁজ করছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হাইকোর্ট কী নির্দেশনা দেয় তা দেখে পরিবারের পক্ষ থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মামলার প্রধান আসামি যুগ্ম সচিব আল আমিন গ্রেপ্তার! : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতারের একদিন পর ২৩ মার্চ জেসমিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন এনামুল হক। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, তার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে প্রতারণা ও প্রতারণা করা হয়েছে। মামলায় চাঁদপুরের আল আমিন নামে একজনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি একজন পেশাদার হ্যাকার। তবে ঢাকায় র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার আল আমিনের নতুন পরিচয় প্রকাশ করেছে ডিএমপির শাহজাহানপুর থানা পুলিশ। পুলিশ বলছে, আল আমিন মোবাইল ব্যাংকিং ডেভেলপমেন্টের এজেন্ট। তাদের কাছে শুধু সর্বশেষ তথ্য আছে।

এ বিষয়ে ডিএমপির শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আল আমিনের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। তবে আমার থানাধীন মালিবাগে তার একটি উন্নয়নের দোকান আছে বলে জানতে পেরেছি। ওই দোকান থেকে তাকে আটক করা হয়। এ কারণে র‌্যাব আসামিদের এই থানায় দিয়েছে। রব আল আমিনকে এ থানায় পাঠানো হলেও তার বিরুদ্ধে ডিএমপির কোনো থানায় কোনো মামলা হয়নি। পরে তাকে ৫৪ ধারায় সন্দেহভাজন অপরাধী হিসেবে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে আল আমিনের বিরুদ্ধে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় একটি মামলা রয়েছে বলে শুনেছি। তাকে আটকের বিষয়টি আমরা রাজপাড়া থানা পুলিশকে জানিয়েছি।

এদিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) রফিকুল আলম বলেন, যুগ্ম সচিব এনামুল হকের দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি আল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না, আমি জানি না।

ক্ষুব্ধ নওগাঁর সুশীল সমাজ : র‌্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ নওগাঁর সুশীল সমাজ। প্রতিদিনই চলছে বিক্ষোভ। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার প্রাণ কেন্দ্র মুক্তি মোড়ে সমাবেশ করে সুজন নওগাঁ জেলা শাখা। এর আগে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) নওগাঁ জেলা শাখার উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী বারের ১০ জন সিনিয়র অ্যাডভোকেট শুক্রবার নওগাঁ শহরে গিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। শনিবার (আজ) রাজশাহীতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্য তারা এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করবেন।

বাসের জেলা সমন্বয়কারী জয়নাল আবেদীন মুকুল জানান, জেসমিনের মৃত্যুতে স্থানীয় লোকজন অন্ধকারে রয়েছে। আমি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি, যাতে ভবিষ্যতে প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা এ ধরনের বেআইনি কাজে জড়িত হতে সাহস না পায়।

প্রতারণার অভিযোগ এনে ভূমি অফিসের এক নারী কর্মকর্তাকে আটকের পর র্যাব হেফাজতে মৃত্যু নিয়ে সারা দেশে চলছে আলোচনা এবং এই ঘটনার পিছনের কি উদ্দেশ রয়েছে তা নিয়ে অনেকেই কথা বলছে।

Related Articles

Back to top button