দৈনিক খবর

অস্বাভাবিক খরচ বাড়ায় হজযাত্রায় ভাটা, নিবন্ধন মাত্র ১০ হাজার

এবার বাংলাদেশের মুসলমানদের তীব্র আগ্রহ থাকার পরও খরচ বেড়ে যাওয়ায় হজের নিবন্ধনে ভাটা পড়ছে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন। অথচ গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৯ হাজার ৩৫২ জন হজের জন্য নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। নিবন্ধনের শেষ সময় গতকাল ২৩ ফেব্রুয়ারি থাকলেও বাড়ানো হয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্যাকেজের খরচ না কমালে এ বছর পূর্ণ কোটায় হজযাত্রী পাঠানো নিয়ে শঙ্কায় হজ এজেন্সিগুলো।

এদিকে রাজধানীর শান্তিনগরের আল মদিনা ট্রাভেলস অ্যান্ড হজ কাফেলা অফিসে সুনসান নীরবতা। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা তাদের মাধ্যমে যারা হজে যেতে প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন তাদের ফোন করছেন। নিবন্ধনের সময় চলে যাচ্ছে, তবু তারা কেন নিবন্ধন করছেন না, জানতে খোঁজ নিচ্ছেন। ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে উত্তর আসছে, খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ বছরে হজে যেতে পারবেন না।

এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং পার্টনার খোরশেদুল আলম বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে প্যাকেজ ঘোষণার পর থেকে হজ করতে ইচ্ছুকরা নিবন্ধন করতে আমাদের অফিসে আসা শুরু করেন। খোঁজ-খবর নিতে অনেক কল করেন। এ সময় হজে গমনেচ্ছুদের চাপ সামলাতে আমাদের ব্যস্ত থাকতে হয়। অথচ এ বছরের চিত্র উল্টো। আমাদের মাধ্যমে হজে যেতে প্রাক নিবন্ধন করেছেন মাত্র ২০০ জন। আর নিবন্ধন করেছেন মাত্র ১০ জন। বাকিদের ফোন করে করে খোঁজ নিচ্ছি। সবাই বলছেন, এত খরচ, যাওয়া সম্ভব নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে পরিস্থিতি তাতে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোটাই পূরণ হবে না। করোনার পর গত বছর সীমিত আকারে হজযাত্রী গিয়েছেন। এবার হজ এজেন্সিগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে, কিন্তু খরচ বাড়ার কারণে কেউ যেতে চাচ্ছেন না। এভাবে এজেন্সিদেরও টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।’

এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। ২ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্যাকেজ থেকে ১০ হাজার টাকা কমিয়ে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ ঘোষণা করে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব)। হাব নির্ধারিত হজ প্যাকেজের সর্বনিম্ন প্যাকেজ ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা।

সরকারি-বেসরকারি উভয় প্যাকেজেই বিগত বছরের চেয়ে খরচ বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। ২০২২ সালে হজের সর্বনিম্ন প্যাকেজ ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। প্রাক নিবন্ধিত গমনেচ্ছুদের নিবন্ধন সম্পন্ন করতে ৫ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করতে হবে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১টা পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার ৬৯৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার ২০৭ জনসহ মোট ৯ হাজার ৯০৪ জন নিবন্ধন করেছেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি শেষ দিনে কোনোভাবেই কোটার বাকিদের নিবন্ধন সম্ভব নয়। তার আগেই ২২ ফেব্রুয়ারি বিকালে নিবন্ধনের সময় বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

হজ এজেন্সি মালিকরা বলছেন, প্রতিবছর নির্ধারিত কোটার চেয়ে বেশি মানুষ হজে যেতে প্রাক নিবন্ধন করেন। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৬৫ হাজার ৭৩৮ জন প্রাক-নিবন্ধন করেছেন। কিন্তু খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রাক নিবন্ধন করলেও অনেকে নিবন্ধন করছেন না। ধর্ম মন্ত্রণালয় নিবন্ধনের সময় বাড়ালেও লাভ কী। খরচ যে হারে বেড়েছে তাতে যারা যাবেন না, তারা তো আর সিদ্ধান্ত বদলাবেন না। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিমান ভাড়াসহ হজের খরচ পুনর্নির্ধারণ করা জরুরি। গেলো বছর হজযাত্রীদের জন্য বিমান ভাড়া ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এ বছর তা ৫৮ হাজার বাড়িয়ে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

Related Articles

Back to top button