দৈনিক খবর

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ৪-৫ লাখ লোক মারা যাবে, এ নিয়ে এবার মুখ খুললেন ফখরুল

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), দলটি বাংলাদেশের অনেক প্রাচীন এবং বড় রাজনৈতিক দল। তবে এই দলটি দীর্ঘ অনেক বছর ধরে রয়েছে ক্ষমতার বাইরে। আর এই কারণে দলের অবস্থা এখন একেবারেই করুন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বিএনপি নতুন করে ক্ষমতায় এলে কি হবে এমন একটি প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে সারা দেশে। এ বার এ নিয়ে কথা বললেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল অধ্যাপনা থেকে পুরোদস্তুর রাজনীতিক। বিরোধী বিএনপি’র মহাসচিব। কথা বলেন সোজাসাপ্টা। দীর্ঘদিন রাজনীতিতে থাকলেও গায়ে ময়লা লাগেনি। ৭৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ এখন পর্যন্ত ৩৮৩ দিন জেলে কাটিয়েছেন। ৮৯টি মামলা মোকাবিলা করছেন এখন। বৃহস্পতিবার কথা হয়েছিল, তবে তা সংক্ষিপ্ত। ভবিষ্যৎ নির্বাচন নিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনে যেতে চাই।

কিন্তু কোন নির্বাচন। আমরা এমন নির্বাচনে যেতে পারি না যেখানে জনগণ ভোট দিতে পারে না। আমরা পরিষ্কার, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বিএনপির পক্ষে অসম্ভব। অতীত অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। আর সংলাপের কথা বলছেন? আমি বলব এটা একটা রসিকতা। প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে আমরা সংলাপে যোগ দিয়েছি। কি লাভ হয়েছে? একটি দাবিও তিনি মানেননি। তাদের নেতাদের বক্তৃতা শুনে মনে হচ্ছে বিরোধী দল সংলাপে অংশ নিলেই সংকট কেটে যাবে। খালিস নিয়্যাহ নিয়ে সংলাপ না হলে তা হবে অর্থহীন। তার মানে আপনি সংলাপে যাচ্ছেন না? এই অর্থহীন সংলাপে যাবার কি দরকার বলুন। তাই সংলাপের প্রশ্নই আসে না। বলা হয় নাকি আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন ক্ষমতায় এলে চার থেকে পাঁচ লাখ মানুষ মারা যাবে। কী যে বলে! দেশ কি মগ হয়ে যাবে? দেশে আইন থাকবে না! আমরা আইন হাতে তুলে নেব না। আমরা আইনের বাইরে কোথাও যাব না।

তাছাড়া ওরা ভয় পায় কেন? সোজা কথায়, তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য এসব কথা বলছে। এটা কোন ভাল কাজ করবে না জনসমর্থন হারিয়ে নেতারা যে এসব কথা বলছেন তা জনগণ ভালো করেই জানে। উদ্দেশ্য একটাই- আতঙ্ক সৃষ্টি করা, বিদেশীদের বিভ্রান্ত করা। ক্ষমতায় এলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে? বিষয়টি আমরা আগেও স্পষ্ট করেছি। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক চমৎকার। তারা আমাদের বন্ধু। আমাদের মধ্যে আগে ভালো সম্পর্ক ছিল। আমরা এই সম্পর্কের উন্নতি অব্যাহত রাখব। আমরা আমাদের দাবি পূরণের চেষ্টা করব। কোটি ডলারের প্রশ্ন, ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? আমি জানি না কেন এই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। আমাদের দলের চেয়ারপারসন আছে। এছাড়াও রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. তাদের একজন প্রধানমন্ত্রী হবেন। তা ছাড়া, এই মুহূর্তে এটি প্রধান জিনিস নয়। আমরা আরও বলেছি, বিএনপির নেতৃত্বে সরকার হলেও কিছু সময়ের জন্য জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। বিগত বছরগুলোতে দুর্নীতি, অন্যায় ও অনিয়মে দেশ ডুবে গেছে। এটা পরিষ্কার করাই হবে সরকারের প্রধান কাজ। প্রসঙ্গটি তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়ে পরিস্থিতি বিভ্রান্ত করছে। সরকার বলছে আপনাদের ১০ ডিসেম্বরের আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। কেন ব্যর্থ হবে, বরং সরকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এটা খুব উদ্দেশ্যমূলকভাবে ৭ই ডিসেম্বর হামলার মাধ্যমে নাশকতার চেষ্টা করে। তারপরেও আমি বলবো এটা ধ্বংস হয়নি। কারণ আমরা মনে করি, ১০ তারিখ গোলাপবাগে যে জনসভা হয়েছিল তা ছিল স্বতঃস্ফূর্ত ও ব্যাপক। আন্দোলন কখনো বাড়ে, কখনো পড়ে। আমরা এখনো বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে এগোচ্ছি। গ্রামে-গঞ্জে ইউনিয়নে আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়েছি। তাই আমরা মনে করি না যে আন্দোলন মন্থর হয়েছে বা আমরা পিছিয়ে গেছি। তাহলে কি বলছেন, আন্দোলন ব্যর্থ হয়নি? আবার, ব্যর্থতার প্রশ্নই আসে না।

