দৈনিক খবর

বর্তমানে আমার ৪৩ তম ব্রিজের কাজ চলমান: ব্যারিস্টার সুমন

মামুনূর রহমান হৃদয়:: ৩৫০ জন এমপি হয়ত হবে তবে মানুষ সৎ না হলে ৫০০ এমপি বানালেও এই দেশ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বর্তমানের আলোচিত ব্যক্তি ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ওরফে ব্যারিস্টার সুমন ।

সমাজসেবা ও উন্নয়ন মূলক কাজের দ্বারা তিনি অনেক প্রশংসা কুরিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেসবুকে চারপাশের নানা অসঙ্গতি, সিলেটে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো , সড়কে ব্রিজ নির্মাণের মাধ্যমে তিনি সমাজের সামনে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মামুনূর রহমান হৃদয়।

বিডি২৪রিপোর্ট : বাংলাদেশের ফুটবলকে নতুন করে জোয়াড়ে ভাসাচ্ছেন। বলা যায় ফুটবলের যৌবন চলছে। ফুটবল সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন।

ব্যারিস্টার সুমন : আমি আসলে ছোট বেলা থেকেই ফুটবল খেলি। ফুটবলের প্রতি আমার অকৃত্রিম টান। বাংলাদেশের মৃতপর্যায় ফুটবলকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সামনের দিকে খুব বেশি একটা নিয়ে যেতে পারছে না। ব্যারিস্টার হওয়ার পর মনে হলো আমি যেই সার্ভিসটা দিচ্ছি এর পাশাপাশি আমার ফুটবল একাডেমির মাধ্যমে ঝিমিয়ে পড়া ফুটবলকে আমি আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। আরেকটা বিষয় যোগ করি, আমি যখন বিভিন্ন জেলায় খেলতে যাচ্ছি তখন দেখা যাচ্ছে শত শত মানুষ ভিড় করছে এটার কয়েকটা কারণ । শুধু যে ফুটবল খেলা দেখতে আসে তা না পাশাপাশি মানুষের আমার প্রতি বিশ্বাস আছে । এই মানুষটা যেহেতু ফুটবলের জন্য কাজ করছে তাকে আমরাও সহযোগিতা করি। ফুটবলের প্রতি টান না শুধু এখানে মানুষ আসে আমার কথাও শুনতে। আমি কি বার্তা নিয়ে এসেছি। আমি যেই জেলাতেই যাচ্ছি ফুটবলের পাশাপাশি ঐ জেলার সমস্যাগুলো আমি ফেসবুকের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করছি । এটা একটা ফুল প্যাকেজ আপনি বলতে পারেন। ফুটবলের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক উন্নয়ন পাশাপাশি সৎ এবং সৃজনশীল তরুণদেরকে দেশের সামনে নিয়ে আসতেও ফুটবলের মাঠে কাজ করে যাচ্ছি।

বিডি২৪রিপোর্ট : আপনি একজন আইনজীবী পাশাপাশি সমাজসেবক এছাড়াও ফুটবলপ্রেমী। আপনি কোন পরিচয়টি দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন?

ব্যারিস্টার সুমন : যেই পরিচয়টা মানুষের কাজে লাগে সেই পরিচয়টা দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করি। আমি আইনজীবী হিসেবে যদি মানুষের কাজে লাগতে পারি, মানুষ যদি মনে করে উনি আইনজীবী হিসেবে উনি মানুষের স্বার্থে আইনের প্রয়োগ করে এটাতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি। আপনি আমাকে কৃষক বানিয়ে দেন…আমি স্বাচ্ছন্দবোধ করব কিন্তু একটা পরিচয়ে আমি স্বাচ্ছন্দবোধ করি না সেটা হলো মানুষ যদি মনে করে আমি যেটা করছি সব নিজের স্বার্থে করছি , নিজে বড় হতে চাই, এই পরিচয়ে যদি আমি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিও হই তাও আমি স্বাচ্ছন্দবোধ করব না।

বিডি২৪রিপোর্ট : আপনার ফুটবল ক্লাবের ব্যয় মেটাচ্ছেন কিভাবে?

