দৈনিক খবর

৩০ বছরের পেশা ইঁদুর ধরা, ইঁদুর ধরে জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন আনোয়ার

ইঁদুর আনোয়ার নামটা কে দিয়েছিল কেউ জানে না। আবার ভালো নামে খোঁজ করলে চট করে কেউ বলতে পারবে না। তবে ‘ইঁদুর আনোয়ার’ কোথায় জানতে চাইলে কেউ না কেউ হাত তুলে দেখিয়ে দেবে ক্ষেতের দিকে। বলবে ঝোপ ঝাড়ের আড়ালে যে উবু হয়ে বসে গর্ত হাতড়াচ্ছে সেই লোকটাকেই আপনি খুঁজছেন। মাঠে ঘাটে এভাবেই ইঁদুর ধরেন রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাটের বাসিন্দা মহম্মদ আনোয়ার হোসেন। তিনি জাতীয় খেতাবজয়ী ইঁদুর শিকারী।

ষাট বছর পার করা বৃদ্ধ আনোয়ার হোসেনের লক্ষ্য, কৃষি জমিতে উৎপাত করা ইঁদুর ধরা। এই কাজ তিনি বছরের পর বছর করে আসছেন। বাংলাদেশ কৃষি অধিদফতরের নজরে আনোয়ার হোসেন বিশেষ এক ব্যক্তি। কারণ, তিনি ইঁদুর ধরে উপকার করছেন। জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বিভিন্ন হাট ও বাজারে ইঁদুর মারার ওষুধ বিক্রি করেন। তিনি দিনভর ইঁদুর ধরেন। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে ইঁদুর আনোয়ার হিসেবেই চেনেন।

ইঁদুর আনোয়ার জানিয়েছেন, প্রতিবছর কৃষি অফিসে গয়ে ১০ থেকে ১২ হাজার ইঁদুরের লেজ জমা করি। সেই হিসেবে কৃষি দফতর থেকে টাকা ও উপহার পাই। দেওয়া হয় মানপত্র। আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, কৃষকরা আমাকে ডেকে নিয়ে যায় ইঁদুর ধরার জন্য। আমি ক্ষেত ও বাড়ি থেকে ইঁদুর ধরে আনি। মৃত ইঁদুরের লেজ জমা করে রাখি। ইঁদুর ধরার জন্য কৃষকরা খুশি হয়ে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা বকশিশ দেয়। সম্প্রতি বাংলাদেশে এই ইঁদুর আনোয়ারকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে চর্চা চলছে।

তাঁর অদ্ভুত জীবনযাত্রায় কৌতুহলী হন অনেকে। সংবাদমাধ্যমে ইঁদুর আনোয়ারের কাজকর্ম দেখানো হয়। কেন তিনি হাজার হাজার ইঁদুরের লেজ কেটে রেখে দেন তা নিয়েও অনেকে আগ্রহী হন। ইঁদুর আনোয়ার জানিয়েছেন, আমি ১৬ বছর বয়স থেকে ইঁদুর ধরি। ইঁদুর ধরার জন্য আমি কোনও মন্ত্র পড়ি না। এই প্রাণী ধরার জন্য আছে কিছু কৌশল। আমাকে বহু মানুষ ইঁদুর আনোয়ার হিসেবেই ডাকেন। এতে খুশি হই।

কৃষি জমিতে ইঁদুর বাসা তৈরি করে। হাজার হাজার ইঁদুরের হানায় কৃষকের ক্ষতি হয়। আনোয়ার হোসেন ওরফে ইঁদুর আনোয়ার জানিয়েছেন, ইঁদুর ধরে কৃষকদের ক্ষতি থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। প্রতিবছর আক্কেলপুর কৃষি অফিসে গিয়ে মরা ইঁদুরের লেজ জমা দিই। জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযানে অংশগ্রহণ করেছি। দেশের কৃষি অধিদফতর থেকে কয়েকবার জাতীয় পুরস্কার ও সনদ পেয়েছি। জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন জানিয়েছেন, ইঁদুর ফসলের জন্য খুব ক্ষতিকর প্রাণী। প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে উৎপাদিত ফসল ইঁদুরের পেটে চলে যাচ্ছে।

ফলে ইঁদুর নিধন অভিযান করতে হয়। এই ইঁদুর নিধনে সেরা অবস্থানে রয়েছে আনোয়ার হোসেন। স্থানীয় কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, ইঁদুরের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলাম। পরে ইঁদুর আনোয়ারকে বাড়িতে ডাকলে তিনি সব ইঁদুর ধরে মেরে ফেলেন। আমার ফসলের ক্ষেতের ইঁদুরও মেরে ফেলেন আনোয়ার। এখন খানিকটা শান্তি। আবার ইঁদুর আসবে। তখন আবার ইঁদুর আনোয়ারকে খবর দিতে হবে।

Related Articles

Back to top button