দৈনিক খবর

শেষ পর্যন্ত জাপানি মা ও বাংলাদেশি বাবাকে ভিন্ন এক পরামর্শ দিল আদালত

বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফ এবং জাপানি মা এরিকোর পারিবারিক বিষয়টি নিয়ে আদালত থেকে নানা ধরনের নির্দেশনা দিলেও স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি। এই বিষয়টিকে মানবিক দিক দিয়ে বিবেচনা করে আদালত রায় দেয়। কিণ্তু এই রায়ে মেয়ে দুটিকে মা নাকানোর কাছে রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। তবে এই রায়ের বিপরীতে আপিল করেন বাবা ইমরান। এবার সেই আপিলের প্রেক্ষিতে এবার ভিন্ন এক নির্দেশ দিল আদালত।

জাপান থেকে আসা দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় নিয়ে আদালত তাদের জাপানি মা এরিকো এবং বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফকে আদালতের বাইরে বিষয়টি মিমাংসা করার পরামর্শ দেন। ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এএইচএম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া মেয়ে দুটিকে হেফাজতে নিতে ইমরান শরীফের করা আপিলের শুনানি নিয়ে এ পরামর্শ দেন।

একই বিষয়ে আজ হাইকোর্টে শুনানি থাকায় আপিলকারীর বাবা ইমরান শরীফের আইনজীবী শুনানি পিছিয়ে দিতে সময় চেয়ে আবেদন করেন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ২৪ মে শুনানির জন্য নতুন তারিখ ধার্য করেন।

নাকানো এরিকো এবং ইমরান শরীফ তাদের দুই সন্তানের হেফাজত এবং অভিভাবকত্বের জন্য ২০২১ সাল থেকে মামলা করে আসছেন। গত ২৯ জানুয়ারি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান সন্তানদের হেফাজতে বাবা ইমরান শরীফের করা মামলা খারিজ করে দেন।

পরদিন ওই রায়ের বিরুদ্ধে ঢাকা জেলা জজ আদালতে আপিল করেন ইমরান শরীফ। ১৬ ফেব্রুয়ারি ইমরান শরীফের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন আদালত। একইসঙ্গে দুই সন্তান কার সঙ্গে থাকবে, বিষয়টি সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিতে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

২০০৮ সালে, বাংলাদেশী-আমেরিকান নাগরিক ইমরান শরীফ (৫৮) এবং জাপানি ডাক্তার নাকানো এরিকো (৪৬) বিদ্যমান জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করার পর টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের দাম্পত্য জীবনে তিনটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তারা তিনজনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী ছিল।

২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারী, ইমরান এরিকোর সাথে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন। ওই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি দুই মেয়েকে (বড় ও মেজো) নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট্ট মেয়েটি জাপানে রয়েছেন। এরপর মেয়েদের ফিরিয়ে নিতে একই বছরের ১৮ জুলাই বাংলাদেশে আসেন মা এরিকো। তাদের ফেরত পেতে তিনি গত ১৯ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন। অন্যদিকে, ছোট মেয়েকে ফেরত পেতে পৃথক রিট করেন ইমরান।

একই বছরের ২১ নভেম্বর হাইকোর্ট পৃথক রিটের শুনানি শেষে মেয়ে দুটিকে তাদের বাবা ইমরানের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এরিকো এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন; যা চেম্বার আদালতের মাধ্যমে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আসে।

আপিল বিভাগ গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এরিকের আবেদন (লিভ টু আপিল) নিষ্পত্তি করে একটি আদেশ জারি করে। আদেশে বলা হয়েছে, ঢাকার পারিবারিক আদালতে বিচারাধীন মামলা (মেয়ের বাবা ২০২১ সালে দায়ের করেছেন) নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জাপানের দুই মেয়ে তাদের মায়ের হেফাজতে থাকবে। তবে আদেশে বলা হয়েছে, মেয়েদের বাবারা তাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন। আপিল বিভাগের আদেশের অনুলিপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে সংশ্লিষ্ট পারিবারিক আদালতকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদেশে আরও বলা হয়, মামলার পরিস্থিতি ও মেয়েদের স্বার্থ বিবেচনা করে তাদের এই আদালতের এখতিয়ারের বাইরে (দেশের বাইরে) নেওয়া যাবে না। তবে এরিকো নাকানো তার দুই সন্তানকে নিয়ে জাপানে যাওয়ার জন্য গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় পুলিশ তাকে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়।

তবে নাকানো এবং ইমরান শরীফের বিষয়টি মানবিক দিক থেকে দেখার কথা বলা হলেও নানা কারনে এটি একটি জটিল বিষয়। তাই মা এবং বাবা দুজনকেই ফের সাংসার শুরু করার পরামর্শ দিলেও তারা ভিন্ন মত দেন। এদিকে বিষয়টি যেহেতু পারিবারিক তাই পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি নিস্পত্তির পরামর্শ দেওয়া হলেও সেখানে সঠিক কোনো সুরাহা মিলছে না।

Related Articles

Back to top button