ব্যারিস্টার সুমন : আমি এখানে রবি থেকে বৃহস্পতিবার যা রোজগার করি অথবা সুপ্রীম কোর্ট থেকে বা ফেসবুক যেভাবে যতটুকু রোজগার করি তা নিয়ে বৃহস্পতিবার আমি আমার এলাকায় চলে যাই। গিয়ে শুক্র-শনি আমার কাজ হচ্ছে ব্রিজ বানানো , রাস্তা বানানো, বাচ্চাদের পড়াশোনা করানো এবং আমার ফুটবল একাডেমিকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়া। আমার নিজের নামে এ ঢাকা শহরে কোন প্লট বা ফ্ল্যাট নেই শুধু একটি গাড়ি ছাড়া। আমি আমার এলাকায় নিয়ে সব কিছুই খরচ করে ফেলি। যে সপ্তাহে আমার বেশি রোজগার হয় সে সপ্তাহে কার্যক্রম বেশি থাকে যে সপ্তাহে রোজগার কম হয় সেই সপ্তাহে আমি কম কাজ করি। তবে এখানে রোজগারটা বড় সমস্যা না। কেন জানেন? সিলেটের বন্যার সময়ে আমার হাতে টাকা ছিল না । আমি যখন মানুষদের ফেসবুকে বললাম আপনারা বন্যার্তদের জন্য টাকার ব্যবস্থা করেন তখন তারা তিন রাতের ব্যবধানে আমার একাউন্টে তিন কোটি টাকা পাঠিয়েছে। এর মানে হচ্ছে বাংলাদেশে টাকার সমস্যা নেই । সমস্যা নিয়তের , সমস্যা সততার , সমস্যা হচ্ছে বেশিরভাগ মানুষ আরেকজনকে বিশ্বাস করে না । এই দেশে কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে চায় না । এবং বিশ্বাসী হওয়ার জন্য একটা মানুষকে যে পরিমান কষ্ট করতে হয় এই কষ্টগুলো মানুষ করতে রাজি না । আপনি উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দায়িত্বশীল যারা আছে বেশিরভাগ মানুষকে মানুষ ‘এক টাকা’ দেয়েও বিশ্বাস করতে চায় না।

বিডি২৪রিপোর্ট : আপনি আপনার এলাকায় বেশ কয়েকটি ব্রিজ করেছেন। বর্তমানে কত তম ব্রিজ করেছেন?

ব্যারিস্টার সুমন : বর্তমানে আমার ৪৩ তম ব্রিজের কাজ চলমান। অর্ধেক কাজ শেষ। ১৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের এটি সবচেয়ে লম্বা ব্রিজ । সুরমার চা বাগান শ্রমিকদের জন্য আমি এই ব্রিজটির কাজ করছি এবং আশাকরি কয়েক সাপ্তাহের ব্যবধানে এই ব্রিজের কাজ শেষ হয়ে যাবে।

বিডি২৪রিপোর্ট : আপনি কতগুলো ব্রিজ বানিয়ে থামতে চান?

ব্যারিস্টার সুমন : ১০০ ব্রিজ বানানো আমার একটি মিশন। ১০০ ব্রিজ বানানো শেষে মনে মনে এটা ভেবে ভালো লাগবে যে একটা অনন্ত মাইল ফলক আমি পার করতে পেরেছি। কিন্তু এই কার্যক্রম বন্ধ হবে কি না আমি জানিনা তবে যতদিন যেখানে যা কিছু লাগবে ততদিন চেষ্টা করব মানুষের জন্য কাজ করার। তবে এই কাজ কোথায় গিয়ে শেষ হবে, আদো বাঁচবো কি না , কতদেন বাঁচবো কিছুই তো জানিনা । এটা শুধু আমার মনের আশা।

বিডি২৪রিপোর্ট : কম টাকায় খুব ভালো মানের ব্রিজ বানাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে ঠিকাদারদের নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকে যায়। তারা কেমন ব্রিজ বানাচ্ছে, ভবিষ্যতে কোন ধরনের ঝুঁকি আছে কি না এই বিষয়ে যদি বলতেন?

