যৌন স্বাস্থ্যস্বাস্থ্য টিপস

বিবাহিত জীবনে যৌন মিলনের মানসিকতা তৈরির জন্য ৬ টি টিপস

আপনারা দুইজন-ই  ক্লান্ত। বাচ্ছারা ঘুমিয়ে পড়েছে। আপনি আপনার শারীরের ওজন নিয়ে সুখী নন। অথবা অফিসের কাজের চাপ নিয়ে চিন্তিত।

বিবাহিত যুগল (লং-টার্ম রিলেশানশীপে) নানাবিধ কারনে সন্ধ্যার পর স্বামী-স্ত্রী পরষ্পরের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে বালিশে মাথা গুজছেন অথবা টিভির রিমোর্ট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু স্বাস্থ্যকর যৌন সম্পর্ক-ই বৈবাহিক সম্পর্কের মূল নিয়ামক। এই বিষয়টি অবহেলা করলে অনৈতিক/পরকীয়া এমনকি সম্পর্ক ছাড়াছাড়ি পযর্ন্ত গড়াতে পারে।

সমসা ০১: সম্পর্কে একগুয়েমী।

সমাধান: প্রজ্জলীত করুন – প্রজ্জলীত হউন।

আপনি যখন লম্বা সময়ের সম্পর্কে থাকেন তখন আপনার জীবন একপ্রকার রুটিন মাপিক চলে। মানব মস্তিস্কে ডিপোমিন নামক একপ্রকার রাসায়নিক পদার্থ নিষ্কৃত হয় যা মস্তিস্কের আনন্দ সম্ভোগ সেলে আমাদের অনুভুতি গুলোকে বহন করে নিয়ে যায়। ডোপামিন মানুষের হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়, চোখের মনিকে প্রসারিত করে তোলে। নতুন প্রেমে পরা জুটির পেটে প্রজাপতি উড়ে বেড়ানোর যে স্বর্গীয় অনুভুতি হয়, তার জন্য দায়ী এই ডোপামিন।

যত দিন যেতে থাকে ডোপামিন নিঃসরন কমতে থাকে, তাই আস্তে আস্তে সেই প্রথম প্রেমের পুলকময় অনুভুতি কমতে থাকে। দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কে আরেকধরণের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয় যার নাম “অক্সিটোসিন”। এর প্রভাবে যুগল এর একজন আরেকজনের সান্নিধ্যে চরম শান্তি ও নিরাপত্তা বোধ অনুভব করতে থাকেন। সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠে। তাছাড়া অক্সিটোসিন শরীরের “করটিসল” নামক আরেকটি পদার্থের নিঃসরন কমিয়ে দেয়। “করটিসল” হলো স্ট্রেস হরমোন। সুতরাং দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কে আবদ্ধ যুগলরা কম স্ট্রেস অনুভব করেন।

ডিপোমিন সর্বদা একই প্রকার অনুভুতি সঞ্চালন করতে করতে যখন নতুন কোন সম্পর্কের ভিন্নতা পায় তখন অতিমাত্রায় সংবেদশীল হয়ে উঠে।

আপনি আমি চাইলেই সঙ্গী পরিবর্তন করতে পারবো না। তাই ডিপোমিনের প্রভাব কে কাজে লাগানোর জন্য সম্পর্কে অন্যান্য পরিবর্তন আনতে পারেন। যেমন – সময় পেলে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া, মিলনে আসন পরিবর্তন করা, মিলনের সময় এবং স্থান পরিবর্তন করা (এমনকি রান্নাঘর কিংবা টয়লেটে মাঝে মাঝে মিলন করা যেতে পারে)।

সমস্যা ০২: অনেক কাজ জমে আছে, অনেক ক্লান্ত লাগছে।

সমাধান: একটি রোমান্টিক ব্রেক নিন।

সব যুগল সারাদিনের লম্বা সময় এবং অনেক কাজের মাঝে থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসে রোমান্টিক একটি রাতের জন্য মনে আর জোর খুজে পাননা। এবার পরিবর্তনের সময় এসেছে। আপনাকে হিসেব কষে দেখতে হবে কোন বিষয়টি জরুরী। যৌন মিলন মোটের উপর মানসিক এবং শাররীক সুস্থ্যতার জন্য একটি প্রয়োজনীয় নিয়ামক। তাই সব সময় রাতের আঁধারের জন্য অপেক্ষা না করে সকাল কিংবা দুপুরে স্বামী/স্ত্রী এর জন্য কিছুটা সময় বের করে নিন। সারা দিন কাজের ফাকেঁ বাসায় স্ত্রীর কাছে ফোন করতে পারেন। মানসিক ভাবে পজেটিভ চিন্তা জমা করতে পারেন। যা মিলনকালে আপনাকে সচল করতে সাহায্য করবে।

সমস্য ০৩: কে সেই ব্যক্তি – যার সাথে আমি সংসার করছি?