বিভিন্ন জরিপ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ মানুষ বিএনপির এই আন্দোলনকে সমর্থন করছেন। জনগণ কেন বিএনপির দিকে ঝুঁকছে? সরকারের চরম ব্যর্থতা, একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করায় অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সর্বোপরি তাদের ব্যাপক দুর্নীতি। মানুষ সঞ্চয় ভাঙছে। তাদের পিঠ দেয়ালে লেগে আছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দিনে কী হবে আল্লাহই জানে। আমরা জনগণের সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকব। আপনারা শুধু রাজনীতি নিয়ে আন্দোলন করছেন। তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নানা কর্মসূচি দিচ্ছে। এই সব সত্য নয়। মানুষের অভিযোগ, কষ্টের ভিত্তিতে আমরা কর্মসূচি দিচ্ছি। কারণ ক্ষমতার পালাবদল হলে কিছু দাবি সামনে আসতে পারে। দিন শেষে আমরা বলব, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব ছিল, আপনাদের দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চাইলে রাজনীতিতে আসতে পারেন। আপনি এই সম্পর্কে কিছু বলতে পারেন? এটা মজার এবং অনুসন্ধানমূলক. সরকার আন্তরিক হলে বেগম জিয়াকে মুক্তি দিচ্ছে না কেন? প্রথমে আসে স্বাধীনতার প্রসঙ্গ, তারপর রাজনীতি। তারা একটি ফাঁদ পেতে ছিল. আমরা সেই ফাঁদে পা দিইনি। আবার সরকার রাজনীতির কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে যেখানে তারা তাকে জামিন দেয় না। ধরা যাক, সরকার দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। তাহলে কি করবেন? আন্দোলন, চূড়ান্ত আন্দোলন। দশ দফা দাবি মেনে নিতে সরকারকে বাধ্য করব। এটাই আমাদের শেষ কথা। ২০১৮ সালের মতো নির্বাচনে যাওয়া উচিত নয়? কোন প্রশ্ন না. তবে অনেকেই বলছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করা আপনার ভুল সিদ্ধান্ত। মোটেই না স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তারা যেভাবে হস্তক্ষেপ করছে তাতে মানুষ আগ্রহী নয়।

মানুষ ভোট দিতেও আসে না। সব মিলিয়ে ভোট কলঙ্কিত। আত্মবিশ্বাস কমে গেছে। এটি পরিবর্তন করতে, পুরো সিস্টেমটি সংশোধন করতে হবে। আর এটা সম্ভব হচ্ছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে। আপনি খুব সম্প্রতি বলেছেন যে পাটানোর যেকোনো নির্বাচন প্রতিহত করা হবে। কিন্তু কিভাবে? অতীত অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। মির্জা ফখরুল জোর দিয়ে বলেন, জনগণ প্রতিহত করবে। তারা নির্বাচন করতে পারে কিন্তু তা গ্রহণযোগ্য হবে না। যেহেতু ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন হয়নি। আগাম নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা আছে কি? তারা অনেক কৌশল নিচ্ছে এবং নেবে। এটা সাহায্য করবে না।

এককথায় বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা কী? ভয়াবহ। মানুষ অসহায়। বাঁচার জন্য লড়াই করছে। অর্থনৈতিক সংকট এতটাই তীব্র যে, মানুষ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

প্রসঙ্গত, এ দিকে সামনের নির্বাচনকে আরো আগের থেকে আরো বড় একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন মির্জা ফখরুল। তারা যে কোনো মূল্যে আবারো যেতে চায় দেশের ক্ষমতায় করতে চান মানুষের উন্নয়ন।

Related Articles

Back to top button