ব্যারিস্টার সুমন : একটা সময় ছিল কনট্রাক্টাররা টাকা নিয়ে নিম্নমানের ব্রিজ বানাতো। এখন এটি এমন পর্যায়ে চলে গেছে কনট্রাক্টাররা টাকা নিয়ে ব্রিজ না বানিয়েই যারা দায়িত্ব প্রাপ্ত তাদের সন্তুষ্ট করে ব্রিজের জায়গায় ব্রিজ পড়ে আছে কিছুই হয়নি। টাকাও তুলে নিয়ে যায়। এটা হচ্ছে আমাদের বাস্তবতা। পুরোটাই যখন চোরের দেশ হয়ে যায় তখন নিম্নমান ও উচ্চামান দিয়ে লাভ নেই। আমি এই কথাই প্রমাণ করার চেষ্টা করছি যে চাইলে আপনি অল্প টাকায় অনেক ভালো ব্রিজ বানাতে পারবেন এবং টেকসই ব্রিজ বানাতে পারবেন। তবে চুরি’টাকে কন্ট্রোল করতে হবে এবং চোরদেরকে কন্ট্রোল করতে হবে।

বিডি২৪রিপোর্ট : এমপি প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে যদি কিছু বলতেন?

ব্যারিস্টার সুমন : এমপি-মন্ত্রী শুধু আমার এলাকার মানুষ চাইলেই হবে না। সারা বাংলাদেশের মানুষ চাইলেও হবে না। এখানে দলও চাইতে হবে। আর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি দলের বাইরে গিয়ে কোন নির্বাচন আমি করব না। এমপি হওয়ার বিষয়ে খুব বেশি পাগলপনা আমার ভেতর নেই। মানুষ কি কারণে এমপি হয়! সে যদি মনে করে অনেক টাকা বানাবে, তার আত্মীয়স্বজন সকলকে ধনী বানাবে তাহলে এমপি’র চেয়ে ভালো পোস্ট হতে পারে না। আপনি যদি মনে করেন আপনি টাকা বানাবেন না, আমার ক্ষমতাও দরকার নেই তাহলে কি থেকে যায়! পাঁচ লক্ষ মানুষকে খাওয়ানোর দায়িত্ব থেকে যায় আপনার উপর। এই দায়িত্ব কিন্তু এতো সহজ না। এছাড়াও ধর্মে আছে আপনার অধীনে যে সকল মানুষ খাওয়ার জন্য চুরি করে তাদের হাত কাটার আগে নেতার হাত কেটে দিতে হয়। এখন সবাই ধর্মে বিশ্বাসী কিন্তু কয়জন মানে এইসব কথা! কয়জন মানুষ এমপি হওয়ার পর তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে! বিষয়টি এটা না, বিষয়টি হচ্ছে আমি যদি কখনো এমপি হই তাহলে আমি যেই কাজ এখন করছি এটা হয়ত আরও ১০০ গুন বেশি করতে পারব। সারা বাংলাদেশে একটা উদাহরণ তৈরি করতে পারবো যে আমি একটা এমপি না হয়েও এতো কাজ করতে পারছি তাহলে এমপি হলে আপনারা আমার এলাকা চিনতেই পারবেন না। তবে আমি জানিনা এমপি হতে পারবো কি না । আমি আমার মতো করে চাইব , যদি দেন ভালো কথা , যদি না পাই তাও আমি অনেক খুশি। আওয়ামীলীগ যাকে নোমিনেশন দিবেন তার পক্ষে কাজ করব। এক জীবনে একটা প্রেম করে শেষ করা যায়। তাই আমার মনে হয় যে এমপি-মন্ত্রী হওয়ার চাইতে একজন ঈমানদার হিসেবে মৃত্যুবরণ অনেক বেশি জরুরি।

বিডি২৪রিপোর্ট : আগামী দ্বাদশ নির্বাচন নিয়ে কিছু ভাবছেন কি না?

ব্যারিস্টার সুমন : নির্বাচন নির্বাচনের মতো আসবে। ৩৫০ জন এমপি হয়ত হবে তবে মানুষ যতদিন না সৎ হবে ৫০০ এমপি বানালেও এই দেশ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হবে না।

Related Articles

Back to top button