দৈনিক খবর

বিদায়ের মুহূর্তে হতাশ এবং মন খারাপ রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের, কারণ জানালেন নিজেই

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক সম্ভাবনা। আর এই সম্ভাবনার তালিকায় রয়েছে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কিন্তু এবার এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে শোনা গেলো নতুন এক হতাশার খবর। জানা গেছে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথম ১০০০ তে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব নেই। আর এ নিয়ে এখন চলছে বেশ আলোচনা। এ দিকে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথম ১০০০ তে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ‘ষষ্ঠ সমাবর্তন-২০২৩’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হতাশা প্রকাশ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সভাপতি ও চ্যান্সেলর বলেন, সম্প্রতি পত্রিকা খুললেই দেখা যায় দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে উঠে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডারিংয়ের নেতিবাচক খবর।

আবদুল হামিদ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দলীয় কোন্দলের ঊর্ধ্বে উঠে রাজনীতি করারও আহ্বান জানান। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপ্রধান।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দুর্নীতি আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে অন্যতম বড় বাধা। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

তিনি বলেন, “পড়াশোনার জায়গা ঠিক রেখে রাজনীতি, সমাজসেবা, সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন সহশিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারেন। শিক্ষার সঙ্গে কোনোভাবেই আপস করা যাবে না।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘উপাচার্য, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মুক্ত চিন্তার চর্চা করুন। তারা অনুশীলন এবং সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতি প্রত্যাশিত।

তিনি বলেন, ‘শুধু চার্টার্ড শিক্ষা দিয়ে দেশ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে বাস্তব জীবনের সঙ্গে যুক্ত করা গেলে সেই শিক্ষাকে সফল বলা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘উপাচার্য ও শিক্ষকদের মনে রাখতে হবে, পাঠদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আর শিক্ষার্থীদের প্রধান কাজ শিক্ষা ও জ্ঞান আহরণ।

শুধু প্রতিষ্ঠান ও প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ নয়, শিক্ষার মান উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন রাষ্ট্রপতি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, তরুণ সমাজকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করতে হবে, এজন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে নিরন্তর গবেষণা প্রয়োজন।

তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আগ্রাসন ও চাঁদাবাজির কারণে মানুষ এখন ছাত্র রাজনীতিকে আগের মতো সম্মান না করে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে।’

স্নাতক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিকতা, মূল্যবোধ, দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদে শিক্ষিত হতে হবে।’

আবদুল হামিদ বলেন, দেশের উন্নয়ন ও ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য মেধাবী তরুণদের সঠিক পরিচর্যার জন্য প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের করতে হবে।

গ্র্যাজুয়েটদেরকে দেশ ও জাতির কল্যাণে ভূমিকা রাখার পরামর্শ দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘একক নয়, পরিবার, সমাজ ও জাতীয় উন্নয়নের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে।’

জাবির ষষ্ঠ সমাবর্তনে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন।

এবারের সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী মোট ১৫,২১৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে রাষ্ট্রপতি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর বিভাগে তিনটি বিভাগে ১৬ জন শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক প্রদান করেন। তাদের মধ্যে, ১১,৪৪৪ জন নিয়মিত স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর, ৩,৪৬১ জন উইকএন্ড প্রোগ্রামের ছাত্র, ৩৪ জন এমফিল ডিগ্রিধারী এবং ২৮০ জন পিএইচডি। জন

সংসদ সদস্যবৃন্দ, উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ নুরুল আলম, প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর শেখ মোঃ মঞ্জুরুল হক, ট্রেজারি প্রফেসর ড. রাশেদা আক্তার, রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজসহ সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিনরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, এ দিকে রাষ্ট্রপতি হিসাবে মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের। আর এরই মধ্যে ঠিক হয়ে গেছে দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবেন। জানা গেছে আগামী এপ্রিল এ রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেই নতুন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু দায়িত্ব নেবেন ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে।

Related Articles

Back to top button