সমাধান: পরষ্পরকে পুনরায় আবিষ্কার করুন – কোন প্রকার চাপ ছাড়া।

আপনি যদি কিছুদিন আপনার সঙ্গীর সাথে শাররীক মিলন করছেন না – তাহলে তার আগ্রহ হয়তো তার কাছে জোরপূর্বক চাওয়া মনে হতে পারে। তাই স্বাস্থ্যকর যৌন জীবনের জন্য সরাসরি মিলন শুরু না করে আগে ইশারা ইঙ্গিতে পরষ্পরের চাওয়ার কথা জানাতে পারেন। স্বামী-স্ত্রী পরষ্পরের সাথে যদি মধুর স্মৃতি বিজড়িত সময় না থাকে তাহলে যৌন চিন্তা ততটা শক্তিশালী হয়না। এজন্য কিছুদিন পর পর সপ্তাহ শেষে রোমাঞ্চকর কিছু প্ল্যান করতে পারেন। সিনেমা দেখা, বাহিরে খেতে যাওয়া ইত্যাদি গতানুগতিক কিছু না করে – হোন্ডা নিয়ে কোন দুর অচেনা গ্রামে ঘুরে আসা কিংবা কোন বাচ্চাসুলভ পাগলামী করতে পারেন। কোন এক কৃষকের ঘরে অজাচিত অতিথি হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে আসতে পারেন। আসার সময় তার হাতে কিছু টাকা দিয়ে আসেতে পারেন। তবে যাই করবেন – যেন সেটি সব সময় একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি না হয়। যে সকল পুরুষ তাদের স্ত্রীদের ঘরের কাজ করে দেয় এবং বন্ধুসুলভ ব্যবহার করে সে সকল যুগল মিলনকালে বেশি আনন্দ পেয়ে থাকে।

সমস্যা ০৪: আপনি আপনার শরীরের গঠন পছন্দ করেন না।

সমাধান: যা আপনি পছন্দ করেন তাতে মনোনিবেশ করুন।

যেকোন বিষয়ে সম্মুক্ষীন হবার মানসিকতা রাখুন। সব মানুষই কোন না কোন অপুর্নতা নিয়ে জন্ম গ্রহন করেন। নো ওয়ান ইজ পারফেক্ট! নিজের কোন বিষয়টি আপনার ভাল লাগে তা আবিষ্কার করার চেষ্টা করুন। বিধাতা যা দান করেছেন তা নিয়ে সুখী হবার চেষ্টা করুন। তবে যে সকল বিষয় অনেকটা নিজের হাতে তা পরিবর্তন করার চেষ্টা করুন। যদি মনে করেন আপনার ওজন কিছুটা বেশি তাহলে জিমে যোগ দিতে পারেন। নিজের নেগেটিভ দিকগুলো না দেখে “যার সাথে বসবাস করছেন” তার ভাল দিক গুলোর সুনাম করুন। তার যেসকল বিষয় আপনাকে মহিত করে তা শেয়ার করুন। পক্ষান্তরে সেও আপনার মাঝের সুন্দর দিকগুলো বলে আপনাকে উৎসাহীত করবে।

সমস্যা ০৫: যৌনমিলন যন্ত্রনাদায়ক।

সমাধান: নিরবে যন্ত্রনা সইবেন না। 

অনেকসময় মানসিক ভাবে আপনি মিলন করতে আগ্রহী নন। এবং আপনার শরীরও সায় দিচ্ছেনা। মিলন অনেক কারনে যন্ত্রনাদায়ক হতে পারে।  মাসিক ঋজচক্র স্থায়ীভাবে বন্ধ হবার পর অর্থাৎ নারীর ৫০ থেকে ৫৬ বছর বয়সের পর মাসিক ঋজচক্র স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তাই এই বয়সের পর যোনী স্বাভাবিক আদ্রতা হারিয়ে শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। তার ফলে মিলনকালে যন্ত্রনা হতে পারে। অনেকদিনের সংসার তাই হয়তো আপনি চুপ করে যন্ত্রনা সইবার মানসিকতা তৈরি হয়ে যায়। এটি ছাড়াও নানাবিধ কারনে মিলনে যন্ত্রনা থাকতে পারে। তাই এ সকল বিষয়গুলো সঙ্গীর সাথে সরাসরি আলোচনা করাই শ্রেয়।

সমস্য ০৬: এখনো আপনি যৌনমিলনের প্রতি আগ্রহী নন।

সমাধান: কারনগুলো চিহ্নিত করুন।

মিলনে অনীহা শুধুমাত্র বয়স বৃদ্ধির কারনে নাও হতে পারে। এর সাথে অন্যান্য অনেক কারন যুক্ত থাকতে পারে। যেমন –

  • দুশ্চিন্তা, ভয়, হরমোনাল অসামঞ্জস্যতাও যৌন অনীহার কারন হতে পারে।
  • পুরুষের ক্ষেত্রে কম বয়সে লিঙ্গোত্থান সমস্যার জন্য ডায়াবেটিস এবং হার্ট ডিজিজ দায়ী থাকতে পারে।
  • কিছু ঔষধ, যেমন – দুশ্চিন্তামুক্তির ঔষধ এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনের ঔষধ যৌনমিলনের অনীহা সৃষ্টি করতে পারে।
  • ধুমপান এবং মদ্যপান আপনার যৌনশক্তিকে হ্রাস করে দিতে পারে।
  • অনেক লম্বা সময় সাইকেল কিংবা মোটরসাইকেল চালনা থেকে যৌনক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বাইকের সিটে নারী কিংবা পুরুষের পুডিনডাল শিরা এবং ধমনী” তে রক্তসঞ্চালন কমিয়ে দেয়ার ফলে সে অঞ্চলের ক্রমশঃ কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়।
  • সঠিক মাত্রায় ঘুমানো অনেক অংশে সহযোগীতা করতে পারে।

Related Articles

Back to top button