দৈনিক খবর

সেই তাকসিমের পাশে ওয়াসার কর্মকর্তারা-কর্মচারীরা, নির্দেশনা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন এক কর্মকর্তা

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. তাকসিম এ খানের বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। আর সেই তথ্যটি হলো তাকসিম এ খানের যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি বাড়ি রয়েছে যেগুলোর জন্য তিনি বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ দেশটিতে পাচার করেছেন। এদিকে কিছুদিন আগে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তিনি সূদূর যুক্তরাষ্ট্রে বসে অফিস করছেন। এছাড়াও তিনি ওয়াসার এমডি হিসেবে ছয় ছয়বার পুনরায় নিয়োগ পেয়ে আলোচনায় রয়েছেন। এসব ছাড়াও তিনি নানা ভাবে কৌশলে অর্থ আত্মসাৎ করে দেশজুড়ে আলোচিত-সমালোচিত।

এমডি দেশব্যাপী যখন আলোচিত-সমালোচিত, তখন সংগঠনটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তখন গুরু দায়িত্ব ভেবে কথা চিন্তা করে মাঠে নেমে পড়েন।

বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) কারওয়ান বাজারে ঢাকা ওয়াসা ভবনের সামনে তাকসিম এ খানের পক্ষে সংগঠনের প্রায় সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন।তবে প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেওয়া অনেকে নিজ ইচ্ছায় আসেননি। তাদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে সমাবেশে যোগ দিতে বলা হয়েছে।

এমনকি র‌্যালিতে অংশ নেওয়া অধিকাংশ কর্মকর্তাকেও গল্প-গুজবে ম’গ্ন থাকতে দেখা গেছে। তাদের কাছে এটা ছিল প্রতিবাদ মি”ছিলের চেয়ে মিলনমেলা।

সকাল ৯টা থেকে ঢাকা ওয়াসার প্রধান কার্যালয় ছাড়াও ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কারওয়ান বাজারে ভিড় জমাতে থাকেন। সকাল ১০টায় মি”ছিল শুরু হয়। প্রথম ২০মিনিটের জন্য, ওয়াসার এমডির পক্ষে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখিয়ে একটি নীরব প্রতিবাদ চলে। এরপর অবশ্য তারা তাকসিমের পক্ষে স্লো”গান দিতে থাকে। তাদের মতে, তাকসিমের বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদ মিথ্যা ও বানো’য়াট। তাদের এমডিরা ভালো মানুষ, দুর্নীতি করতে পারে না।

বিক্ষো”ভে যোগ দেন ওয়াসার কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম, তিনি একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমাদের স্যারের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। এ নিয়ে ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিক্ষো”ভ করছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে কি এক ব্যক্তির পক্ষে ১৪টি বাড়ি কেনা সম্ভব?

পুরান ঢাকার ওয়াসার প্রথম জোনের কর্মকর্তা জিয়া উদ্দিন বলেন, আমরা স্বেচ্ছায় প্রতিবাদ সমাবেশে এসেছি। সংবাদপত্র মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। স্যার সৎ মানুষ। তিনি দুর্নীতি করতে পারেন না।

মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন নামে আরেক কর্মকর্তার ভাষ্য, স্যার, বহু বছর ধরে এমডির পদে আছেন। তিনি দুর্নীতিবাজ হলে প্রধানমন্ত্রী তাকে অপসারণ করতেন! স্যার, দায়িত্বে থাকায় ওয়াসার অনেক উন্নতি হয়েছে।

ঘড়িতে সময় সাড়ে এগারোটা। ওয়াসার পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে লিখিত বক্তব্যের চিঠি দেওয়া হয়। সেখানে লেখা হয়, ঢাকা ওয়াসা কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান নয়। ওয়াসার সকল অর্জন সম্ভব হয়েছে এমডি তাকসিম এ খানের হাত ধরে বা তার দক্ষ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে।

লিখিত প্রতিবাদে আরও বলা হয়, ওয়াসার তাকসিমের যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি বাড়ি! এ খবর প্রকাশের পর ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে সর্বস্তরে। এসব মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যের মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসাকে ধ্বংস করার অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ওয়াসার এমডির নাম জড়িয়ে একটি কাল্পনিক গোয়েন্দা গল্প প্রকাশ করা অনৈতিক।

প্রায় ৪৫ মিনিট পর ওয়াসা মাইকিং করে বিক্ষোভ কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করে। কিন্তু কিছু উত্সাহী কর্মকর্তা আরও ১৫ মিনিটের জন্য এটিকে দীর্ঘায়িত করেন। কোম্পানির এমডি সম্পর্কে প্রতিবেদনকে ‘ভুয়া’ ও ‘বানোয়াট’ বলে আখ্যায়িত করতে থাকেন এসব উৎসাহী কর্মকর্তারা। শেষ পর্যন্ত এসব উদ্যমী কর্মকর্তাদের জন্য বেলা ১১টায় দ্বিতীয়বারের মতো মাইকিং করে বিক্ষোভ সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করেন ওয়াসার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিতে কারওয়ান বাজারে আসা ঢাকা ওয়াসার বিভিন্ন এলাকার অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী সার্বক্ষণিক ব্যক্তিগত আলাপচারিতা ও ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন। অনেকের কাছে এই প্রতিবাদ সমাবেশ হয়ে ওঠে পুনর্মিলনী মেলার মতো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াসার মহাখালী অঞ্চলের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আসতে হবে। আমরা সবাই এসেছি। অনেক পুরনো সহকর্মীর সঙ্গে এখানে দেখা হয়েছে। একটা আড্ডাও হয়ে গেল।

ওয়াসা জানায়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরটি মিথ্যা, বা”নোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) একেএম শহীদ উদ্দিন বলেন, দৈনিক সমকালের প্রকাশিত খবরটি মিথ্যা। আমরা কথা বলছি. ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অন্যদের সঙ্গে কথা বলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের ১৪টি বাড়ির বিষয়ে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের সিনিয়র আইনজীবী খুরশীদ আলম খান দৈনিক সমকাল পত্রিকায় গত ৯ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইঞ্জিনিয়ার তাকসিম এ খান যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি বাড়ির মালিক বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব বাড়ির দাম হাজার কোটি টাকা। ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে দুদককে জানাতে বলেছেন আদালত।

তবে মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে তাকসিম এ খান দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রে তার কোনো বাড়ি নেই। তার স্ত্রীর নামে একটি বাড়ি আছে। সেখানে ১৪টি বাড়ি থাকার মিথ্যা খবর দেওয়া হয়েছিল।

২০০৯ সালের দিকে ইঞ্জিনিয়ার তাকসিম এ খান ঢাকা ওয়াসায় উচ্চ পদে (এমডি) নিয়োগ পান। ধাপে ধাপে তার চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয় যার কারণে তিনি সেই অবস্থানেই আছেন। বারবার নিয়ম ভেঙে তাকে তার পদে বার বার পুনর্নিয়োগে দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে। প্রথম নিয়োগ দানের পর নিয়মের তোয়াক্কা না করে তাকে মোট ছয়বার মেয়াদ বাড়িয়ে রাখা হয়েছে।

Related Articles

Back to top button