দৈনিক খবর

৬৯ রাশিয়ার জাহাজকে জলসীমায় প্রবেশে বাংলাদেশের বাধা, জানা গেল কারণ

রাশিয়া থেকে আসা এবং দেশটির পতাকাবাহী ৬৯টি পণ্য বহন করে নিয়ে আসা জাহাজকে বাংলাদেশের কোনো সমুদ্রবন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেছে বাংলাদেশ সরকার। ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের বিষয়টির জেরে রাশিয়া থেকে আসা ঐ পন্যবাহী জাহাজগুলোকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যাতে কোনো ধরনের কূটনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি না হয় সে কারনে জাহাজগুলোকে বাংলাদেশের জলসীমায় ভিড়তে না দেওয়ারও সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে বাংলাদেশ।

গত মাসে রুশ পতাকাবাহী জাহাজ ‘উরসা মেজর’ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে যন্ত্রপাতি নিয়ে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে, যা মার্কিন দূতাবাসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মার্কিন দূতাবাস স্টেট ডিপার্টমেন্টকে জানিয়েছে, ‘উরসা মেজর’ জাহাজটি আসলে ‘স্পার্টা’ জাহাজ যা তাদের নিষি”দ্ধ তালিকায় রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার পর এটি ‘উরসা মেজর’ নিবন্ধন নামে কাজ করছে। পরে জাহাজটি বাংলাদেশে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয় এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া সমুদ্রবন্দরে নোঙর করে। সেখানকার জাহাজ থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি বাংলাদেশে আনা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘উরসা মেজর’কে ঘিরে যে ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে তা ঠেকাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকা ৬৯টি রুশ জাহাজ যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে ৪ জানুয়ারি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত ৫ জানুয়ারি দেশের সব সমুদ্রবন্দরকে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের নির্দেশনা পাঠায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। গত ১১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দর এ নির্দেশনা পায়। বাংলাদেশে এর আগে একসঙ্গে এতগুলো কার্গো জাহাজ নিষিদ্ধ করার নজির নেই।

বাংলাদেশের জলসীমায় পণ্য লোড করার আগে, এই ধরনের জাহাজগুলিকে প্রথমে বাংলাদেশ নৌপরিবহন দপ্তর থেকে অনুমতি বা ‘ওয়েভার’ সনদ নিতে হয়।। জাহাজগুলি বিদেশী বন্দরে পণ্য লোড করে শুধুমাত্র অনুমতি সাপেক্ষে। এই কাজটি নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অধীনস্থ একটি সংস্থা দ্বারা তত্ত্বাবধান করা হয়।

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বলেন, গত বুধবার আমরা এ নির্দেশনা পেয়েছি। তালিকার সমস্ত জাহাজ রাশিয়ান।

নৌপরিবহন বিভাগ সার্টিফিকেট না দিলে জাহাজটিকে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। এরপর জাহাজটি বন্দরের জলসীমায় পৌঁছালে বন্দর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখভাল করেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর। তিনি বলেন, আমরা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পেয়েছি। কথা হয়েছে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সঙ্গে। বন্দর কর্তৃপক্ষও সতর্ক রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় সাতটি রুশ কোম্পানির ৬৯টি জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তেলের ট্যাঙ্কার, সাধারণ কার্গো জাহাজ, রো-রো জাহাজ, ড্রেজার, টাগ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্যাটাগরির জাহাজ। এসব জাহাজকে শুধু বন্দরে প্রবেশই নিষেধ নয়, একই সঙ্গে বাঙ্কারিং, রিফুয়েলিং, সাময়িক নিবন্ধন থেকে শুরু করে সব ধরনের সেবা দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে চট্টগ্রামসহ দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একই সাথে পতাকা নিবন্ধন সংস্থাগুলিকে অন্যান্য নৌ পরিষেবা ইত্যাদি নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা সহ জাহাজগুলিকে স্থায়ী বা অস্থায়ী নিবন্ধন না দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। বন্দর ছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের এমডিসহ বিভিন্ন দপ্তরে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারা রাশিয়ান ‘উরসা মেজর’ জাহাজের শিপিং এজেন্ট বাংলাদেশি ইন্টারপোর্ট শিপিং লিমিটেডের (মংলা) শিপিং এজেন্ট ক্যাপ্টেন শাহীন ইকবাল দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, জাহাজটি দেশে আসার পর আমরা জানতে পারি। এটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ছিল। পরে আমরা ঢুকতে দেইনি। এখন হলদিয়ায়।’

বাংলাদেশ সবসময় আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করে থাকে। ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে যার কারণে বাংলাদেশ সাধারনত কোনো দেশের আভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। তবে বাংলাদেশের ওপর অন্য দেশের হস্তক্ষেপ বরদাশত করবে না।

Related Articles

Back to top button