দৈনিক খবর

৬ মাস বাঁচবো, ক্যানসারের কথা আমার বাবা-মাকে বলবেন না

আমার আর মাত্র ছয় মাস সময় বাকি আছে। আমার ক্যানসারের কথা বাবা-মাকে বলবেন না’— এভাবেই ক্যা;নসা;র আ;ক্রা;ন্ত ছয় বছর বয়সী এক শিশু চিকিৎসকের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। সম্প্রতি ক্যা;নসা;রের চতুর্থ ধাপে ভোগার পর মারা যাওয়া এই শিশুর সেই কথা টুইটারে টুইট করেছেন ভারতের হায়দরাবাদের এক নিউরোলজিস্ট।

তার সেই টুইট মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়েছে। হৃদয় নাড়া দেওয়া শিশুটির এই কথা ঝড়িয়েছে অনেকের চোখের পানিও।

সম্প্রতি এত অল্প আয়ুর একটি শিশুর এমন অসাধারণ ধৈর্য আর সাহসিকতার কথা স্মরণ করে হৃদয়বিদারক টুইট করেছেন অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসক সুধীর কুমার। মানু (ছদ্মনাম) নামের শিশুটির মৃ;ত্যুর পর গত ৫ জানুয়ারি তার করা এই টুইট ইতোমধ্যে ১০ লাখের বেশি মানুষ পড়েছেন।

একাধিক ভারতীয় গতমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, অন্যান্য দিনের মতো হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী দেখায় ব্যস্ত ছিলেন চিকিৎসক সুধীর কুমার। এমন সময় তরুণ এক দম্পতি হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসেন।

চিকিৎসককে তারা বলেন, ‘মানু বাইরে অপেক্ষা করছে। তার ক্যা;নসা;র হয়েছে। কিন্তু আমরা তাকে জানাইনি। দয়া করে তাকে দেখুন এবং পরামর্শ দিন। কিন্তু তাকে যে চিকিৎসা দেবেন, সেই ব্যাপারে কিছু বলবেন না।’পরে হুইলচেয়ারে করে মানুকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে নেওয়া হয়। সেই স্মৃতিচারণ করে চিকিৎসক সুধীর বলেন, ‘সে হাসি দিল। তাকে আত্মবিশ্বাসী এবং দারুণ স্মার্ট মনে হচ্ছিল।’

জানা যায়, মানুর মস্তিষ্কের বামপাশে চতুর্থ স্তরের গ্লিওব্লাস্টোমা ক্যা;নসা;র ধরা পড়েছিল। যে কারণে তার ডান হাত এবং পা প্যারালাইসিসে আ;ক্রা;ন্ত হয়। তার ক্যা;নসা;রের অ;স্ত্রো;পচা;র এবং কে;মোথে;রাপি দেওয়া হয়েছিল। পরে সে খিঁ;চু;নিতেও ভো;গে; যা ম;স্তি;ষ্কের ক্যা;নসা;রের কারণে হয়েছিল।

চিকিৎসক সেদিনের স্মৃ;তিচা;রণ করে বলেন, তারা হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়ার সময় মানু তার বাবা-মাকে একটু বাইরে যেতে বলে। আমার সাথে একান্তে কিছু কথা বলতে চায় সে। মানু সেদিন সুধীর কুমারকে বলেছিলেন, ‘ডাক্তার, আমি এই রোগের ব্যাপারে সবকিছু আইপ্যাডে পড়েছি। আমি জানি, আমি আর মাত্র ৬ মাস বাঁচবো। কিন্তু আমি বাবা-মাকে এটা বলিনি। কারণ তারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়বেন। তারা আমাকে অনেক ভালোবাসেন। দয়া করে, এসব কথা তাদেরকে বলবেন না।’

আর শিশুটির এসব কথা চিকিৎসককে রীতিমতো নাড়া দেয়। সুধীর বলেন, ‘আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম। তাকে বললাম, আমি তোমার কথা রাখার চেষ্টা করবো। আমি তার বাবা-মাকে ডেকে মানুকে বাইরে রেখে আমার সঙ্গে একটু কথা বলার জন্য অনুরোধ করলাম।

আমি তাদের সঙ্গে পুরো বিষয়টি শেয়ার করলাম।’চিকিৎসক বলেন, তিনি মানুর কাছে করা প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি। কারণ এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে পরিবারকেও একই ধাঁচের চিন্তা-ভাবনা করাটা গুরুত্বপূর্ণ।৯ মাস পর ওই দম্পতি আবারও চিকিৎসক সুধীর কুমারের কাছে আসেন। প্রথম দেখাতেই চিকিৎসক তাদের চিনে ফেলেন এবং মানুর শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে জানতে চান।

জবাবে মানুর বাবা-মা জানান, ‘ডাক্তার, আপনার সাথে সাক্ষাতের পর আমরা মানুকে নিয়ে দারুণ একটি সময় কাটিয়েছি। সে ডিজনিল্যান্ডে যেতে চেয়েছিল এবং আমরা তাকে নিয়ে গিয়েছিলাম।

কিন্তু এক মাস আগে আমরা তাকে হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের আজকের এই সাক্ষাৎ কেবল আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য। কারণ আপনি সবচেয়ে ভালো ৮টি মাস আমাদেরকে উপহার দিয়েছিলেন।’ সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

Related Articles

Back to top button