Countrywideদৈনিক খবর

দেশের যে জেলায় ১০০ টাকায় মুরগি, ২০০ টাকায় মিলছে গরুর মাংস

বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের সব থেকে অস্থির যে বিষয়টি হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই বিষয়টি হলো দেশে বেড়ে গেছে দ্রব্য মূল্যের দাম। দাম শুধু বেড়েছে তাই নয় এটি এখন হয়ে গেছে জনগণের সব থেকে বড় দুশ্চিন্তার কারণ। তবে এরই মধ্যে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা দেখা গেলো দেশের খুলনা বিভাগে।খুলনায় নিম্ন আয়ের মানুষ পাচ্ছেন মুরগির কাটা মাংস ১০০ টাকায় এবং গরুর মাংস (হাড় ও চর্বি ছাড়া) ২০০ টাকায়। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য ছোট আকারে কেনাকাটার সুবিধার্থে খুলনা পাবলিক কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এই উদ্যোগ নিয়েছে।

একই সঙ্গে নিম্ন আয়ের মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সীমিত পরিসরে মাংস বিক্রি করতে বিক্রেতাদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করছেন তারা। ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি চলবে পুরো রমজান মাসজুড়ে।

আয়োজকরা বলছেন, সীমিত আয়ের লোকসানে মুরগি ও গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন নগরীর বিভিন্ন স্থানে এ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে সীমিত পরিসরে মাংস কিনে খুশি সাধারণ মানুষ।

বুধবার (২৯ মার্চ) খুলনা পাবলিক কলেজের সামনে ৩০০ গ্রাম গরুর মাংস (হাড় ও চর্বি ছাড়া) বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায় এবং মুরগির মাংস ৫০০ গ্রাম (ঘাড়, পা, চামড়া, কলিজা ছাড়া সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াজাত) বিক্রি হচ্ছে। ১০০ টাকায়। এছাড়া প্রতিটি প্যাকেটে ২০-৩০ গ্রাম বেশি মাংস ছিল চমক হিসেবে।

ক্রেতারা বলছেন, ৪শ’ বা ৭শ’ টাকায় মাংস কেনা কঠিন। সব কিছুর দাম বেড়েছে। পেস্ট্রি, চাল, বিদ্যুৎ বিল, কাঠ, তেল কিনতে চাইলে আয় দিয়ে মাংস-মাছ কেনা সম্ভব নয়। নির্দিষ্ট প্রয়োজন ছাড়া কেনা কঠিন। কিন্তু এখানে যে কোনো পরিমাণ মাংস কেনা হচ্ছে। মুরগির মাংস ১০০ টাকা এবং গরুর মাংস ২০০ টাকা। সামর্থ্য অনুযায়ী কিনতে পারি। এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। বাজারের ব্যবসায়ীরাও এমন উদ্যোগ নিলে আমাদের জন্য উপকৃত হতাম।

খুলনা পাবলিক কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন এক্সপিশিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মো. আল মাসুম বিল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন যে আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের কার্যক্রম ২০১৮ থেকে শুরু হয়েছে। আমরা প্রাক্তন ছাত্রদের তহবিল দ্বারা অর্থায়ন করি। করোনার সময় অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ বিভিন্ন কাজ করা হয়েছে। আমরা সামাজিক কাজ করছি। এবার আমাদের আলাদা পরিকল্পনা আছে। সব কিছুর দাম, মাংস নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে মাংস বিক্রি হয় ১০০ গ্রাম, ২০০ গ্রাম। ঢাকায় এ ধরনের কাজ করছেন বেশ কয়েকজন। খুলনার কোনো ব্যবসায়ী এ উদ্যোগ নেননি। তখন আমরা রোজার মাসে নমুনা হিসেবে এটা করার চিন্তা করলাম। আমাদের ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হলে মানুষ তাদের সাধ্যমতো মাংস কিনে খেতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, ২৬ মার্চ প্রথম দিনে আমরা ১ হাজার ৩৮০ টাকা ভর্তুকি পেয়েছি। আমরা হাড়বিহীন গরুর মাংস কেজি ৮৫০ টাকায় কিনে ৮০০ টাকায় বিক্রি করেছি। তারপরও ২০-৩০ গ্রাম অতিরিক্ত দিয়েছি। আমরা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বিক্রি করছি না, আমরা একটি মডেল হিসাবে এই প্রকল্পটি করছি। সংগঠনের সদস্যদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও সহযোগিতা করছেন।

খুলনা পাবলিক কলেজের প্রাক্তন ছাত্র আবদুল্লাহ আল তোহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটি মুরগি কিনতে ৪০০ টাকা এবং এক কেজি গরুর মাংসের দাম ৭০০ টাকা। সীমিত আয়ের লোকেরা মাংস খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। এজন্য খুলনা পাবলিক কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন এক্স ক্যাপসিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের উদ্যোগে গত ২৬ মার্চ থেকে সীমিত পরিসরে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ যাতে তাদের নাগালের মধ্যে মাংস পায় সেজন্য আয়োজন করা হয়েছে। গত চার দিন ধরে সোনাডাঙ্গা আলীর ক্লাব মোড়, মুজগুন্নি ও খুলনা পাবলিক কলেজের সামনে এই মাংস বিক্রি হচ্ছে। আমাদের মাংস ২-৩ ঘন্টার মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, আমরা লোকসান করছি। বুধবার ৩,০০০ টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। এটা সাধারণ মানুষের প্রতি আমাদের ভালোবাসা। সম্মান দেখিয়ে স্বল্প আয়ের ভাই-বোনেরা এখানে কিনতে আসছেন। সংগঠনের সদস্যরা তাদের নিজস্ব তহবিল দিয়ে এই ভর্তুকি দিচ্ছেন। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সংগঠনের সদস্য মাসুম, বাপ্পী, ফারহান, দোলন, জাহিদ, নাহিদ, সালাহউদ্দিনসহ অনেকে। এ কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে খুলনা পাবলিক কলেজের অধ্যক্ষ লে. কর্নেল মোহাম্মদ শামীমুল আহসান শামীমসহ শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

খুলনা পাবলিক কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী মাহমুদ কবির দোলন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই প্রকল্পের জন্য আমরা ভালো সাড়া পেয়েছি। প্রচারণা ছাড়াই এখান থেকে লোকজন এসে নিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টিকে সাধারণ মানুষ ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। দিনমজুর, রিকশাচালক, ইজিবাইক চালক, বেচাকেনা স্বল্প আয়ের মানুষ কিনে নেয়। স্বল্প আয়ের মানুষ সীমিত পরিসরে কেনাকাটা করতে পারে এটাই আমাদের লক্ষ্য।

প্রসঙ্গত, এ দিকে এই বিষয়টি এখন ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। সকলেই এমন একটি বিষয়কে জানাচ্ছে বেশ সাধুবাদ। আর এই ধরণের উদ্যোগ যদি সারা দেশে নেয়া যায় তাহলে দেশের খেতে খাওয়া মানুষেরা এক দিন হলেও খেতে পারবে মাংস।

Related Articles

Back to top button