দৈনিক খবর

হাওরের বুকে হলুদ সূর্য, তেলের চাহিদা মেটাবে সূর্যমুখী

সারি সারি সূর্যমুখীগাছের ডগায় হলুদ রঙের বড় বড় ফুল। হাওরজুড়ে যেন হলুদ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। দিগন্ত জোড়া সেই হলুদের সমারোহে হারিয়ে যেতে চান সবাই। প্রতিনিয়ত তাই পর্যটকরা ভিড় করছেন সেখানে। কৃষি বিভাগ বলছে, তেলের চাহিদা মেটাতে সরকার সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের প্রণোদনাসহ উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর এখন হলুদ সূর্যের রাজ্য।

চারদিকে হলুদ ফুলের মন মাতানো ঘ্রাণ আর মৌমাছির গুনগুন শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে কৃষকের ফসলি জমি। সব বয়সী দর্শনার্থীরা সেখানে ঘোরাঘুরি করছেন, ছবি তুলছেন। সকাল গড়িয়ে বিকেলে সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ে, তখন হাওরের সৌন্দর্য কয়েক গুণ বেড়ে যায়। গোধূলিতে সূর্যমুখীর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন পর্যটকের ভিড় জমে হাকালুকির বুকে। সরেজমিনে হাকালুকি হাওরের সূর্যমুখী বাগানে গিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায়।

হাওরের চাষিরা জানান, সূর্যমুখী চাষ পদ্ধতি মোটামুটি সহজ। প্রতি বিঘা জমিতে এ ফুল চাষ করতে তিন কেজি বীজ, সামান্য সার ও কী’টনাশক দরকার হয়। সব মিলিয়ে খরচ হয় দুই থেকে তিন হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে লাভের পরিমাণও বেড়ে যায়। তাই দিন দিন সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন হাওরের কৃষকরা।

হাওরে সূর্যমুখী চাষি তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি প্রায় দুই বিঘা জমিতে চাষ করেছি। ফলন খুব ভালো হয়েছে। সরকারের কাছ থেকে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে পরামর্শের পাশাপাশি বিনা মূল্যে বীজ পেয়েছি। ভবিষ্যতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সূর্যমুখী চাষ বাড়াব।’

এদিকে, মৌলভীবাজারের মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘সূর্যমুখী বাগানে প্রথমবারের মতো এলাম পরিবার নিয়ে। সূর্যমুখী ফুল দেখে খুবই ভালো লাগল।’

এক পর্যটক বলেন, ‘এখানে ঘুরতে এলে মানুষ নিরাশ হবে না। এই ফুল থেকে আবার খুব দামি তেল তৈরি হয়। একই সঙ্গে তেল ও ফুল দুটোই খুব ভালো। মানুষের উচিত বেশি বেশি করে সূর্যমুখী চাষ করা।’

জানা যায়, মূলত দেশের চাহিদা মেটাতে তেল উৎপাদনের লক্ষ্যে সরকার সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের প্রণোদনাসহ উৎসাহ দিচ্ছে। এ বছর হাইসান-৩৩, আরডিএস ২৭৫ জাতের সূর্যমুখী আবাদ করা হয়েছে। প্রণোদনার আওতায় মৌলভীবাজারের জুড়ীতে এবার ২১০ জন কৃষক ২১০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘জুড়ী উপজেলায় মোট ২৮ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। কৃষকরা যেন লাভবান হন, সেই লক্ষ্যে সরকার প্রণোদনা দিচ্ছে। বাজারে সূর্যমুখীর চাহিদা ও ভালো দাম এবং উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় এ বছর ভালো ফলনের মাধ্যমে চাষিদের মুখে হাসি ফুটবে বলে আমরা আশা করছি। ভোজ্যতেল হিসেবে সূর্যমুখী তেল গুণগত মানের দিক থেকে বেশ ভালো।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জেলায় ধীরে ধীরে সূর্যমুখীর চাষ বাড়ছে। এ চাষে রোগবালাই ও খরচ কম হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহও বাড়ছে। চাষিদের সব ধরনের সরকারি সহায়তা দেয়া হচ্ছে।’

Related Articles

Back to top button